মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিতে প্রস্তুত চীন : তুরস্কে মিলিত হতে পারেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা
ইউক্রেনে তার অভিযানের জন্য হাজার হাজার নতুন নিষেধাজ্ঞার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে যাওয়ার পরেী বুধবারের মধ্যে রাশিয়ান রুবল পতন থেকে ফিরে এসেছে। কারণ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ভোঁতা করতে এবং তার মুদ্রা স্ফীত করার জন্য চরম আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এদিকে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, রাশিয়ার সাথে সম্পর্ককে ‘নতুন যুগে’ এবং ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যেতে বেইজিং প্রস্তুত। অন্যদিকে, আগামী সপ্তাহে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তুরস্কে বৈঠকে মিলিত হতে পারেন বলে গতকাল জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু।
যদিও পশ্চিমারা রাশিয়ান অর্থনীতির বিরুদ্ধে অভ‚তপূর্ব মাত্রার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে এবং ক্রেমলিন তাদের রুবল ডলার বা ইউরোতে বিনিময় করতে ইচ্ছুকদের উপর কঠোর মূলধন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এটি একটি আর্থিক প্রতিরক্ষা যা হয়তো দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে না। তবে রুবেলের পুনরুদ্ধার একটি চিহ্ন হতে পারে যে, তাদের বর্তমান আকারে নিষেধাজ্ঞাগুলো ততটা শক্তিশালীভাবে কাজ করছে না যতটা শক্তিশালী ইউক্রেনের মিত্ররা যখন পুতিনকে ইউক্রেন থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়ার কথা বলেছিল। এটি একটি চিহ্নও হতে পারে যে, রাশিয়ার তেল ও গ্যাস খাতকে কৃত্রিমভাবে সমর্থন করার প্রচেষ্টা কাজ করছে।
রুবল মার্কিন ডলারের সাথে মোটামুটি ৮৫-এ লেনদেন করছিল, মোটামুটি যেখানে এক মাস আগে রাশিয়া তার আক্রমণ শুরু করার আগে ছিল। গত ৭ মার্চ রুবেল ডলারের কাছে প্রায় ১৫০ এর মতো নিচে নেমে গিয়েছিল, যখন বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের মার্কিন আমদানি নিষিদ্ধ করবে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। বুধবার নরওয়ের পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা মিত্রদের রাশিয়াকে আরও বেশি আর্থিক যন্ত্রণা দেয়ার আহŸান জানিয়েছেন। ‘রাশিয়াকে শান্তি খোঁজার জন্য আহŸান জানানোর একমাত্র উপায় হল নিষেধাজ্ঞা,’ ভলোদিমির জেলেনস্কি তার অবরুদ্ধ দেশ থেকে একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন। তিনি যোগ করেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ যত শক্তিশালী হবে, আমরা তত দ্রæত শান্তি ফিরিয়ে আনব।’
রুবলকে প্ররোচিত করে সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবেলা করার রাশিয়ান প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে পারে না কারণ এটি করা শেষ পর্যন্ত ব্যবসা এবং ঋণগ্রহীতাদের ঋণ বন্ধ করে দেবে। কিছু সময়ে, ব্যক্তি এবং ব্যবসাগুলো অল্প পরিমাণে অর্থ সরানোর মাধ্যমে রাশিয়ার মূলধন নিয়ন্ত্রণের চারপাশে যাওয়ার উপায়গুলো বিকাশ করবে। জরিমানা রাশিয়ান অর্থনীতিকে হতাশ করার কারণে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, এটি অবশেষে রুবলকে ওজন করবে। এই প্রচেষ্টা ছাড়া, রাশিয়ার মুদ্রা প্রায় অবশ্যই দুর্বল হবে।
কিন্তু রাশিয়ার তেল ও গ্যাস রফতানি ইউরোপের পাশাপাশি চীন ও ভারতেও অব্যাহত রয়েছে। এই রফতানিগুলো রাশিয়ান অর্থনীতির জন্য একটি অর্থনৈতিক ফ্লোর হিসাবে কাজ করেছে, যা জ্বালানি সেক্টর দ্বারা প্রভাবিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নে, বিদ্যুত এবং ঘর গরম করার জন্য রাশিয়ান গ্যাসের উপর নির্ভরতা বন্ধ করাকে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও কঠিন করে তুলেছে, যা বাইডেন প্রশাসন করেছিল যখন তারা রাশিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণ পেট্রোলিয়াম নিষিদ্ধ করেছিল।
‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে রাশিয়ান তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধ করেছে এবং যুক্তরাজ্য এই বছরের শেষ নাগাদ সেগুলো প্রত্যাহার করবে। যাইহোক, এই সিদ্ধান্তগুলো অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলবে না যতক্ষণ না এবং যতক্ষণ না ইইউ এটি অনুসরণ করে,’ বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সের অর্থনীতিবিদ বেঞ্জামিন হিলগেনস্টক এবং এলিনা রিবাকোভা লিখেছেন।
হিলগেনস্টক এবং রিবাকোভা অনুমান করেন যে যদি ইইউ, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস নিষিদ্ধ করে, তবে রাশিয়ার অর্থনীতি এই বছর ২০ শতাংশের বেশি সঙ্কুচিত হতে পারে। এটি জেনে, পুতিন তার সুবিধার জন্য তার জ্বালানি রফতানির উপর ইউরোপের নির্ভরতাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। পুতিন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিদেশী গ্যাস আমদানিকারকদের রুবলের মাধ্যমে ক্রয় করতে এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস সরবরাহকারী গ্যাজপ্রমকে অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহার করতে বাধ্য করার আহŸান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউস এবং অর্থনীতিবিদরা যুক্তি দিয়েছেন যে, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতে সময়, সপ্তাহ বা মাস লাগে কারণ উপকরণ বা মূলধন বা উভয়ের অভাবের কারণে শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রশাসনের সমালোচকরা বলছেন যে রুবলের পুনরুদ্ধার দেখায় হোয়াইট হাউসকে আরও কিছু করতে হবে।
এদিকে, ইউক্রেনে সেনা অভিযানের পর এই প্রথম রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ চীন সফর করছেন। পাকিস্তান সহ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিয়ে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেলেও লাভরভের সাথে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই›র বৈঠক হয়েছে। চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর দেয়া খবর অনুযায়ী লাভরভ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইউক্রেন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। সে সময় দুই মন্ত্রী চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন রাশিয়ার সাথে সম্পর্ককে ‘নতুন যুগে’ এবং ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যেতে বেইজিং প্রস্তুত। তিনি বলেন, চীন ও রাশিয়া একসাথে নতুন আন্তর্জাতিক বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।
অন্যদিকে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেন দুই দেশই ‘আধিপত্যবাদ এবং শক্তি প্রয়োগের রাজনীতির’ বিরোধী এবং ‘জাতিসংঘের মূলনীতি’ ধারণ করে। তিনি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে উত্তেজনা কমাতে ‘প্রতিশ্রæতি-বদ্ধ’ এবং মস্কো শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখবে এবং সেই সাথে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ’ রাখবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন ‘সবসময় ইতিহাসের সঠিক দিকে অবস্থান নিয়েছে।’ ইউক্রেন সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, এর একটি ‘জটিল ইতিহাস’ রয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের যে বিরোধ চলছে, ইউক্রেন পরিস্থিতি তারই পরিণতি। ওয়াং বলেন, রাশিয়া সহ অন্যরা ইউক্রেনে ‘বড় ধরণের মানবিক বিপর্যয় এড়াতে’ যে চেষ্টা করছে তাকে চীন সমর্থন করে। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইউক্রেনে সেনা অভিযানের জন্য রাশিয়াকে নিন্দা করতে চীন অস্বীকার করে চলেছে।
অন্যদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু গতকাল বলেছেন যে, মঙ্গলবার উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার আয়োজন করার পর তুরস্ক আগামী সপ্তাহে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একত্রিত করবে বলে আশা করছে। তিনি বলেন, তুরস্ক মন্ত্রীদের মধ্যে মধ্যস্থতা করবে, ইউক্রেনের দিমিত্রি কুলেবা এবং রাশিয়ার সের্গেই ভি ল্যাভরভ, একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চেষ্টা করবে যা এখন তার ষষ্ঠ পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে এটি হবে উভয় পক্ষের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।
রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে মুখোমুখি মুখোমুখি হয়েছিল এবং বৈঠকের পরে, রাশিয়া বলেছে যে, তারা উত্তর ইউক্রেনের কিছু অংশে তাদের সামরিক অভিযানকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করবে। তবে কাভুসোগলু বলেছেন যে, আক্রমণ হ্রাসের লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি। তুর্কি সম্প্রচারকারী এ হ্যাবারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ওই আলোচনায় উত্তেজনা কমাতে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আমরা মাটিতে তাদের সম্প‚র্ণ প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না।’ ইউক্রেন ইতিমধ্যেই বলেছে যে, তারা ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা বাদ দিয়ে যেকোনো শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে নিরপেক্ষতা মেনে নিতে প্রস্তুত, কিন্তু রাশিয়া তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়তা চায়, কাভুসোগলু বলেছেন। তিনি যোগ করেছেন যে, আক্রমণের জন্য রাশিয়ার প্রাথমিক কিছু যুক্তি - যেমন নিরস্ত্রীকরণ এবং ইউক্রেনের অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত ‘ডিনাজিফিকেশন’ - সত্যিই আর আলোচনার টেবিলে ছিল না। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, এপি, বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।