Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বে যেভাবে সাইবার পরাশক্তি হয়ে উঠেছে ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২২, ৮:৫১ পিএম

ইসরায়েলি প্রযুক্তি খাত বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য উঁচু মাপের উদ্ভাবনী গবেষণা চালিয়ে আসছে বহুবছর ধরে। ২০১৯ সালের পর বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তা বিনিয়োগের এক-পঞ্চমাংশই এসেছে ইসরায়েলে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইবার নিরাপত্তা ক্লাস্টারের অবস্থান ইসরায়েলে। সান ফ্রান্সিসকোর পর ইসরায়েলেই সবচেয়ে বেশি সাইবার নিরাপত্তা ফার্ম রয়েছে। সর্ববৃহৎ ৫০০ সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার ১২ শতাংশের অবস্থানই মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে।
দেশটির উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেমে কয়েক ডজন বড় কোম্পানির পাশাপাশি রয়েছে ৪৭০টি সক্রিয় স্টার্ট-আপ, মাথাপিছু সর্বাধিক উদ্যোগের মূলধন এবং একটি শক্তিশালী ট্যালেন্ট পুল।

প্রায়ই দেখা যায়, সাধারণ ইসরায়েলি স্টার্ট-আপগুলোকেও কিনে নিচ্ছে কোনো বড় আমেরিকান ফার্ম। ২০১৪ সালের পর থেকে ইসরায়েলি স্টার্ট-আপগুলোর সবচেয়ে বড় সক্রিয় কর্পোরেট ক্রেতা হচ্ছে গুগল ও মাইক্রোসফট। এই সময়ে যথাক্রমে ১০ ও ৮টি ইসরায়েলি কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে তারা।
হার্ডওয়্যারের বেলাতেও বেশ এগিয়ে ইসরায়েল। অ্যাপল, ব্রডকম, কোয়ালকম, এনভিডিয়ার মতো কোম্পানিগুলো ইসরায়েলেই তাদের চিপ ডিজাইন করে। গুগল এবং অ্যামাজনও তাই করে। ইন্টেল কয়েক দশক ধরে তাদের কম্পিউটার সিপিইউ এবং অন্যান্য চিপের ডিজাইন করে আসছে ইসরায়েল থেকে।
ইসরায়েলি বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা দেশে বসেই কাজ করেন। কিন্তু তাদের নিয়োগকর্তা, অংশীদার, বাজার এবং বিনিয়োগকারী; সবই বিদেশী। এমন কোনো বহুজাতিক কর্পোরেশন পাওয়া যাবে না যাদের ইসরায়েলে কোনো আর-এন্ড-ডি ল্যাব নেই।

বেসামরিক সাইবার নিরাপত্তা, সাইবার-গোয়েন্দা সক্ষমতা, সামরিক আক্রমণে সাইবার ক্ষমতার বিকাশ এবং ব্যবহারে ইসরায়েল বিশেষভাবে শক্তিশালী।
ইসরায়েল তার সাইবার শক্তিকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে একটি বিশেষ লক্ষ্যে। সেটি হচ্ছে- ইরানকে মোকাবিলা এবং দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া।

আজ থেকে ১৫ বছর আগে ইরানের নাটাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে হাজার হাজার মোটরের গতি বাড়াতে-কমাতে আধুনিক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করেছিল ইসরায়েল। 'স্টাক্সনেট' নামের সেই ম্যালওয়্যার প্রচুর যান্ত্রিক ত্রুটি তৈরির পাশাপাশি ইরানের ইউরেনিয়াম তৈরিকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। অস্থিতিশীল করে দিয়েছিল ইরান সরকারকেও।
২০২০ সালে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে একটি ইরানীয় বন্দরের কার্গো ও শিপিং কার্যক্রম নষ্ট করে দিয়েছিল ইসরায়েল।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শত শত লক্ষ্যবস্তুর উপর বিমান হামলা চালানোর পাশাপাশি এই সাইবার ক্ষমতা গোয়েন্দা খাতে বাড়তি আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দেয় ইসরায়েলকে।

রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও সুরক্ষা
২০১০ সালে এসে বিশ্ববাসী জানতে পারে স্টাক্সনেটের কথা। এর আবিষ্কারের পর বিশ্বের সব দেশই সাইবার নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া শুরু করে।
সবার দেখাদেখি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও একটি জাতীয় সাইবার নীতি প্রণয়নের জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করেন। ২০১০ সালের সেই 'জাতীয় সাইবার উদ্যোগ'-এর মূল লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়- "তথ্য-প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বে ইসরায়েলের অবস্থান সুরক্ষিত রাখতে, সাইবারস্পেসে পরাশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে এবং একটি গণতান্ত্রিক, জ্ঞান-ভিত্তিক এবং উন্মুক্ত সমাজ তৈরি করতে এটি আর্থিক এবং জাতীয় স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করবে।"

এই টাস্ক ফোর্স শুধু সাইবার ঝুঁকি নয়, এই খাতে নতুন সুযোগ সন্ধান করেও তা চিহ্নিত করেছে। টাস্ক ফোর্সের সুপারিশগুলোকে ২০১১ সালের একটি সরকারি নীতিমালায় গ্রহণ করা হয়। এখন সেগুলো ইসরায়েলের জাতীয় নীতি।

এর বাইরে, ইসরায়েল সরকার একটি বেসামরিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাও স্থাপন করে। যার নাম, ইসরায়েলি ন্যাশনাল সাইবার ডিরেক্টরেট (আইএনসিডি)। অন্যান্য সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মতো এর কোনো নিরাপত্তা বা গোয়েন্দা মিশন নেই৷
২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেন অসংখ্য বৈশ্বিক নজরদারি প্রোগ্রামের তথ্য ফাঁস করে দিলে নজরদারি নিয়ন্ত্রণে স্বাধীন বেসামরিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা স্থাপনের দাবি উঠে সব দেশে। সেই দাবি থেকে উত্থান ঘটে আইএনসিডির। নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে আইএনসিডির কাজ শুরু হলেও এখন তথ্য শেয়ারিং ও দৈনিক সাইবার প্রতিরক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করাও এই সংস্থার দায়িত্বের মধ্যে এসে পড়েছে।

সাইবার জগতে ইসরায়েলের এই বিশাল সাফল্যের পিছনে রয়েছে টেকসই উদ্ভাবন। বাস্তবিক ভিত্তি কম হলেও এই খাতে সাহসী নীতিমালা স্থাপন করার যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে ইসরায়েল, তা হয়তো অচিরেই অনুসরণ করবে পশ্চিমা বিশ্ব। সূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরায়েল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ