Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নাব্যতা সঙ্কট নাকি পরিত্যক্ত জাহাজ!

নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদে কার্গোডুবির কারণ জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও বিআইডব্লিউটিএ দ্বিমুখী বক্তব্য

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া নদী বন্দর এলাকায় ভৈরব নদে একের পর এক কার্গো ডুবির ঘটনায় জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও বিআইডব্লিউটিএর দ্বিমুখী বক্তব্য পাওয়া গেছে। জাহাজ ডুবির ঘটনায় বারবারই একে অপরকে দোষারোপ করলেও প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সেইসাথে জায়গার তুলনায় যত্রতত্র ইচ্ছামাফিক ঘাট নির্মিত হওয়ায় বন্দর এলাকায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
একইস্থানে একাধিক ঘাট নির্মিত হওয়ায় জাহাজ ভেড়াতেও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন মাস্টাররা। এদিকে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তীরবর্তী এলাকায় চর জেগে উঠায় জাহাজ ভেড়ানো দুরুহ হয়ে উঠেছে। যদিও নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে বিআইডব্লিউটিএ এর নিজস্ব দুইটি ড্রেজিং মেশিন প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস যাবৎ অব্যাহতভাবে নদী খনন করে চলেছে। তবে এ খনন কার্য নিয়ে রয়েছে নানামুখী সমালোচনা। অভিযোগ রয়েছে, খননের নামে ড্রেজিং মেশিন দুটি অধিকাংশ সময় বন্ধ করে রাখা হয়।
এছাড়া অজ্ঞাত কারণে বড় বড় ঘাট মালিক ও ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী ও ঘাট মালিকদের ঘাটের স্থানগুলো ড্রেজিং করা হচ্ছে। ফলে যত্রতত্র ডেজিংয়ের কারণে নদী নাব্যতা হারাচ্ছে। এদিকে একের পর এক সার ও কয়লা বোঝাই কার্গো ডুবির ঘটনায় মারাত্মকভাবে দূষনের শিকার হচ্ছে নদীর পানি। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জীব বৈচিত্র্য। যদিও কার্গো জাহাজ কর্তৃপক্ষ ভৈরব নদে কার্গো ডুবির ঘটনায় বরাবরই নদের নাব্যতা হ্রাসকেই দায়ী করে আসছেন। সেই সাথে বিআইডব্লিউটিএ এর উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন তারা। অপরদিকে বিআইডব্লিউটিএ এর দাবি পরিত্যক্ত ও কাগজপত্রবিহীন কার্গোতে অতিরিক্ত লোড বোঝাইয়ের কারণে জাহাজে ফাটল সৃষ্টি হয়ে তা তলিয়ে যাচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হয়নি কখনও। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ এর বিরুদ্ধে যত্রতত্র ঘাটের ইজারা দিয়ে নদী বন্দর এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক জাহাজ মাস্টার অভিযোগ করেছেন, যত্রতত্র ঘাট গড়ে উঠায় জাহাজ ভেড়াতে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি ১৩৫০ টন কয়লা নিয়ে ভৈরব নদে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজের মালিক আব্দুল জলিল জানান, পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর মাঝ বরাবর জাহাজটি আটকে যায়। সেখান থেকে জাহাজ সরাতে গিয়েই তলদেশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে জাহাজটি তলিয়ে গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল জলিল বলেন, কিছু দিন আগেই কার্গো জাহাজটি ডক ইয়ার্ড থেকে নদীতে নামানো হয়েছে। সকল কাগজপত্র রয়েছে। জাহাজের ত্রুটির কারণে কার্গো ডুবির ঘটনা আদৌ ঘটেনি। তাছাড়া জাহাজটি বিআইডব্লিউটিসি থেকে ইজারা নিয়ে তিনি চালাচ্ছেন বলেও দাবি করেন।
নওয়াপাড়া নদী বন্দরে নোঙর করা এমভি ওয়াটার ড্রাইভ-০১ ঢাকা কার্গো জাহাজের মাস্টার শামিম হোসেন জানান, নদী অপেক্ষা বন্দরে জাহাজের অতিরিক্ত চাপ থাকে। সেইসাথে ঘাটগুলো একেবারেই কাছাকাছি হওয়ায় কার্গো ভেড়াতে সমস্যা হয়। এমভি নদীর মায়া কার্গো জাহাজের মাস্টার তানজিল আহমেদ রিমন জানান, নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে এবং নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হওয়ায় গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং সুষ্ঠুভাবে ড্রেজিং না হওয়ায় জাহাজ আটকে তলা ফেঁটে যায়। তাছাড়া জায়গা সংকটের কারণে সিরিয়ালে একসাথে চার-পাঁচটি জাহাজ বেঁধে রাখায় জাহাজ সরাতে গেলে একে অপরের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জাহাজের মাস্টার ও ঘাট মালিকরা অভিযোগ করেছেন, বেছে বেছে প্রভাবশালী ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের ঘাটগুলো ড্রেজিং করায় অন্যান্য ঘাটগুলোতে সমস্যা বাড়ছে। ড্রেজার চালককে সন্তুষ্ট করে একশ্রেণির ঘাট মালিকরা তাদের ঘাটগুলো ড্রেজিং করিয়ে নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মাসুদ পারভেজ ড্রেজিং সম্পর্কিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, নদীর নাব্যতা সংকট রোধে ড্রেজিং কার্যক্রম বেগবান করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে দুইটি কার্গো জাহাজ ডুবির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিত্যাক্ত ও ফিটনেসবিহীন কার্গো জাহাজে অতিরিক্ত লোড দেয়ার কারণে জাহাজে ফাটল সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে।
এক প্রশ্নে বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক বলেন, ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজটি ফিটনেসবিহীন এবং তাদের কোনো কাগজপত্রও নেই। জাহাজটির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ