পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে প্রধানত দুটি উৎস থেকে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উত্তোলন এবং বিদেশ থেকে আমদানি। এরমধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি দুই ধরনের চুক্তির আওতায় করা হচ্ছে। জিটুজি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আর স্পর্ট মার্কেট (দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমান দর) থেকে। তবে দেশীয় উৎসের গ্যাসের দাম বাড়েনি, জিটুজি ভিত্তিতে আনা গ্যাসের দামও বাড়েনি। তারপরও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের প্রথম গণশুনানি শুরু হয়েছে। এবার বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম শিল্প কারখানায় ১১৭ ভাগ এবং বাসাবাড়িতে ১১৬ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। যা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৪৭ পয়সা নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি (মূল্যায়ন) কমিটি। এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা ১১ পয়সা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি। দাম বেড়েছে শুধু স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের। তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। গত বছরের শেষের দিকে সরকার ডিজেলের দাম বাড়ানোর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বিদ্যুতেরও দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে গরিবের ভর্তুকির টাকা যাচ্ছে ধনীদের কাছে। এসব টাকা যাতে ধনীরা না পায় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। প্রাকৃতিক গ্যাসের ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের গণশুনানি শুরু হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্যাস সরবরাহ আসছে প্রধানত দুটি উৎস থেকে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে উত্তোলন এবং বিদেশ থেকে আমদানি। এরমধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি দুই ধরনের চুক্তির আওতায় করা হচ্ছে। জিটুজি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আর স্পর্ট মার্কেট (দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমান দর) থেকে। তবে দেশীয় উৎসের গ্যাসের দাম বাড়েনি, জিটুজি ভিত্তিতে আনা গ্যাসের দামও বাড়েনি। দাম বেড়েছে শুধু স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের। যার পরিমাণ সামান্যই।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫-৬ শতাংশ। এ জন্য সব গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়াতে হয় এটা বিশ্বাসযোগ্য (নয়)! তারা গোঁজামিল দিয়ে হিসাব দেখাচ্ছে, এসব হিসাব বাস্তবসম্মত নয়। প্রয়োজন হলে ওই পরিমাণ এলএনজি আমদানি না করার পক্ষে আমরা। তবুও দাম বাড়ানো উচিত হবে না।
সোমবার রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান মেমোরিয়াল হলে চারদিনব্যাপী এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়। গণশুনানি শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে শুনানি গ্রহণে উপস্থিত আছেন সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান। চারদিনব্যাপী এই শুনানির গতকাল ছিল প্রথম দিন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) তাদের প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। এরপর কমিশন তাদের মূল্যায়ন রিপোর্ট পেশ করবে। কমিশনের মূল্যায়ন রিপোর্ট শেষে ইতোমধ্যে যারা তালিকাভুক্ত করেছেন তারা আলোচনায় অংশ নেন। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) তাদের প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল তার স্বাগত বক্তব্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো শিল্প কারখানায় ১১৭ ভাগ এবং বাসাবাড়িতে ১১৬ ভাগ গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করছে। তবে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। এবার মূল্য নির্ধারণে অবিবেচক হবে না। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে গণশুনানি শুরু হয়েছে। আগামী তিনদিন শুনানি চলবে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে। আমরা শুনব। আমাদের বিচারক টিম থাকবে। চুলচেরা বিশ্লেষণের পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা অমানবিক হবো না। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৪৭ পয়সা নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি (মূল্যায়ন) কমিটি। এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা ১১ পয়সা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
শুনানির শুরুতে বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করে আসছে। কমিশন হচ্ছে আধাবিচারিক ব্যবস্থা, এখানে যুক্তি ও প্রমাণের মাধ্যমে মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়। এখন পেট্রোবাংলা প্রস্তাবিত পাইকারি দরের ওপর গণশুনানি হচ্ছে। বিকালের অধিবেশনে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ট্রান্সমিশন চার্জের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়।
শুনানিতে বলা হয়, পেট্রোবাংলা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির হিসাব ধরে গ্যাসের ঘনমিটার প্রতি ২০ টাকা ৩৬ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু কারিগরি কমিটি থেকে বলা হয়, এই পরিমাণ এলএনজি এখন আমদানিই হচ্ছে না। সুতরাং এখন পেট্রোবাংলার মিশ্রিত গ্যাসের দাম ১৫ টাকা ৩০ পয়সা। কমিটির পক্ষ থেকে মূল্যায়ন কমিটির প্রধান দিদারুল আলম বলেন, আমরা ২০২১-২০২২ অর্থবছরের গ্যাস আমদানির রিয়েল ডাটা যাচাই করেছি। সে হিসাবেই এই দামের সুপারিশ করেছি।
দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ জ্বালানি সহকারী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, যে হারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজির) দাম বেড়েছে তাতে সরকারের বড় ভর্তুকি যাচ্ছে এই গ্যাস আমদানি করতে গিয়ে। ফলে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু মনে রাখা দরকার, কতটুকু বাড়াতে পারবে সরকার। গোটা লোকসান জনগণের কাছ থেকে নেওয়া যাবে না। এ খাতে অবশ্য ভর্তুকি থাকতে হবে। এ দুটি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অধিক হারে বাড়লে তা জনগণের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, তেলের দাম কমেছে। এখন দেখা দরকার ফারনেস তেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালালে লোকসান বেশি, নাকি গ্যাসে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালালে লোকসান বেশি। যদি তেলে বেশি লোকসান হয়, তাহলে গ্যাসের দাম ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতেই হবে, তবে তা সহনশীল মাত্রায় থাকা দরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যপত্রে বলা হয়, সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জন্য চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন। এই ভর্তুকির বিপরীতে সরকারের চলতি বছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় দুই হাজার কোটি টাকা জ্বালানি বিভাগকে দিয়েছে। এলএনজি আমদানি করতে সরকারের এখনই দরকার ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই বরাদ্দও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে জ¦ালানি বিভাগ। সে কারণে গত নভেম্বরে অর্থ বিভাগের কাছে ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার ভর্তুকি চেয়ে চিঠি দিয়েছে তারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির দাম গত বছরের আগস্টের আগে ছিল ১০ ডলার। সেটি বেড়ে এখন ৪৫ ডলার হয়েছে। সাড়ে চারগুণ দাম বেড়েছে এলএনজির স্পর্ট মার্কেটে। দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪২০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ হচ্ছে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরকার। অর্থাৎ সরবরাহকৃত গ্যাসের তিন ভাগের একভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানির কারণে গ্যাস খাতে ভর্তুকি বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরো বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুতেরও দাম বাড়বে। কারণ দেশের প্রায় ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ আসে গ্যাস থেকে, বাকি বিদ্যুতের বড় অংশ আসে তেল থেকে। এর আগে সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে ২৩ ভাগ। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ঘাটতি মেটাতে এই প্রয়োজনীয় দুটি পণ্যের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াতে চায়।
বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনায় নতুন পারদ যুক্ত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কায় পণ্যটির দাম আরো বেড়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। পরে সেখানে সেনা পাঠানোরও নির্দেশ দেন তিনি। তাতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের আগাম কেনাবেচায় এরই মধ্যে ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম বেড়ে ৯৮ দশমিক ২১ মার্কিন ডলারে উঠে গেছে, যা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডবিøউটিআই) ক্রুড অয়েলের দামও প্রতি ব্যারেল ৯৬ দশমিক ৮২ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।