পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইসির সদস্যরা পাহাড়সম ব্যর্থতা ও দেশের জনগণকে ‘নির্বাচন বিমুখ’ করার দায় নিয়ে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তির অনুসন্ধান করতে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি দুই দফায় বৈঠক করে জানিয়েছেন নতুন ইসি গঠনে প্রেসিডেন্টকে প্রস্তাবনা দেয়ার আগে ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে সংলাপ করবে। একই সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নাম দেয়ার আহবান জানিয়েছে। অথচ সার্চ কমিটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো সার্চ কমিটি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিএনপি, তার শরীক দল ও বামদলগুলো এ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
জানতে চাইলে রাজনীতির তৃতীয়পক্ষ হিসেবে পরিচিত বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, এ সার্চ কমিটি নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। এদের কাছে নাম দিয়ে কি করব? নাম দিলেও এ সার্চ কমিটি আওয়ামী লীগের ইচ্ছা পূরণে নিজেদের মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাব করবেন। অতএব, নাম দেয়ার চেয়ে না দেয়াই ভালো। তবে এখনো নাম দেয়ার প্রস্তাব পাইনি। সার্চ কমিটি নিয়ে কার্যত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখুরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সার্চ কমিটি হচ্ছে, ওল্ড ওয়াইন ইন দ্য নিউ বোতল। গত দুইবার আওয়ামী লীগ যেভাবে ইসি গঠন করেছে ঠিক একইভাবে আবারো জাস্ট একটা খোলশ লাগিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। দেখা যাবে যে, সেই হুদার (কে এম নুরুল হুদা) মতো লোকজনকে ইসিতে নেয়া হবে। ফলে সার্চ কমিটির কাছে নাম দেবে না বিএনপি। এ কমিটিতে নাম দেয়ার কোনো মূল্য নেই, এটা অর্থহীন। বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্য বিভ্রান্তিকর হিসেবে অবিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, নেতিবাচক, বিভ্রান্তিকর। রাজনীতির মাঠে চরম ব্যর্থতায় নিপতিত বিএনপি এখন নিজেদের হতাশা ও নিরাশার মাপকাঠিতে জনপ্রত্যাশা পরিমাপের ব্যর্থ চেষ্টায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক বিধান ও আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। সার্চ কমিটির সব সদস্য নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং দেশ-জাতির প্রতি তাদের ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা প্রশ্নাতীত। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের যে শপথ নিয়ে সার্চ কমিটির কার্যক্রম শুরু করেছে, তা পরিপূর্ণ রূপে বাস্তবায়িত হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এই সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছে, অনুসন্ধানের নামে অতীতের মতো অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে আবারও সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া করছে। এটা জাতির জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে। এ কমিটির এক সদস্য গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কমিটির প্রধানও এর আগে সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন। ওই কমিটির সুপারিশেই বিতর্কিত নূরুল হুদা কমিশন গঠন হয়েছিল। তাই, এই কমিটি কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কারণ রয়েছে। তবে এ কমিটিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য অভিজ্ঞ, সৎ ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের বাছাই করে বের করতে হবে। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের একমাত্র পথ সুপারিশ করা ব্যক্তিদের নাম গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ ও গণশুনানি করা। এর ভিত্তিতেই সঠিক ব্যক্তিদের বেছে নেওয়া এবং অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তিদের দূরে রাখা যাবে।
জানতে চাইলে কমিশনের নিবন্ধন তালিকায় থাকা ১ নম্বর দল এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ জানান, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাছে এলডিপি কোনো নাম প্রস্তাব করবে না। তিনি বলেন, সার্চ কমিটিতে যারা আছেন তারা অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এমনও একজন আছেন যিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নমিনেশন (মনোনয়ন) চেয়েছিলেন। এই কমিটির কাছে নাম দেওয়ার কোনো যুক্তিই আসে না।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সংলাপে অংশ নিতে ৩২টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অর্ধেক দলই সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপের খতিয়ানে দেখা যায় বঙ্গভবনে সংলাপে অংশ নেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জোট (জাসদ-ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে আমন্ত্রণ পাওয়া দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এলডিপি, জেএসডি (রব), জাগপা, ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মুসলিম লীগসহ প্রায় সমান সংখ্যক দল সংলাপে অংশ নেয়নি।
যেসব দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে, সে দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন আইন করাসহ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জটিলতা ও অবিশ্বাস দূর করতে আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের সংলাপে অংশ না নেয়া দলগুলো এ আলোচনা প্রক্রিয়াকে ‘লোক দেখানো’ এবং সার্চ কমিটিকে আওয়ামী লীগের ‘আজ্ঞাবহ’ হিসেবে অবিহিত করেছে।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটি নিয়েই কার্যত দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়ে গেছে। বাম ধারাসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে তারা সার্চ কমিটির কার্যক্রম নিয়ে কথা বলার আগ্রহ দেখাননি। তাদের বক্তব্য সরকার কাদের ইসিতে নিয়োগ দেবেন তা ঠিক করেই বিদেশিদের দেখানোর জন্য এমন সার্চ কমিটি, বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনা, নিবন্ধিত দলের কাছ থেকে নাম নেয়া নাটক করছে। এই সার্চ কমিটি এবং ইসি গঠন নিয়ে কথাবার্তা না বলে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গঠন করতে হবে। যারা এই সরকারের চাতুরি বুঝতে পেরেছেন সে দলগুলোতে আদর্শ নীতিতে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ঐক্যবদ্ধ সময়ের দাবি।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সভা অনুষ্ঠিত হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়ামের সব সদস্যের কাছে ইসি গঠনে ১০ জনের করে নামের তালিকা চাওয়া হয়। এসে প্রত্যেকে ১০ জন করে নাম দেন। ১৯০টি নামের মধ্যে যেসব নাম কমন পড়ে সেগুলো হচ্ছে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক মূখ্য সচিব আবদুল কালাম আজাদ, সাবেক মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান, সাবেক ধর্ম সচিব নুরুল হক, সাবেক কাবিনেট সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদেক, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানবিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, সাবেক স্বাস্থ্য ও নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া, সাবেক তথ্য সচিব ও বর্তমানে একটি পত্রিকার সম্পদক অধ্যাপক গোলাম রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সালদার হোসেন, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন তুলি, ইসির সাবেক যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম। উল্লেখ, গত ৮ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে ইসি থেকে পদত্যাগ করেন আবুল কাশেম। তবে ১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানান, এবারের ইসিতে শরীক দলগুলোর দেয়া নাম গুরুত্ব পাবে।
এর আগে গত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বঙ্গভবনে সংলাপের সময় নির্বাচনকেন্দ্রিক গভীর রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে প্রেসিডেন্টকে খোলা চিঠি দেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট। এই চিঠিতে মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক সঙ্কট উত্তরণে প্রেসিডেন্টকে তার পদের নৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারকে অবিলম্বে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক সঙ্কটটি রাজনৈতিক। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের মত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও ব্যর্থ হলে গোটা দেশ ও দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ আরও বিপর্যস্ত হবে। অনিশ্চিত অন্ধকারে নিপতিত হবে। সরকারি দল প্রেসিডেন্টের ওপর ভর দিয়ে বৈতরণী পার হতে চায়’।
চিঠিতে দেশ ও জাতির এ গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে রাষ্ট্রের প্রধান অভিভাবক হিসাবে প্রেসিডেন্টকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও প্রেসিডেন্ট তার মর্যাদাপূর্ণ পদের নৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারকে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে কার্যকর রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন; যাতে সরকার ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতৈক্যের ভিত্তিতে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সমঝোতায় আসতে পারে’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।