Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে তৃণমূল পুর্নগঠনে নামছে আ.লীগ-বিএনপি

ঘর গোছানোর তোড়জোড়

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে ঘর গোছানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানা কমিটি চূড়ান্ত করে মহানগর আ.লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে কেন্দ্রীয় নেতারা নির্দেশনা দিয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জুনেই অনুষ্ঠিত হবে বহু প্রতীক্ষিত সম্মেলন। মাঠের বিরোধী দল বিএনপির হাতেও সময় কম। দলের হাইকমান্ড থেকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি চূড়ান্ত করতে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। সংগঠনকে পুর্নগঠন করার প্রক্রিয়া তদারক করছেন উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের তৃণমূলে নেতৃত্ব নির্বাচনকে ঘিরে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে। চৈত্রের খরতাপের সাথে তৃণমূলের রাজনীতিতেও গরম হাওয়া বইতে শুরু করছে। সেই সাথে উভয় দলেই কলহ বিরোধ বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে চট্টগ্রাম মহানগরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চায় উভয় দলের হাইকমান্ড। আর এ জন্যই ঘর গোছানোর এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত হয়েছেন দুই দলের শীর্ষ নেতারাও। অনেক আগেই বড় এই দুটি দলের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি চূড়ান্ত করার কথা ছিলো। সরকারি দল আ.লীগ তৃণমূলে কমিটি গঠন শুরুও করে। গত ১৬ নভেম্বর ইউনিট সম্মেলনের শুরুতে আভ্যন্তরীণ বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। পাল্টা-পাল্টি সম্মেলন, কমিটি গঠন এমনকি সিনিয়র নেতাদের অবরুদ্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটে। আর তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রের নির্দেশে সে প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। নগর আ.লীগে বরাবরের মতোই দুটো ধারা। একদিকে আছেন চট্টলবীর মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারিরা। এখন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলকে ঘিরে তারা সক্রিয়। অপর অংশ সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের বলয়ে।

তৃণমূল গঠন নিয়ে বিএনপিও বেহাল অবস্থায়। বিগত ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে তৃণমূল গুছিয়ে মহানগর কমিটির সম্মেলন করতে বলা হয়েছিল। তবে এখনও তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা যায়নি। টানা প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিতে আগের মতো কলহ-বিরোধ তেমন নেই। তবে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলে নেতায় নেতায় কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েই গেছে। তাছাড়া মামলা, হুলিয়া আর রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সরকারের প্রবল বাধার কারণে তৃণমূল গঠন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি বলে দাবি করেন দলের নেতারা।

জুনে সম্মেলন আ.লীগের
আগামী জুনে মহানগর আ.লীগের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নেতারা। আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদন সাপেক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। গত মঙ্গলবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহানগর আ.লীগের বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের উপস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত হয়। দলের নেতারা জানান, মহানগরীর অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানায় সম্মেলন হবে। সেগুলো শেষ করে জুনে নগর আ.লীগের সম্মেলন হবে। টিমের প্রধান আ.লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন পরে সার্কিট হাউসে নগর আ.লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৫টি সাংগঠনিক টিমের প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কমিটির সদস্যদের মধ্যে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন নিয়ে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় কমিটির গঠিত রিভিউ কমিটি ১৫টি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছিল। অভিযোগ আছে, নগর আ.লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনাগ্রহের কারণে টিমগুলো দুই মাসেও কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে কমিটি নেতাদের সাথে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় নেতারা আশাবাদি এখন কমিটি কাজ শুরু করতে পারবে। তারা বলছেন, মহানগর আ.লীগের ১৫টি সাংগঠনিক থানার জন্য ১৫টি সাংগঠনিক টিম করায় একদিনে ১৫টি থানা সম্মেলন, ১৫টি ওয়ার্ড সম্মেলন কিংবা একদিনে ১৫টি ইউনিট সম্মেলন করতে সমস্যা হবে না। এসব কমিটি তৃণমূল পুর্নগঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে। ইউনিট আ.লীগের সম্মেলন নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। নগর আ.লীগের ১৫টি থানা, ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং ১২৯টি ইউনিট আছে। তৃণমূলের এসব কমিটির শেষ সম্মেলন হয়েছিল দেড় থেকে দুই দশক আগে। আর কেন্দ্র থেকে নগর আ.লীগের সব শেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর।

বিএনপির হাতেও সময় কম
মহানগর বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনে ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২১ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রামের নেতাদের সাথে স্কাইপিতে যুক্ত হয়ে এ নির্দেশনা দেন তিনি। মহানগরের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে পৃথক পাঁচটি উপ-কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়েছে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। আর এসব কমিটিতে নগরীর বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির মাত্র ১৭ নেতার ঠাঁই হয়েছে। বাকিদের বাদ দেয়ার ঘটনায় মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে বলেও মনে করছেন দলের নেতারা। ওই পাঁচটি উপ-কমিটিকে তদারক করার জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খানকে প্রধান করে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ দুই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যেই নগরীর ৭৭০টি ইউনিট (ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি), ৪১টি ওয়ার্ড ও ১৫টি সাংগঠনিক থানার কমিটি পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমেই তৃণমূলের এসব কমিটি গঠন করতে হবে। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর নগর আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তৃণমূল গুছিয়ে নেয়ার নির্দেশনা ছিল হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। তবে দলের নেতারা বলছেন, চসিক নির্বাচন, করোনা মহামারি এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়কসহ বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় ওই প্রক্রিয়ায় হোঁচট খায় দলটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ.লীগ-বিএনপি

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ