মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনে রুশ অভিযান চলতে থাকার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আবারও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। মি. জেলেনস্কি বলেন, তার সাথে মি. পুতিনের বৈঠক ছাড়া এ যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে আলোচনা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, রাশিয়ার দখলকৃত ক্রাইমিয়া, ডনবাস অঞ্চল এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টিসহ ‘সকল বিষয় নিয়ে’ আলোচনার জন্য তিনি তৈরি আছেন। তবে মি. জেলেনস্কি এ-ও বলেন যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগুলোকে অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
এমন এক সময় মি. জেলেনস্কি এ আহ্বান জানালেন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে ভ্লাদিমির পুতিনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এবং তিনি হয়তো ইউক্রেনে রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। ক্রেমলিন অবশ্য সোমবার বলেছে যে, এ দুই নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠক হবার মতো অগ্রগতি আলোচনায় এখনো হয়নি।
রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার পর সেদেশ থেকে ২০ লক্ষেরও বেশি লোক পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে- বলছে পোলিশ সীমান্ত রক্ষী কর্তৃপক্ষ। মি. জেলেনস্কি ইতোমধ্যে পোপ ফ্রান্সিসের সাথে কথা বলেছেন এবং আভাস দিয়েছেন যে, ভ্যাটিকান হয়তো এ যুদ্ধ মধ্যস্থতার ভুমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া তিনি ভিডিও লিংকে ইতালির পার্লামেন্টেও এক ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, তার দেশ এখন প্রায় চার সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া রুশ অভিযান অতিক্রম করে টিকে থাকার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।
৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ ইউক্রেনে মানব ঢাল : রাশিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের প্রধান মিখাইল মিজিনসেভ রোববার বলেছেন, ইউক্রেনের নব্য-নাৎসিরা ১৮টি দেশের ৬ হাজার ৮৩৮ জন বিদেশীসহ ৪৫ লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। ‘প্রতিদিন মানবিক করিডোর খোলা থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনীয় নব্য-নাৎসিরা কিয়েভ, খারকভ, চেরনিগভ, সুমি এবং অন্যান্য ২০টিরও বেশি অবরুদ্ধ বড় শহরে ৪৫ লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে মানব ঢাল হিসাবে রাখা অব্যাহত রেখেছে। তাদের মধ্যে ১৮টি দেশের ৬,৮৩৮ জন বিদেশী নাগরিক রয়েছে’ - তিনি বলেন।
মিজিনসেভের মতে, ১৫টি দেশের ৭০টি জাহাজের ক্রু ইউক্রেনের অবরুদ্ধ সমুদ্রবন্দরে অবস্থান করছে। তিনি আরো বলেন, ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য রাশিয়ায় ৯ হাজার ৫শ’টিরও বেশি অস্থায়ী আবাসন কেন্দ্র কাজ করছে। মিজিনসেভ বলেন, মারিউপোলে কিয়েভের পরিত্যক্ত জাতীয়তাবাদীরা শহরের জেলাগুলোতে ব্যাপক সন্ত্রাস সংগঠিত করেছে।
‘ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের পরিচালিত অনাচারের কারণে মারিউপোলে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। হতাশ এবং তাদের মন থেকে কিয়েভ থেকে কোনো সাহায্য অসম্ভব বুঝতে পেরে দস্যুরা যে অংশ তারা এখনও নিয়ন্ত্রণ করে সেই মারিউপোল জেলাগুলোতে ব্যাপক সন্ত্রাস শুরু করেছে। এদিকে, আমরা যে যাচাইকৃত তথ্য পেয়েছি, তা নির্দেশ করে যে, জঙ্গিরা হতাশায় পাগল হয়ে ভয়ঙ্কর নৃশংসতা চালিয়েছিল’, মিজিনসেভ বলেছেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, কিয়েভ কর্মকর্তাদের সাথে জঙ্গিদের সক্রিয় যোগাযোগের স্বরলিপি, যা রাশিয়ান বাহিনী প্রতিদিন বাধা দেয়, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের চরম ক্ষোভ নির্দেশ করে যারা কেবল তাদের পরিত্যাগ করেছে। ‘এদিকে তাদের ‘মারিউপোলের শহীদের’ মর্যাদাসহ ‘মৃত্যুর জন্য তাদের প্রস্তুত থাকার’ আদেশ দেওয়া হচ্ছে’ -জেনারেল যোগ করেছেন।
অনেকগুলো শহরের আশপাশে লড়াই চলছে : ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিউপোল, উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ - এগুলোর আশপাশে এখনো লড়াই চলছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন আরো বেশি বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে।
কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে ২৫ মাইল পূর্বদিকের আরেকটি শহর বোরিস্পিলের আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যেই যুদ্ধ চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের ওই অঞ্চল ছেড়ে যাবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিয়েভের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি এখানেই। মেয়র ভলোদিমির বোরিসেংকো বলেছেন, বেসামরিক লোকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে যাওয়া উচিত। এছাড়া রুশ সীমান্ত থেকে ৩০ মাইল দূরের খারকিভ শহরে রুশ বাহিনী অবিরাম গোলাবর্ষণ করছে। সেখানে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০০ বেসামরিক লোক নিহত এবং প্রায় ১০০০ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
অবরুদ্ধ মারিউপোল শহর থেকে আরো তিন হাজার লোককে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সোমবার বিভিন্ন যুদ্ধ এলাকা থেকে মোট আট হাজার বেসামরিক লোককে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। মারিউপোলে মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এখনো দু পক্ষের ঐকমত্য হয়নি।
এই সঙ্ঘাত একটি পবিত্র যুদ্ধ : রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ বা ক্যাথেড্রাল দাবি করেছে যে, রাশিয়া আগ্রাসনবাদী নয় এবং এই অজুহাতে ইউক্রেনীয়রা ডনবাসে রাশিয়ান ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন নীতিকে সমর্থন করে বলেছেন যে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণ একই কিয়েভান ব্যাপটিক ধারা থেকে এসেছে এবং পরস্পরের সাথে একটি অভিন্ন ঐতিহাসিক ভাগ্যে বাধা রয়েছে। কিরিল এই সংঘাতকে একটি পবিত্র যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। রোববার তার ধর্মোপদেশে বিশ্বস্তদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সংগ্রামে প্রবেশ করেছি যার একটি শারীরিক নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে।’ ‘ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অফ চার্চেস’-এর পক্ষ তাকে দু’দেশের মধ্যে শান্তির জন্য মধ্যস্থতা করার আহ্বান জানালে, এর প্রতিক্রিয়ায় একটি চিঠিতে তিনি দাবি করেন যে, তার দেশ আগ্রাসনবাদী নয় এবং এ মর্মান্তিক সঙ্ঘাত একটি ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হয়ে উঠেছে, যার উদ্দেশ্য প্রথম এবং সর্বাগ্রে রাশিয়াকে দুর্বল করে দেয়া। সূত্র : বিবিসি বাংলা, ডন অনলাইন ও দ্য ইকোনোমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।