Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিশ্বব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ করবে রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বদ্ব

নেতৃত্বে পরিলক্ষিত হচ্ছে চীনের কেন্দ্রীয়তা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২২, ১২:১৫ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বের পশ্চিমারা ইউক্রেনের সমর্থনে একজোট হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং দেশটিকে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে এক ঘরে করে দিয়েছে। এরফলে, ভ‚-রাজনীতির প্রায় প্রতিটি কোণে আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক উদ্বাস্তু সঙ্কট নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরমধ্যে চীন নিরব থাকলেও রাশিয়ার সাথে তার অংশীদারিত্বের দরজা খোলা রেখেছে, যা দেশটিকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি এটি নতুন জোট এবং বিভাজন দিয়ে বিশ্বব্যবস্থাকে নাড়া দিয়েছে। বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ বলেছে যে, রাশিয়া-ইউক্রেন দ্ব›দ্ব বৈশি^ক শাসন ব্যবস্থা পুনর্র্নিমাণের একটি স্পষ্ট মুহ‚র্ত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

ইআইইউ অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাত তিনটি উপায়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর প্রথম দশকগুলোকে ন্যাটো শক্তিকে মার্কিন মোড়লগিরি দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। তবুও গত দুই দশকে চীন একটি অভ‚তপ‚র্ব অর্থনৈতিক উত্থান এবং রাশিয়া তার নিজস্ব ভ‚-রাজনৈতিক শক্তিকে পুনরুজ্জীবিন পর্যবেক্ষণ করেছে, যা কমেই একটি ‘আন্তঃ-পশ্চিমা প্রতিদ্ব›িদ্বতা’ বাড়িয়ে তুলেছে এবং শীর্ষ বিশ্বশক্তি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হ্রাস করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাত ইঙ্গিত দেয় যে, স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী মার্কিন আধিপত্যের সময়কাল সমাপ্ত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব মোড়ল হিসাবে মার্কিন ভ‚মিকার প্রতি একটি স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ, এবং এটি ইঙ্গিত করে যে, বিশ্ব অনেক বেশি অস্থিতিশীল এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।’

ইআইইউ পরবর্তী দশকগুলিকে দুটি প্রতিক‚ল প্রতিযোগী শিবির দেখছে, যেখানে চীন এবং রাশিয়া পশ্চিমের প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে অবস্থান করছে। কিছু দেশ এই বিভেদ ঘোচাতে চেষ্টা করবে, কিন্তু যতই সময় গড়াবে এবং বিরোধীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব বাড়তে থাকবে, সেই ভারসাম্য রক্ষার কাজ ততই কঠিন হয়ে উঠবে। ইআইইউ বলেছে, ‘ছোট ছোট বৈরিতাও দেখা দেবে, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার মধ্যে। এবং সংঘর্ষের সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তাগুলির অন্যতম হ’ল, চীনের ভবিষ্যত আচরণ। অর্থনৈতিক শক্তিঘর চীন রাশিয়াকে সমর্থন বা নিন্দা করা থেকে বিরত রয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার সাথে এর অর্থনৈতিক সম্পর্ক পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার শক্তিকে স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস করে দিয়েছে।

রাশিয়া ২০১২ সাল থেকে চীনের সাথে তার অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে এবং গত এক দশকে রাশিয়াকে চীনের সাথে বাণিজ্যের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীল হতে দেখা গেছে। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রধান শি জিনপিং ইতিমধ্যেই সর্বশেষ শীতকালীন অলিম্পিকে ঘোষণা করেছেন যে, তাদের জোট কোন সীমা অনুসরণ করবে না এবং প্রতিদ্ব›দ্বী ন্যাটো ও এধরণের সংস্থাগুলি সম্ভবত আগামী বছরগুলিতে রাশিয়া-চীন সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। ইআইইউ বলেছে, ‘চীনের দিক থেকে রাশিয়ার সাথে জোট তার উত্তর সীমান্তে নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং পশ্চিমের প্রতি একটি অভিন্ন কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব প্রদান করে।’
এই প্রবণতা পশ্চিমকে চীনের সাথে তার সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে এখন বাণিজ্যের জন্য চীনের ওপর কম নির্ভর করার পাশাপাশি রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। টোকিওর তামা ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর রুল-মেকিং স্ট্র্যাটেজিস’র ডেপুটি ডিরেক্টর এবং ভিজিটিং প্রফেসর ব্র্যাড গøসারম্যান বলেন, ‘ইউক্রেনের ঘটনা বিশ্বজুড়ে কৌশলগত বিবেচনায় চীনের কেন্দ্রীয়তাকে বিভিন্ন উপায়ে প্রদর্শন করেছে।’ তিনি এশিয়া টাইমস-এর জন্য ১৭ মার্চ লিখেছেন যে, চীন মার্কিন এবং পশ্চিমা উদ্বেগের কেন্দ্র হয়ে থাকবে, যেহেতু মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ নিয়মিতভাবে চীনকে তাদের জন্য ‘গতিশীল হুমকি’ এবং ইন্দো-প্যাসিফিককে তাদের ‘অগ্রাধিকার অঞ্চল’ হিসাবে উল্লেখ করে।

গøসারম্যান বুধবার ইমেলের মাধ্যমে ‘স্টারস অ্যান্ড স্ট্রাইপস’কে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে এবং ইউরোপে রাশিয়াকে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে আসছে। তবে টেম্পল ইউনিভার্সিটির জাপান ক্যাম্পাসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেমস ব্রাউন বলেন, ‘চীন তার অর্থনীতির আকার এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তির কারণে একটি কঠিন লক্ষ্যবস্তু।’ চীন বর্তমান ইউক্রেন সঙ্কট পর্যবেক্ষণ করছে এবং শিখছে। ফলস্বরূপ, বেইজিং সম্ভাব্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি থেকে নিজেকে দ‚রে রাখতে কাজ করবে, যার মধ্যে তার নিজস্ব আর্থিক অবকাঠামো আরও বিকাশ লক্ষ্য রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাঙ্কিং ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের মতো মার্কিন নিয়ন্ত্রনাধীন ব্যবস্থা থেকে স্বাধীন। ব্রাউন বলেন, ‘এর অর্থ হল পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলি পরবর্তীতে খুব কার্যকর প্রতীয়মান নাও হতে পারে।’ সূত্র : বিজনেস ইন্সাইডার, স্ট্রাইপ্স।

 



 

Show all comments
  • Shahjahan Bikram ২৫ মার্চ, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    · এই কথা বলে কত গালি খাইলাম
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Yousuf Masud ২৫ মার্চ, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    সকল জল্পনাকল্পনার অবসান হবে মালহামা যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অতঃপর আগামী বিশ্ব নেতৃত্ব দেবে ইহুদীবাদ ইসরাইল।
    Total Reply(0) Reply
  • DeamBright Ripon Ripon ২৫ মার্চ, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    বিশ্বনেতা এখন চিপা চাপায় গজায় হুম
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Hossain ২৫ মার্চ, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    আচ্ছা আমেরিকার পর কে হবে বিশ্বনেতা?
    Total Reply(0) Reply
  • MD Emran Ahmed Polash ২৫ মার্চ, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
    ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বিশ্বে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ যুক্ত হবে এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্টা হতে চলেছে এবং আমেরিকার মুড়লিপনার পতন হতে চলেছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ