মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মস্কোতে বসন্ত শুরু হয়েছে। গাছে কুঁড়ি ফুটছে প্রতিদিন ঝলমলে রোদ উঠছে। এরকম আবহাওয়ায় মস্কোবাসির যে উচ্ছ্বাস আনন্দ থাকার কথা সেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মস্কোর সর্বত্র বইছে এক নীরবতার সুর। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ। শপিং সেন্টারে লোক সমাগম আগের চাইতে অনেক কম।
গত কয়েক দিন রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) অথবা ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে মস্কোতে তেমন একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। জীবন গতি স্বাভাবিকই চলছিলো। মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বিশ্বের ব্যাংক লেনদেনের ব্যবস্থা 'সুইফট' থেকে একের পর এক রুশ ব্যাংককে বহিষ্কার করা শুরু হলে মস্কোবাসীর মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। কেবল অর্থনৈতিকভাবেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পরে রাশিয়া এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে একঘরে, বা সমাজ বন্ধ। নানা রকম স্যাংশনে রাশিয়া জর্জরিত। এখন দেখার বিষয়, এই স্যাংশনে রাশিয়ার জীবনে কী প্রভাব পড়ছে বা পড়তে পারে এবং এই স্যাংশন তারা কিভাবে মোকাবিলা করবে। শুরুতে বলে নেয়া ভাল, এই স্যাংশন রাশিয়ার জন্য নতুন কিছু নয়, তবে এবারকার স্যাংশন পূর্বের যেকোনো স্যাংশনের চাইতে ভিন্ন রকম। এবারে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান অনেক কিছুই এবার স্যাংশনের আওতাভুক্ত। বলা যায় পুরো রাশিয়াকে পৃথিবী থেকে একঘরে করে ফেলা হয়েছে।
স্যাংশনের প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে রাশিয়ান জীবনে। হয়তো এর প্রভাব আরো সুদূর প্রসারিত হবে। গত সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপের শুরুর দিকে মস্কোর সাধারণ মানুষ মনে করেছিল তাদের গচ্ছিত অর্থ ব্যাংক থেকে নাই হয়ে যাবে এবং একটি গুজব রটেছিল যে ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করে সেই অর্থ ইউক্রেনীয়দের সাহায্যের জন্য পাঠানো হবে। তাই সকলের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পরে যায়।
বেশ কয়েকদিন ধরে, রাশিয়ার আশেপাশে এটিএম-এর কাছে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছিল যখন লোকেরা ইলেকট্রনিক ব্যাঙ্কিংয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কার মধ্যে পড়েছিল - বৈদেশিক মুদ্রা এবং রুবল উভয়ই - নগদ তুলতে ছুটেছিল৷ সেই আতঙ্ক এখন আর নেই। মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জেরও পতন হয়েছিল। স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ ছিল কয়েক দিন। বুধবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এখন আবার স্টক এক্সচেঞ্জ চলছে। অনেক লোক ভেবেছিল তাদের সঞ্চয় হারিয়েছে। রুবলের মান রেকর্ড পরিমাণ কমে ছিল। ডলার এর দাম গত কয়েক দিনে ৭৫ থেকে ১১০ রুবল হয়েছে। রুবলের দাম কমে গিয়েছে।
অনেকে মনে করছে রুবল ইনকাম করার আর কোন মানে নাই। তবে রুবলের দরপতন ঠেকাতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে। ক্রেমলিন সব রাশিয়ানদের বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তর নিষিদ্ধ করেছে এবং রপ্তানিকারকদের তাদের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের ৪০% রুবলে বিনিময় করার নির্দেশ দিয়েছে। এখানকার বহুল ব্যবহৃত ব্যাংক এসবিআরকেও স্যাংশন দেয়াতে সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছিলো। তবে এখন মস্কোবাসী সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠছে। কিন্তু এর মধ্যে ভিসা আর মাস্টার কার্ড রাশিয়াতে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়াতে ভিসা বা মাস্টারকার্ড আর কার্যকর নেই। এখানে প্রায় সবাই কার্ডের মাধ্যমে ট্রানজেকশন করে। তাই অনলাইনে কেনাকাটা, মানি ট্রান্সফার এমন কী বাজারের কেনাকাটাতে মস্কোবাসীর আরেক ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। এখানকার নিজস্ব ব্যাংকিং সিস্টেম "মির"-এর একাউন্ট করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তবে মির কার্ড কেবল রাশিয়াতেই কার্যকর।
অনেকে মনে করেছিল বাজারে খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে এবং খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দিবে। তাই অনেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বেশি করে কিনে রাখতে দেখা গেছে। কিন্তু বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম তেমন একটা বাড়েনি। রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বড় সুপারমার্কেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুগ্ধ এবং বেকারি পণ্য, চিনি এবং শাকসবজির দাম ৫% এর বেশি বাড়ানো যাবে না। তাই সুপারমার্কেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে তেমন কোন হেরফের হয়নি। কিন্তু আশংকা হচ্ছে যেসব সবজি, মসলা চাল ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো সেগুলোর আমদানি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে আমাদের বেশি দাম দিতে হবে। অতীতের নিষেধাজ্ঞার পরে, দেশটি প্রধানত খাদ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন গড়ে তুলেছিল। তবে রাশিয়া এখনও প্রযুক্তি, ওষুধ এবং অন্যান্য আমদানির উপর নির্ভর করে।
এছাড়া শেল, মার্সিডিজ-বেঞ্জ এর মত বিখ্যাত কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে যারা বছরের পর বছর ধরে রাশিয়াকে তেল, গ্যাস এবং গাড়ি উৎপাদনে সাহায্য করে আসছিল। এগুলো হয়ত রাশিয়ার ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে কিন্তু ছোট এবং তাৎক্ষনিক অনেক অসুবিধার মধ্যে একটি হলো, APPLE PAY এবং GOOGLE PAY রাশিয়াতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে - যেগুলি আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার তালিকায় একটি ব্যাঙ্ক দ্বারা পরিচালিত৷ রুশবাসী ভ্রমণপ্রিয় জাতি। গ্রীষ্মকাল ঘিরে সারা বছর তারা কাজ করে আর সামারের তিনমাস ছুটিতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায়। সামনে সামার উপলক্ষে যে ভ্রমণের প্ল্যান এরা করেছিলো সেটা বাতিল করতে হচ্ছে। রাশিয়ান বিমানগুলিকে আকাশপথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরে AEROFLOT, রাশিয়ার জাতীয় বিমান সংস্থা, সকল আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বোঝাই যাচ্ছে এক নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে রাশিয়া। তবে এত এত নিষেধাজ্ঞার পরে মস্কোবাসীর বা রাশিয়ানদের যতটা উদ্বিগ্ন হবার কথা ছিল ততটা উদ্বেগ প্রবীণদের মাঝে দেখা যাচ্ছে না। সুপারমার্কেটে এক বয়স্ক ভদ্রলোক বলছিলেন, 'এসব আমাদের জানা। আমেরিকানদের আক্রোশ আমাদের প্রতি নতুন কিছু নয়।' তবে এখানে প্রবীণ এবং নবীন প্রজন্মের মধ্যে চিন্তায় তুমুল পার্থক্য আছে। প্রাচীনপন্থীরা অন্য বিশ্বে কী হচ্ছে সে বিষয় নিয়ে এদের তেমন মাথা ব্যথা নাই।
এখানকার অধিকাংশ মানুষ ইংরেজি ভাষা জানে না যার ফলে বহির্বিশ্বে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ তাদের কম। কিন্তু এখানকার যারা ইংরেজি জানে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, তারা অনেকেই শুরু থেকেই এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তারা মনে করে এই স্যাংশনের কারণে তারা যে কেবল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে কেবল সেটা নয়, বরং সামাজিক কারণও আছে। অন্য পৃথিবীর মানুষের কাছে এটি তাদের সামাজিক লজ্জা হিসেবে তারা বিবেচনা করছে। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।