Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

গণমাধ্যমকে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

গত সোমবার ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ বিলে বলা হয়েছে, মাসের প্রথম ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বেতনকাল এক মাসের বেশি হবে না। পরবর্তী মাসের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। বিলটি ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, প্রতি ৫ বছর পরপর গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হবে। এই ওয়েজ বোর্ড প্রয়োজনে পৃথক পৃথকভাবে সংবাদপত্র, সংবাদসংস্থা, বেসরকারি টেলিভিশন, বেতার ও নিবন্ধিত অনলাইন মাধ্যমের জন্য গঠন করা হবে। আগে শুধু সংবাদপত্র ও সংবাদসংস্থার জন্য এই ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হতো। বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, গণমাধ্যমে পূর্ণকালীন কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী এবং নিবন্ধিত সংবাপত্রের মালিকানাধীন ছাপাখানাসহ নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ‘গণমাধ্যমকর্মী’ বলা হবে। এর মধ্যে তিনটি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো অস্থায়ী বা সময়িক, শিক্ষানবিশ এবং স্থায়ী। বিলে প্রতি প্রতিষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী ও মালিকের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য গণমাধ্যমকর্মী কল্যাণ সমিতি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সমস্যা সম্পর্কিত বিষয়াবলী বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম বিগত কয়েক বছর ধরে নানা সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আর্থিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেক সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম আর্থিক সংকটে পড়ে গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। মালিক-গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিকতা, সম্মিলিত প্রয়াশ এবং প্রচেষ্টায় শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সংবাদপত্র ও অন্যন্য গণমাধ্যম টিকে আছে। করোনার কারণে সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপন কমে যাওয়া, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ার মতো চরম সংকটের মধ্যেও সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম প্রকাশনা এবং প্রচার অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত সংবাদপত্র এক চরম দুঃসময় ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিবেদিত হয়ে এই চরম সংকটেও ত্যাগ শিকার করে চলেছে। করোনা সংকটের সময় সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে বিভিন্ন শিল্প খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, দুঃখের বিষয় সে সময় সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যম তা পায়নি। গণমাধ্যমকর্মীদের এককালীন কিছু প্রণোদনা দেয়া হলেও সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতেও সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যম কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। সরকার সংবাদপত্রে বিভিন্ন সময়ে ওয়েজ বোর্ড গঠন করেছে। নবম ওয়েজ বোর্ড পর্যন্ত তা এগিয়েছে। সর্বশেষ ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগে নানা সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগের সাথে কারো দ্বিমত নেই, বরং সাধুবাদযোগ্য। তবে এসব সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে সরকারের তরফ থেকে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের মূল আয়ের উৎস সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপন। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে সরকারি বিজ্ঞাপনই প্রধানতম উৎস। দেখা যাচ্ছে, সরকারি বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য রয়েছে। সংবাদপত্রের বিভিন্ন শ্রেণী বিন্যাস এবং বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির হার ও রেট থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। এমনও দেখা যায়, প্রথম শ্রেণীর জাতীয় সংবাদপত্রের চেয়ে তার নিচের শ্রেণীর অনেক সংবাদপত্রে বেশি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। সংবাদপত্রকে রাজনীতিকরণ বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাকে এর মূল কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষকরা চিহ্নিত করেছেন। সব ধরনের মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেই এ ধরণের আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে সংবাদপত্র শিল্প এক বৈষম্যমূলক ও ভারসাম্যহীন আচরণের শিকার হচ্ছে। বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) পরিদপ্তরের আচরণও বৈষম্যমূলক। এ প্রতিষ্ঠানও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিজ্ঞাপন বন্টন করে থাকে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম অন্যান্য শিল্পের মতো নয়। এটা এমন নয় যে, গার্মেন্ট বা অন্যান্য শিল্পের মতো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিচালনা করা হয়। এটি একটি বিশেষায়িত শিল্প। রাষ্ট্রের এই চতুর্থ স্তম্ভের বিকাশ এবং সহযোগিতা রাষ্ট্রের স্বার্থেই রাষ্ট্রকে করতে হয়। আমরা দেখছি, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের পরিচালক সরকার এক্ষেত্রে প্রকৃত সুযোগ-সুবিধা দিতে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে।

সংবাদপত্রের যে ক্রান্তিকাল চলছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল যথাসময়ে পরিশোধ না করা। সরকার সংবাদপত্রে ওয়েজ বোর্ড গঠন থেকে শুরু করে অন্যান্য ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমকে প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট দিতে হবে। যে গাভী দুধ দেবে, তার কি অবস্থা তা ভেবে দেখতে হবে। বিজ্ঞাপন বন্টনে বিরাজমান বৈষম্য, রাজনীতিকরণ এবং সংবাদপত্রের নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকারের কাছে সংবাদপত্র শিল্পের কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বিল বকেয়া রয়েছে। এ বকেয়া বিল পরিশোধে সরকারের আন্তরিকতায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের কল্যাণে সরকারকে কেবল ভালো ভালো উদ্যোগ নিলে হবে না, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ফলপ্রসূ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের কাছে সংবাদপত্রের যে বকেয়া বিল রয়েছে তা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন