Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাস্তাঘাট সচল রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২২, ১২:০৫ এএম

ঢাকায় যানজট নিত্যঘটনা। চট্টগ্রামেও প্রায় একই রকম। অন্যান্য বড় শহরও যানজটমুক্ত নয়। ঢাকার সব রাস্তাতেই যানজট লেগে থাকে। রাতদিন বলে কথা নেই; প্রায় সব সময়। আর কোনো উপলক্ষ যদি যুক্ত হয় তবে তো পথেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই যেমন গত পরশু শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে বনানীর বিআরটিএ ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতেই প্রথমে বনানী-মহাখালি এবং পরে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বনানী, গুলশান, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শহরের অন্যান্য এলাকায়ও এর জেরে যানজট দেখা দেয়। অপরিসীম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনায় পড়ে যাত্রীসাধারণ। ঢাকার অপ্রতিরোধ্য যানজটে প্রতিদিন কত কর্মঘণ্টা বিনষ্ট হয়, কত কোটি টাকার ক্ষতি হয়, তার ইয়ত্তা নেই। বছরের পর বছর ধরে এই ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। যানজটের পাশাপাশি নাগরিকবিড়ম্বনার আরো বিধিধ অনুষঙ্গ রয়েছে। ধুলা-বালি, ময়লা-কাদা ও আবর্জনার সঙ্গে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানি ও মাটি দূষণের মতো জনস্বাস্থ্যহানিকর দূষণের মধ্যেই এই শহরের অধিবাসীদের বসবাস করতে হচ্ছে। আসলে ঢাকা শহর দীর্ঘদিন বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে আছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উঠে এসেছে। গত দু’বছরেরও বেশি সময় করোনাকারণে ঢাকাসহ সারাদেশে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়েছে। চলাফেরা, যাতায়াত, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়া, অফিস-আদালত, নির্মাণ, উন্নয়ন সব কিছুতেই ব্যঘাত ঘটেছে, ক্ষতি হয়েছে। এখন অবশ্য করোনার প্রকোপ কমায় আস্তে আস্তে সবক্ষেত্রেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। অনেকেই একমত, করোনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে শিক্ষা এবং বিশেষত শিক্ষার্থীরা। অনেকেরই শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে। মানসিক সমস্যায়ও পড়েছে সব শ্রেণির বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী। করোনার পর নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতিও শিক্ষার্থীদের অনেকের ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে দিয়েছে। করোনাকারণে যেমন লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, তেমনি আর্থিক সামর্থের অভাবে নি¤œবিত্তের বহু শিক্ষার্থী এখন ঝরে পড়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

ঠিক এমনই এক প্রেক্ষাপটে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরীক উপস্থিতিতে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ দু’বছর পর স্বরূপে ফিরতে যাচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। এতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি শ্রেণিকার্যক্রম আংশিক চলছিল। এখন স্বাভাবিক সময়ের মতো শতভাগ ক্লাস ও পরীক্ষা হবে। লেখাপড়া পুরোদমে চলবে। ক্লাস হবে, পরীক্ষা হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য এর চেয়ে সুখবর আর কিছু হতে পারে না। অভিভাবকরাও খুশি। তবে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন: তারা ঠিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে ও বাসায় ফিরতে পারবে তো? যানজট তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো? এমন শংকা ঢাকাতেই তুলনামূলকভাবে বেশি। এখনই যানজটের যে অবস্থা, তাতে দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার শেষ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা একযোগে রাস্তায় বেরিয়ে এলে যানজট কী রূপ নিতে পারে, সহজেই অনুমেয়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা ব্যাহত তো হতেই পারে, একইসঙ্গে শহরের সব ধরনের নাগরিক, পেশাজীবী, যাতায়াতকারীও একটা বড় রকমের অচলাবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। সন্দেহ নেই, রাস্তার ওপর চাপ বাড়বে। বড় রাস্তাই কেবল নয়, ছোট রাস্তাও চাপমুক্ত থাকতে পারবে না। ঢাকা শহরজুড়েই স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান খুললে সর্বত্র যাতায়াতের প্রবাহ বাড়বে এবং যানজট প্রসারিত হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায়, কী করতে হবে কিংবা কী করা যায়, এ নিয়ে ভাবতে হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। রাস্তা-ফুটপাত উন্মুক্ত রাখা এবং যানবাহন ও লোকচলাচল নির্বাধ করার দায় তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। ফুটপাথ হকারদের দখলে চলে গেছে। রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা দোকানপাটের বাড়তি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুটপাত। রাস্তার একাংশও দখল হয়ে গেছে। রাস্তা ও ফুটপাতের এই সব দখল উচ্ছেদ করতে হবে, যাতে মানুষ স্বচ্ছন্দে রাস্তা ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে। রাস্তা-ফুটপাতে খানা-খন্দক ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে থাকতে দেখা যায়। এসব সারাতে ও সরাতে হবে দুই সিটি করপোরেশনকে। মেয়রদের লম্বা লম্বা কথা মানুষ শুনতে চায় না, কাজ দেখতে চায়। পরিচ্ছন্ন, তকতকে-ঝকঝকে বাসযোগ্য ঢাকা দেখতে চায় মানুষ।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পর আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী কর্র্তৃপক্ষের দায়িত্ব সর্বাধিক। রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা, অবৈধ দখলমুক্ত রাখা, যানচলাচল সুশৃংখল রাখা, পথচারী ও যাত্রী নিরাপত্তা দেখভাল করার দায়িত্ব আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, সড়কব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, ঢাকা শহরে তার অস্তিত্ব নেই। ট্রাফিকব্যবস্থা যাচ্ছেতাই। যানবাহন ব্যবস্থাপনাও অনুপস্থিত। এমন ব্যবস্থাপনাবিহীন শহরে যানবাহনের বিশৃংখল যাতায়াত, যানজট, দুর্ঘটনা যে স্বাভাবিক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্যই আধুনিক সড়ক, যানবাহন ও ট্রাফিকব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তাকে সব সময়ের জন্য সচল রাখতে হবে। নিরাপদ রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা স্ব স্ব দায়িত্বপালনে নিষ্ঠ, সৎ ও আন্তরিক হবে, এটাই কাম্য।



 

Show all comments
  • রফিকুল ইসলাম ১৫ মার্চ, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
    ছোটবেলায় কবিতা পড়েছিলাম ‘শহর শহর ঢাকা শহর, আজব শহর ঢাকা’। এই শহর আসলেই আজব শহর। এই শহরে যানজটে ধুঁকতে ধুঁকতে আমাদের জীবন যায় কিন্তু এর থেকে উত্তরণের রাস্তা নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • নুর নাহার আক্তার নিহার ১৫ মার্চ, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
    প্রতিদিন যানজটে থেকে আমাদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়াসহ শারীরিক, মানসিক ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু এ থেকে উত্তরণের উপায় নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • রেজাউল করিম ১৫ মার্চ, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
    ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী আর এই রাজধানীতে যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। দৃশ্যত শহরের অধিক জনসংখ্যা যানজটের কারণ মনে হলেও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার কারণে এই যানজট নিরসন সম্ভব হচ্ছে না। অব্যবস্থাপনার নমুনা পাওয়া যায় রাস্তায় নামলে। েএগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হাদী উজ্জামান ১৫ মার্চ, ২০২২, ৮:০৫ এএম says : 0
    হিসাব অনুযায়ী ১৮ লাখের বেশি যানবাহন চালাচ্ছেন ‘ভুয়া’ চালকরা। এই ভুয়া চালকরা কখনোই নিয়ন্ত্রিত বা সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালায় না। কারণ, তারা তো গাড়ি চালানোর যে সেই প্রক্রিয়া তার মধ্য দিয়েই যায়নি, তাই তারা খেয়ালখুশি মতো গাড়ি চালায় আর এতে করে প্রতিদিন অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনাসহ মারাত্মক প্রাণহানি হচ্ছে। এই ভুয়া চালকদের নির্ধারিত কোনও স্থান নেই। আজ তারা এই গাড়ি চালাচ্ছে তো কাল অন্য গাড়ি চালাচ্ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠানে চালকের চাকরি করছে তো কাল অন্য প্রতিষ্ঠানে চালকের চাকরি করছে। এসব ভুয়া চালক যেহেতু নিয়মতান্ত্রিকভাবে গাড়ি চালায় না, তাই তারা সড়কে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রাখে, যার কারণে সড়ক অস্থিতিশীল হয় এবং যানজট তৈরি হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • রক্তিম সূর্য ১৫ মার্চ, ২০২২, ৮:০৬ এএম says : 0
    একটি রুটে কতগুলো বাস চলাচল করতে পারবে তার হিসাব না করে শুধু বাসের রুট পারমিট দিলে তাতে যে চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে এই বিষয়টা বোঝার মতো জ্ঞান আমার ধারণা যারা রুট পারমিট দেন তাদেরও আছে। কিন্তু তারা কেন এইভাবে বিশৃঙ্খলভাবে যত্রতত্র বাসের রুট পারমিট দেন তা আমি বুঝি না।
    Total Reply(0) Reply
  • রুকাইয়া খাতুন ১৫ মার্চ, ২০২২, ৮:০৬ এএম says : 0
    একটি শহরে যখন এত অসুবিধা থাকে সড়কে তখন সেই শহরে যানজট সৃষ্টি হবে না তো কোথায় হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজনীন জাহান ১৫ মার্চ, ২০২২, ৮:০৭ এএম says : 0
    শুধু সদিচ্ছা এবং আন্তরিক আগ্রহ দিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে আমাদের যানজট দূর করা সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • সবুজ ১৫ মার্চ, ২০২২, ৯:৫৬ এএম says : 0
    রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা, অবৈধ দখলমুক্ত রাখা, যানচলাচল সুশৃংখল রাখা, পথচারী ও যাত্রী নিরাপত্তা দেখভাল করার দায়িত্ব আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, সড়কব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, ঢাকা শহরে তার অস্তিত্ব নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • নুরজাহান ১৫ মার্চ, ২০২২, ১০:০১ এএম says : 0
    যানজটের জন্য প্রশাসন ও ট্রাফিক জ্যাম দায়ি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন