Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুরে মারপিট, চাঁদাবাজী ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ফরিদপুর জেলা সংবাদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১:৩২ পিএম

 

ফরিদপুরে মারপিট, চাঁদাবাজী ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আদালতে।

বিষয়টি (২৮ মার্চ) বাদীর আইনজীবী মোঃ ইব্রাহীম হোসেন গণমাধ্যম কে নিশ্চিত করছেন।


রবিবার (২৭ মার্চ) জেলার ৬ নম্বর আমলি আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের ঠেনঠেনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. তকি মোল্লার ছেলে মো. মুরাদ মোল্লা (৪৬)।

মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

যে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মারপিট, চাঁদাবাজী ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এ মামলাটি করা হয়েছে তারা হলেন,, সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান ও ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হান্নান।

এ মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন মামলাটি আমলে নিতে বিজ্ঞ আদালতে প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত আইনজীবীর আর্জি আমলে নিয়ে, বাদীর নালিশি আবেদনটি আমলে নিয়ে, তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ফরিদপুর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া অভিযোগটি বিভাগীয় তদন্ত করে দেখার জন্য ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৮ এপ্রিল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মুরাদ মোল্লা গট্টি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের তিন বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। ২০২১ সালের ১১ই নভেম্বর, ইউপি নির্বাচনের আগে সালথা ওসি তার নিকট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকের টাকা দাবী করেন। তার দাবীকৃত টাকা না দিলে তাকে নির্বাচন করতে দিবে না বলে ভয়ভীতি দেখায়। তিনি (মুরাদ) বাধ্য হয়ে ওসিকে ৭৫ হাজার টাকা দেন। পরবর্তীতে ওসি তার কাছে বিভিন্ন সময় আরও এক লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। তিনি (মুরাদ) চাঁদার দাবীকৃত টাকা পূরণ না করায় আক্রোশে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ থাকার পরেও তাকে ৩টি মিথ্যা মামলায় আসামী করে। মুরাদ দীর্ঘদিন যাবৎ গুরুত্বর অসুস্থ পায়ে রিং লাগানো ক্রেচ ছাড়া চলাফেরা করতে পারেনা।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১৪ মার্চ রাত অনুমান ১টার দিকে পূর্ব আক্রোশের জেরে তার ভাই জিহাদকে ঘরে ঘুমানো থাকা অবস্থায় ওসি তার অধীনস্ত কিছু অফিসার ও কনস্টেবল দিয়ে কোন মামলা বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া জিহাদকে সালথা থানায় নিয়ে যায়। মুরাদ পরদিন সকাল ৮ টার দিকে সালথা থানায় গিয়ে থানার হাজত খানায় মোট ৮ জন লোককে দেখতে যান। । সকাল অনুমান ১০ টার দিকে ওসি তার বাস ভবন হতে অফিসে আসার পথে মুরাদের সাথে দেখা হয়। তখন মুরাদ ওসিকে তার ভাইকে কেন ধরে এনেছেন, কি অপরাধ করেছে। ওসি অপরাধের কথা না বলে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মুরাদের নিকট ২৫ হাজার টাকা দাবী করে আরো বলেন, দাবীকৃত টাকা না দেই তাহলে তার মতো তার ভাইকেও ৩টা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দিবে। আমি চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে গ্রেফতারের ভয় দেখালে আমি থানা থেকে চলে আসি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, মুরাদ ওসির দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দিলে তার হুকুমে এস.আই হান্নান আমার ভাই জিহাদকে থানা হাজত খানা থেকে বের করে ভিন্ন রুমে নিয়ে রুমের জানালার সাথে আমার ভাইয়ের হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে শক্ত লাঠি দিয়ে এলোপাথারী ভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে নীলাফুলা জখম করে। ঐ দিন সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে তার ভাই জিহাদকে মিথ্যা মামলায় আসামী করে আদালতে প্রেরণ করে। ওই মামলায় গত ২৩ মার্চ জামিনে মুক্তি পেলে তার শরীরের আঘাত দেখে এবং সে উক্ত আঘাতের কারণে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে না পারায় তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।। বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ খবরটি বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে আসার পর রবিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে সালথা থানায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ওসি মো. আশিকুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওসি বলেন, গত ২৩ মার্চ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত চাঁদা না পাওয়ায় ঘুমন্ত জিহাদকে তুলে এনে বেধরক পিটানোর অভিযোগে সালথা থানার ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন শীর্ষক সংবাদে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। আমরা প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে আপনারদের জানাচ্ছি যে, আপনারা জানেন সালথা থানা এলাকা ঐতিহ্যগতভাবে কাইজ্জা ও দাঙ্গা প্রবণ। আমি অফিসার ইনচার্জ হিসেবে সালথা থানায় যোগদান পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সালথা তান্ডবের ঘটনাসহ সালথা থানা এলাকার কাইজ্জা ও দাঙ্গা দমনে সালথা থানায় কর্মরত অফিসার ও ফোর্সদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সালথাবাসীর সক্রিয় সহযোগীতায় কাইজ্জা দাংগা নিয়ন্ত্রণে সালথা পুলিশ যথেষ্ঠ সফলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। কাইজ্জা দাঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয়ে থানায় মামলা রুজু এবং অন্যান্য পুলিশী সেবা গ্রহণে সালথাবাসী যেন কোন ভাবেই হয়রানী বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই জন্য বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে সচেতনতামূলক সভা সেমিনারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

লিখিত অবিযোগে ওসি আশিকুজ্জামান দাবি করে বলেন, মো. মুরাদ মোল্যা তার দলপক্ষের গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ তার ভাই জিহাদকে থানা হাজত হতে জোর চেষ্টা তদবির করেও ছাড়িয়ে নিতে না পেরে মুরাদ মোল্যার দীর্ঘদিন পূর্বে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ভাঙ্গা পা জনসম্মুখে প্রদর্শন করে মানুষের মনে সহানুভূতি সৃষ্টি করে আসামী জিহাদ মোল্যাকে মারপিট করে টাকা দাবী করার মনগড়া, বানোয়াট এবং মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করে।

সর্বোপরি ওসি আশিকুজ্জাম গণমাধ্যম পরিস্কার করে বললেন, আমি সালথার গ্রাম্য রাজনীতির শিকার। যেখানে তিলকে তাল বানানো হয়েছে। এটা দুঃখজনক।

উল্লেখিত বিষয় ফরিদপুর পিআিইবির পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশ পেলে এব্যাপারে, তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।

তিনি বলেন, দোষী প্রমাণিত হলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ করলে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ