চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলাম অর্থ শান্তি ও স্রষ্টার প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। ইসলাম নতুন ধর্ম নয়। মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম আ:-এর জীবনবিধান থেকেই ইসলাম শুরু। ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সর্বোত্তম শান্তি ও কল্যাণ। আর মুসলমান কথাটির অর্থ হলো সর্বোত্তম শান্তি ও কল্যাণ স্থাপনকারী এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণকারী। ইসলাম মানবতার ধর্ম। সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও সাম্যের সেতুবন্ধ ও মাইলফলক হলো ইসলাম। ন্যায়, সত্য ও ত্যাগের স্মরণিকা ইসলাম। ইসলাম মহান আল্লাহ পাকের দেয়া এক পূর্ণাঙ্গ পরিপূর্ণ ও প্রগতিশীল জীবনব্যবস্থা। ইসলাম ধর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান।
একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চালচলন, ওঠাবসা, আচার ব্যবহার, লেনদেন, সবকিছুই যখন প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য হয় তখন তাকে নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তি বলে। এ নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে রাসুল (সা.) সর্বোত্তম লোক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই উত্তম, যার চরিত্র উত্তম।’ (বোখারি ও মুসলিম) নৈতিকতা হলো ব্যক্তির মৌলিক মানবীয় গুণ এবং জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা অর্জন করলে তার জীবন সুন্দর ও উন্নত হয়। এর মাধ্যমে সে অর্জন করে সম্মান ও মর্যাদা। ইসলামের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া লাগামহীন ও চরিত্রহীন মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন- ‘তাদের হৃদয় আছে উপলব্ধি করে না, চোখ আছে দেখে না, কান আছে শোনে না; এরা হলো চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়, বরং তার থেকেও নিকৃষ্ট। আর এরাই হলো গাফিল। (সুরা আল আরাফ-১৭৯)।
ইসলামে নৈতিকতার গুরুত্ব : ইসলামের দৃষ্টিতে নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের নৈতিকতা ও চরিত্রকে সুন্দর ও মার্জিত করার বিষয়টা ইসলাম যে কত গুরুত্ব দিয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। ইসলাম ও নৈতিকতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ও অবিচ্ছেদ্য। ইসলাম থেকে নৈতিকতাকে আড়াল করা যায় না। ইসলামের মতে প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবী রাসুলই নৈতিকতার শিক্ষা প্রচার করেছেন। তাঁরা সবাই ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী। মহানবী (সা.) সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান উন্নত চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম : ৪)।
পৃথিবীতে যত নবী রাসুল এসেছেন তারা সবাই নিজ নিজ জাতির চরিত্র সংশোধন করেছেন, তাদের নৈতিক চরিত্র শিক্ষা দিয়েছেন। আর বিশ্বনবী (সা.) এসেছেন নৈতিক চরিত্রকে পূর্ণতা দান করার জন্য। তিনি বলেছেন, ‘উত্তম চারিত্রিক গুণাবলির পূর্ণতা দানের জন্যই আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে। (ইবনে মাজাহ) ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা ও মাপকাঠি হলো নৈতিক চরিত্র। মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ যার চরিত্র উত্তম। (বোখারি ও মুসলিম)।
কেয়ামতের দিন দুনিয়ার ধন-সম্পদ কাজে আসবে না, কাজে আসবে সুন্দর নৈতিক চরিত্র।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতে মোমিনের দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারি জিনিস হবে উত্তম নৈতিক চরিত্র।’ (তিরমিজি) এমনিভাবে জনৈক ব্যক্তি বিশ্বনবী (সা.) এর কাছে জানতে চাইলেন, মহান আল্লাহ মানুষকে অনেক কিছু দান করেছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান দান কোনটি? বিশ্বনবী (সা.) বললেন, ‘সবচেয়ে মূল্যবান দান সুন্দর চরিত্র।’ বস্তুত মানুষকে নৈতিক দিক থেকে পবিত্র ও শুদ্ধ রাখার ব্যাপারে ইসলাম ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো জীবন ব্যবস্থাই এত বেশি গুরুত্বারোপ করেনি। মানুষের শান্তি সমৃদ্ধি ও আখেরাতের মুক্তির একমাত্র শর্ত হিসেবে উত্তম ও পবিত্র চরিত্রকে নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন গুণটির জন্য আখেরাতে মানুষ সবচেয়ে বেশি জান্নাতে যাবে? তিনি বলেন, হুসনুল খুলুক বা উত্তম চরিত্র। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে, হুসনুল খুলুক অর্জন করার তৌফিক দান করুক। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।