পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টিকিটের দাম নিয়ে সউদী গমনেচ্ছুদের মধ্যে চরম অসন্তোষ
দূতাবাসে তথ্যাদি জমা দিতে প্রবাসী শ্রমিকদের চরম বিড়ম্বনা
বৈশ্বিক করোনা মহামারির পরে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সউদী আরবেই জনশক্তি রফতানিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি একদিনে ঢাকায় সউদী দূতাবাস ১২ হাজার ৩০০ ভিসা সরবরাহ করেছে। যা এখন পর্যন্ত এক দিনে দূতাবাসের ভিসা ইস্যুর নতুন রেকর্ড। গত ফেব্রæয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় সউদী দূতাবাস ৩৮ হাজার ভিসা ইস্যু করেছে। অবশ্য ২০২১ সালে ১ নভেম্বর এক দিনে সাড়ে ৮ হাজার ভিসা দেয়া হয়েছিল।
বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, করোনা মহামারির পর সউদী নিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে ৮০ ভাগ কর্মী নিচ্ছেন। আশা করছি আগামীতে এ ধারা বাহিকতা বজায় থাকবে। করোনা মহামারির মাঝেও নানা বাধা উপেক্ষা করে সউদী রাষ্ট্রদূতের সার্বিক তত্তাবধানে নিরলসভাবে সউদীগামী কর্মীদের হাজার হাজার ভিসা ইস্যু করে দূতাবাস এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭২টি দেশে কাজ নিয়ে যায় বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী যাচ্ছে সউদী আরবে। প্রতিবছর বাংলাদেশে থেকে আট থেকে ১০ লাখ কর্মী বিদেশে যান। এদের বেশিরভাগই যান অদক্ষ কর্মী হিসেবে। দেশটিতে প্রায় বিশ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। এদিকে, ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস সকল রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর হাল নাগাদ তথ্যাদি জমা দিতে গত সপ্তাহে নোটিশ জারি করেছে। এতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ তথ্যাদি নতুন করে জোগার করতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে মালিকরা। এতে দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিতে না পারায় অনেকের মেডিকেলের মেয়াদ চলে যাচ্ছে। দূতাবাসের নতুন ভবনের অদূরে পার্কের মধ্যে এজেন্সির মালিকরা জড়ো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারির পর সউদী আরবে বিভিন্ন খাতে বিশাল কর্মযোগ্য শুরু হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে জোরেশোরে কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে। কিন্ত বিমানসহ এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে ওয়ানওয়ে টিকিটের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি করায় টিকিটের টাকা জোগাতে কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। ফ্লাইট সঙ্কটের দরুণ ভিসাপ্রাপ্ত হাজার হাজার সউদীগামী কর্মী দেশটির কর্মস্থলে যেতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভ্রাতৃ-প্রতীম সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের চমৎকার সর্ম্পক বিরাজ করছে। এ সুবাধে সউদী নিয়োগকারীরা নারী-পুরুষ কর্মী নিয়োগে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশকে। দেশটির জাতীয় উন্নয়নে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। সউদী আরবের নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি কর্মীদের বেশি পছন্দ করেন। বিগত ৫ বছরে দেশটির বিভিন্ন খাতে সর্বমোট ১৪ লাখ বাংলাদেশিকে চাকরি লাভ করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত রাজকীয় সউদী দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দাহিলান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিএমইটি’র সূত্র মতে, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সউদী আরবে ৪৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪২ জন বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে শুধু সউদীতেই ৩ লাখ ৯৯ হাজার বাংলাদেশি নারী পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এদের মধ্যে শুধু নারী কর্মীই চাকরি লাভ করেছে ৬২ হাজার ৫৭৮ জন।
করোনা মহামারির কারণে সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি লাভ করায় ২০২১ সালে সউদী আরবে রেকর্ড পরিমাণ বাংলাদেশি কর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে। ২০২১ সালে দেশটির বিভিন্ন খাতে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন বাংলাদেশি নারী পুরুষ চাকরি লাভ করেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে সউদীতে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯৮ জন এবং ফেব্রæয়ারি মাসে ৯২ হাজার ৫৬৯ হাজার কর্মী চাকরি লাভ করেছে। উল্লেখিত দু’মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৭ হাজার ৪৭০ জন, ওমানে ২৭ হাজার ২২৮ জন, সিঙ্গাপুরে ৬ হাজার ৬৬৭ জন এবং জর্ডানে ৩ হাজার ২৭ জন চাকরি লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, সউদী আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সউদী সফর শুধু দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমÐলে মর্যাদার আসনে তুলে ধরতে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেছিল। শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশের সরকার প্রধানই নন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং অব্যাহত সাফল্য তাকে বিশ্বনেতায় পরিণত করেছে। এমন একজন বিশ্বনেতার সউদী সফরকালে দেশটির পক্ষ থেকে ছিল উষ্ণ ও রাজকীয় সম্মান। বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ উড়োজাহাজটি পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সম্মান ও গার্ড অব অনারের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছিলেন সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আব্দুল আজিজ।
ওই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সউদী সরকার যে সম্মান দেখিয়েছিল তা এককথায় বিরল। সউদী বাদশাহের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ছিল অত্যন্ত খোলামেলা ও আন্তরিকতাপূর্ণ। বাদশাহ সালমান বাংলাদেশকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটি শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেন। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও ঐক্যের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে উঠে আসে আমাদের সঙ্গে সউদী আরবের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়গুলো। দু’দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাদশাহ সউদী সরকারের আগ্রহের কথা জানান।
এরপর থেকেই দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ কর্মী নিয়োগের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বাড়তে থাকে। সউদী সফরকালে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দু’টি মসজিদের নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশ সউদী সরকারকে যে কোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে মর্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সউদী বাদশাহকে জানান। বাংলাদেশ হতে আরও অধিক সংখ্যক দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মীসহ পেশাজীবী যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক নিয়োগের জন্য সউদী বাদশাহের প্রতি আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। সউদী বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পকের ক্ষেত্রে একটি নবযুগের সূচনা করে।
এদিকে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দাহিলান তাঁর দফতরে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গত ২৪ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় সউদী দূতাবাস ১২ হাজার ৩০০ ভিসা দিয়েছে, যা এ পর্যন্ত এক দিনে দূতাবাসের ভিসা ইস্যুর নতুন রেকর্ড। আর ফেব্রæয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় সউদী দূতাবাস ৩৮ হাজার ভিসা ইস্যু করেছে। মূলত সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফর সামনে রেখে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
ঈসা বিন ইউসুফ আল দাহিলান বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের আমন্ত্রণে সউদী আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সাউদ আগামী ১৬ মার্চ ঢাকায় আসছেন। এ সময় তিনি দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নেবেন। বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি সম্ভাব্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে সউদী আরবের সম্পর্কের বড় ক্ষেত্র হচ্ছে জনশক্তি রফতানি। এ প্রসঙ্গে সউদী রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন খাতে অন্তত ২৩ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন। করোনা সংক্রমণের কারণে জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকলেও সউদীতে বাংলাদেশের কর্মীদের নিয়োগ থেমে থাকেনি। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ঢাকায় সউদী দূতাবাসের ভিসা দেয়ার হার বাড়ার প্রসঙ্গ টেনে ঈসা বিন ইউসুফ আল দাহিলান বলেন, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ১৪ লাখের বেশি কর্মীর জন্য সউদী ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সউদী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার প্রসঙ্গে টেনে সউদী রাষ্ট্রদূত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে আলোচনা হলেও কাঙ্খিত মাত্রায় বিনিয়োগ হয়নি। নিকট ভবিষ্যতে ২৩টি বড় কোম্পানি একসঙ্গে বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সউদী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তেল শোধনাগার, পেট্রোকেমিক্যালস, এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দর ও পোতাশ্রয় নির্মাণ, সামরিক ও বেসামরিক উড়োজাহাজ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সউদী পরিবহনমন্ত্রী সালাহ আল জাসেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। ওই সময় একটি সউদী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান প্রকৌশল খাতে ১৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সউদী আরবের জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একুয়া পাওয়ার বাংলাদেশে সাড়ে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ৭০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া সউদী আরবের বন্দর ব্যবস্থাপনায় যুক্ত রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশে ১২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
সউদীর পাশাপাশি কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালদ্বীপ এক সময় বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার ছিল। এখনো এসব দেশে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে অনেক বাংলাদেশি কাজ করছে। বৈধভাবে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বলিভিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীরা যেতে শুরু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।