পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাইডেনের ‘যুদ্ধাপরাধী’ মন্তব্যে ‘ক্ষমার অযোগ্য’: ক্রেমলিন
‘যাদের বোমায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে তারাই পুতিনকে বলছেন যুদ্ধাপরাধী’
যুক্তরাষ্ট্রকে তার অবস্থানে রাখার ক্ষমতা আমাদের আছে : হুঁশিয়ারি রাশিয়ার
মেলিতপোলের মেয়রকে মুক্তি দিয়েছে মস্কো
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসাবে আলাস্কা এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অংশ ফেরতের দাবি
ইনকিলাব ডেস্ক
ইউক্রেন এবং রাশিয়া একটি ‘যুদ্ধবিরতি ও রাশিয়ান সেনা প্রত্যাহার সহ একটি অস্থায়ী ১৫-দফা শান্তি পরিকল্পনায়’ ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ করেছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে অভিহিত করার পর, ক্রেমলিন ত্বরিত এক প্রতিক্রিয়ায় একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বাগাড়ম্বর বলে আখ্যা দিয়েছে। রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘যাদের ছোড়া বোমায় সারা দুনিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে তাদের এ ধরণের বাগাড়ম্বর অগ্রহণযোগ্য।’
ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনায় জড়িত ব্যক্তিদের উদ্ধৃত করে লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘যদি কিয়েভ নিরপেক্ষতা ঘোষণা করে এবং তার সশস্ত্র বাহিনীর উপর সীমাবদ্ধতা মেনে নেয়’ তাহলে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করবে। গত সোমবার প্রথমবারের মতো ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার আলোচনায় প্রস্তাবিত এই চুক্তির ব্যাপারটি উঠে আসে। যেখানে শর্ত ছিল, কিয়েভ ন্যাটোতে যোগ দেয়ার উচ্চাকাঙ্খা পরিত্যাগ করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো মিত্রদের কাছ থেকে সুরক্ষার বিনিময়ে বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে দিবে না। শান্তিচুক্তির ব্যাপারে দুই দেশই আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির কথা বললেও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা পুতিন শান্তি রক্ষায় সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া যুদ্ধে মস্কো তার বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করতে এবং আক্রমণ পুনরায় শুরু করার জন্য সময় কিনতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। কারণ, পুতিন বুধবারও আপোষের কোনো চিহ্ন দেখাননি।
তবে শান্তিচুক্তির ইঙ্গিত দিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, সুইডেন-নরওয়ের মতো আমরা ইউক্রেনকেও একটি নিরপেক্ষ দেশের ভ‚মিকায় দেখতে চাই। এক্ষেত্রে দেশটির নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বও নিশ্চিত করা হবে। এর পাশাপাশি ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে ন্যাটোর সীমানা বিস্তার বন্ধ করতে হবে। পশ্চিমারা মূলত মস্কো-কিয়েভ সমঝোতা চায় না। বরং উত্তেজনা উস্কে দিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সাথে সমঝোতার জন্য আমাদের প্রত্যেক কর্মকর্তা-প্রতিনিধি দিনরাত কাজ করছেন। কারণ, চুক্তির মাধ্যমেই ইতি ঘটে যেকোনো যুদ্ধের। আশার কথা হলো রাশিয়ার সাথে সমঝোতার বিষয়টি আশার আলো দেখতে শুরু করেছে।
বাইডেনের ‘যুদ্ধাপরাধী’ মন্তব্যে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ : : বুধবার হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিনকে প্রথমবারের মত ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে আখ্যা দেন বাইডেন। পুতিনকে ওই আখ্যা দেবার বিষয়ে বাইডেনের পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না, একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই মন্তব্য করেন। তবে পরে হোয়াইট হাউজ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, বাইডেন ‘স্পিকিং ফ্রম হিস হার্ট’ বা ‘অন্তর থেকে’ কথা বলছিলেন। এদিকে, ক্রেমলিন এই মন্তব্যকে বলছে, ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বাগাড়ম্বর। বাইডেনের এ মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। বৃহস্পতিবার তারা বলেছে, জো বাইডেনের ‘যুদ্ধাপরাধী’ মন্তব্য ‘ক্ষমার অযোগ্য’। তারা পশ্চিমকে ‘ঘৃণ্য’ ভাবে আচরণ করার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
রাশিয়া জানিয়েছে, তারা শান্তি আলোচনায় ‘সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা’ করছে। তারা আলোচনা নিয়ে কালক্ষেপণ করছে বলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে এবং বলেছে যে, সংঘাতের অবসানের জন্য তাদের দেয়া শর্তগুলো ‘একদম স্পষ্ট’। ইউক্রেনের সংঘাত ২১ তম দিনে প্রবেশ করার সাথে সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে অভিহিত করেন। তারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই মন্তব্যটি এসেছে। ক্রেমলিন যোগ করেছে যে, বাইডেনের মন্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’। মস্কো বারবার বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করার কথা অস্বীকার করেছে। অগ্রগতি নিয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্কয় থাকা সত্তে¡ও, রাশিয়া বুধবার বলেছে যে, ইউক্রেনের সাথে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির কিছু অংশ সম্মত হওয়ার কাছাকাছি রয়েছে দুই পক্ষ।
এর আগে বুধবার দেয়া এক বক্তৃতায়, পুতিন সেই রাশিয়ানদের কথাও উল্লেখ করেন, যারা ইউক্রেন অভিযান সমর্থন করে না। তিনি বলেন, রাশিয়া ‘সর্বদা সত্যিকারের দেশপ্রেমিকদের আবর্জনা এবং বিশ্বাসঘাতকদের থেকে আলাদা করতে সক্ষম হবে এবং ভুলবশত তাদের মুখে উড়ে থুতুর মতো মুছে ফেলবে’।
যাদের বোমায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে তারাই পুতিনকে বলছেন যুদ্ধাপরাধী : রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে বলেছেন, ‘একজন রাষ্ট্রনেতার কাছ থেকে এ ধরণের বাগাড়ম্বর অগ্রহণযোগ্য এবং ক্ষমার অযোগ্য বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিশেষ করে যাদের ছোড়া বোমায় সারা দুনিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।’ বাইডেনের বক্তব্যের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ নতুন করে আরো একটু চড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, যুদ্ধের ২১তম দিনে ইউক্রেনের মারিউপোল শহরে রাশিয়া এক থিয়েটারে বোমা ছুড়েছে যেখানে প্রায় ১২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কৌশলগত ১০০টি মানব-বিধ্বংসী ড্রোন, রকেট ও গ্রেনেড লঞ্চার, রাইফেল, মেশিন গান, বডি আর্মার এবং গোলাবারুদসহ ১০০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। বার্তা সংস্থা এপি এই সিদ্ধান্তের সাথে ঘনিষ্ঠ একজন মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার বাইডেন প্রশাসনের এই সামরিক সহায়তা পাঠানোর কথা জানায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব অস্ত্র পাঠানো হবে তার মধ্যে আছে সুইচবেøড ৩০০ নামে ড্রোন-যা মার্কিন বাহিনীর কাছে ‘কামিকাজি ড্রোন’ নামে পরিচিত। এটি ব্যাকপ্যাকের মত পরা যায় এমন অস্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্রকে তার অবস্থানে রাখার ক্ষমতা আমাদের আছে : রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে যে, বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে তার অবস্থানে রাখার ক্ষমতা মস্কোর রয়েছে। গতকাল এক সাক্ষাতকারে এই মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপসচিব দিমিত্রি মেদভেদেভ। পশ্চিমারা রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি বিদ্বেষমূলক চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করে মেদভেদেভ বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে নতজানু করতে বাধ্য করার প্রয়াসে ‘ঘৃণ্য’ রুশোফোবিয়া তৈরি করেছে। ‘এটি কাজ করবে না - রাশিয়ার শক্তি আছে আমাদের সমস্ত বর্বর শত্রæদের তাদের জায়গায় রাখার,’ তিনি বলেছিলেন।
মেলিতপোলের মেয়র মুক্ত : ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মেলিতপোলের মেয়রকে মুক্তি দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে। মেলিতপোলের মেয়র ইভান ফেদরোভকে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রুশ সেনারা তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একই অভিযোগ করেছিল ইউক্রেনের পার্লামেন্ট। ইভানের মুক্তি নিশ্চিত করতে গত শনিবার ফ্রান্স ও জার্মানির নেতাদের প্রতি আহŸান জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। বুধবার টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফোনে মেয়র ইভানের সঙ্গে কথা বলছেন জেলেনস্কি। এ সময় ইভানকে প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি যে জীবিত আছেন, তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেরে তিনি খুশি। জবাবে ইভান বলেন, তিনি অনেক ভালো আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসাবে আলাস্কা এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অংশ ফেরতের দাবি : একজন রাশিয়ান সংসদ সদস্য আলাস্কা এবং ক্যালিফোর্নিয়ার একটি অংশ ফেরত দেয়া সহ মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘ক্ষতিপূরণ’ দাবি করছেন। রাশিয়ার ফেডারেল অ্যাসেম্বলির সদস্য ওলেগ মাতভেচেভ রোববার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধের কারণে যে ক্ষতি হয়েছিল তার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত, কারণ এতেও অর্থ ব্যয় হয় এবং আমাদের তা ফেরত দেওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সমস্ত রাশিয়ান সম্পত্তি, যেগুলো রাশিয়ান সাম্রাজ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমান রাশিয়ার ছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সব ফেরত দিতে হবে।’
যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তিনি বিশেষভাবে আলাস্কা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় একসময় রাশিয়ার অধীনে থাকা ফোর্ট রসের কথা বলছেন কিনা, তখন মাতভেচেভ জানান, সেগুলো উভয়ই (রাশিয়ার) অন্তর্গত। ‘এটা ছিল আমার পরবর্তী পয়েন্ট। সেইসাথে অ্যান্টার্কটিক,’ তিনি যোগ করেছেন, ‘আমরা এটি আবিষ্কার করেছি, তাই এটি আমাদেরই।’ উল্লেখ্য, রাশিয়া ১৭৮৪ সালে থ্রি সেন্টস বে নামে একটি উপনিবেশ নিয়ে আলাস্কায় প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল। পরে ১৮৬৭ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনের প্রশাসনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭২ লাখ ডলারে আলাস্কা কিনেছিল। একটি রাশিয়ান-আমেরিকান কোম্পানিও ১৮১২ সালে আধুনিক সান ফ্রান্সিসকোর বাইরে ফোর্ট রস প্রতিষ্ঠা করেছিল, কিন্তু তারা পরে ১৮৪১ সালে সেটি স্থানীয়দের তাছে বিক্রি করে দেয়। সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, বিবিসি, ইউএস নিউজ, ডেইলি মেইল, স্কাই নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।