২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
অর্শ বা পাইলস খুব পরিচিত রোগ। বিশেষত ৪৫-৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগটি দেখা যায়। তবে বর্তমান সময়ে প্রায় সব বয়সের মানুষের মধ্যে এর প্রকোপতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
অর্শ বা পাইলসকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হেমোরয়েড বলে। মলদ্বারের নীচের অংশে এক ধরনের রক্তের গুচ্ছ যেটা ফুলে কুশন তৈরী করে।
অর্শ বা পাইলসের কারণঃ
পাইলস কেন হয়, এর সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে এ রোগে যে বিষয়গুলো দায়ী বলে ধারণা করা যায়, তার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী কোষ্টকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, পানি কম খাওয়া, অনিয়মিত মলত্যাগ, মলত্যাগে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন, লিভার সিরোসিস, ভারি ওজন তোলা যা পেটে চাপ পড়া, গর্ভাবস্থা, অ্যাসাইটিস, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে কাজ করা, বৃদ্ধ বয়সে, পরিবারে কারো অর্শের ইতিহাস থাকলে, বারবার কৃমির আক্রমণ, আইবিএস এবং বেশি মশলাযুক্ত খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদি।
অর্শের প্রকারঃ অর্শ বা পাইলস দুই প্রকারঃÑ১. অভ্যন্তরীণ অর্শ ও ২. বহিঃঅর্শ।
লক্ষণ পর্যায়ঃ অর্শ হলো মলদ্বারের নি¤œাংশের রোগ। যেখানে রক্তনালীর শিরাগুলো ফুলে বিভিন্ন লক্ষণ তৈরী করে, যেমন মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত। এমনকি অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। মলদ্বারে জ্বালাপোড়া ও চুলকানী হওয়া, মলদ্বারের মাংসপিন্ড বাইরে বের হতে পারে। কখনো মাংসপিন্ড নাও বের হতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণের ভিত্তিতে অর্শকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়:
১ম পর্যায়ঃ মলদ্বার দিয়ে টাটকা রক্তপাত, যা ব্যথাবিহীন। এ সময় মাংসপিন্ড বাইরে বের হয় না। মলত্যাগের শেষে রক্তপাত হয়। রক্ত কখনো ফোঁটা ফোঁটা, কখনো ফিনকি দিয়ে যেতে পারে।
২য় পর্যায়ঃ মলত্যাগের সময় মাংসপিন্ড বাইরে বের হয়ে আসে, আবার ভিতরে ঢুকে যায়।
৩য় পর্যায়ঃ মলত্যাগের সময় মাংসপিন্ড বাইরে বের হয়ে আসে, তা মলত্যাগের শেষে ভিতরে যায় না, হাত দিয়ে চাপ দিলে ভিতরে ঢুকে যায়।
৪র্থ পর্যায়ঃ মাংসপিন্ড সর্বদা বাইরে থাকে, কখনো ভিতরে ঢুকে না। যা মলত্যাগে বাধা প্রদান করে থাকে।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
মলত্যাগের সাথে রক্তপাত হলে, মল কালো বা লালচে হলে, মলত্যাগের সময় মাংসপিন্ড অনুভব হলে, মলদ্বারে ব্যথা হলে যত দ্রæত সম্ভব অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
রোগ নির্ণয়ঃ ১. সাধারণত সম্পূর্ণ মলদ্বারের পরীক্ষার জন্য ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন বা প্রক্টোসকপি বা আঙুল দিয়ে অর্শের অবস্থা, অবস্থান এবং পর্যায় নির্ণয় করা যায়। ২. অনেকসময় কলোনোস্কিপির সাহায্যে পরীক্ষা করা যায়।
ঝুঁকি/জটিলতাঃ সাধারণত লিভারের রোগী, আইবিএস, স্থূলকায় ব্যক্তি, মলদ্বারের আগের অপারেশন রোগী, বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সারের রোগী, বৃহদন্ত্রের প্রদাহজনিত কারণ ইত্যাদি রোগ থাকলে অর্শ হওয়ার ঝুঁকি বেশী থাকে। এক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে অর্শের কুশন বা বলিগুলো বড় হতে থাকে এবং নানাধিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
১) অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে রক্ত শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
২) মাংসপিন্ড বাইরে এসে বের হয়ে থাকার কারণে মলদ্বারে প্রচন্ড ব্যাথা, মলদ্বারে চুলকানী এবং আঠালো রস নিঃসৃত হতে থাকে।
৩) মাংসপিন্ডের ফলে রক্ত জমাট বেঁধে ব্যথা হতে পারে। কখনো পিন্ডটিতে প্রদাহ হতে পারে।
চিকিৎসাঃ
বিভিন্ন পর্যায়ের উপর নির্ভর করে অর্শের চিকিৎসা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে অর্শের সঠিক চিকিৎসায় অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন হয় না। অর্শের প্রাথমিক অবস্থাতেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে আশানুরূপ ফল পাওয়া সম্ভব। হোমিও চিকিৎসা রোগীর শারীরিক, মানসিক ও দৈহিক লক্ষনের উপর ভিত্তি করে ঔষধ প্রদান করা হয়। কোনো সমস্যা হলে দ্রæত একজন হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করে অর্শ হতে মুক্তি লাভ করুন।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। অর্শ যেহেতু জীবনধারা ও খাদ্যাভাসের সাথে অনেকাংশে জড়িত। তাই শৃঙ্খলিত জীবন যাপনই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। প্রতিরোধে আমাদের কি কি করণীয়?
১. পর্যাপ্ত পরিমানে আশজাতীয় খাবার ও শাকসবজি খেতে হবে।
২. প্রচুর পরিমানে পানি পান ও তরল খাবার খেতে হবে।
৩. মসলাজাতীয় খাবার, মাংস-মাছ কম খেতে হবে।
৪. চর্বিযুক্ত খাবার, আঁশবিহীন শস্য, চা, কফি, চিজ, মাখন, চকলেট, কোমল পানীয়, আইসক্রিম, ভাজা খাবার গ্রহণ হতে বিরত থাকতে হবে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
৬. নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস করতে হবে।
৭. মলত্যাগের সময় চাপ দেওয়া ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় বসে থাকা বদভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
৮. প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
৯. দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১০. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করতে হবে।
১১. শারীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১২. মল নরম করার ওষধ হরহামেশায় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৩. অর্শের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রæত চিকিৎসকের শারণাপন্ন হতে হবে।
কনসালট্যান্ট, রেনেসাঁ হ্যোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, সিটি কর্পোরেশন মাকেট, নিমতলী,
চানখাঁরপুল, ঢাকাÑ১০০০।
০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৭৯২৮৯৪
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।