চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মোহাম্মদ আবুল হোসেন : পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল, মিঠা নদীর পানি আরো অগণিত-অফুরন্ত নেয়ামত সৃষ্টি করার পর নিজ কুদরতি হাত দিয়ে তার প্রিয় প্রতিনিধি হজরত আদম (আ.) তথা মানুষ সৃষ্টি করেন। (সূরা আল বাকারা : আয়াত ৩০)। প্রতিনিধির আভিধানিক অর্থ “কারুর পরিবর্তে কাজ করার জন্য নিযুক্ত ব্যক্তি”। যেমন সরকারের নিযুক্ত একজন জেলা প্রশাসক সরকারের প্রতিনিধি। সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনা কাজ, আইন সুষ্ঠ এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করাই জেলা প্রশাসকের কাজ। ঠিক তেমনি মনুষ্য জীবনের সর্ব অবস্থায় সর্বক্ষেত্রে সর্ববিষয়ে আল্লাহর আইন আল্লাহর শাসন প্রচার-প্রসার ও সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করাই আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কাজ। আমাদের এ কাজের বিষয়ে বিধি-বিধান ও আমাদের জীবনে সর্ববিষয়ের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে (সূরা আলবাকারা : আয়াত-৩৮) পরম দয়াময় দয়ালু আল্লাহ তায়ালা। আল কোরআনে দেওয়া সার্বিক দিক নির্দেশনা অনুসারে কিভাবে জীবন যাপন করতে হবে কিভাবে আল্লাহর প্রতিনিধির কাজ করতে হবে তা হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার নিমিত্তে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন শ্রেষ্ঠ নবী মহামানব আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে (সূরা আলবাকারা : আয়াত-৩৮)।
মহানবী ছিলেন পরম সত্যবাদি, সৎ, নিষ্ঠাবান, পরোপকারী, দয়ালু, ক্ষমাশীল ইত্যাদি সমস্ত সৎ গুণাবলীর ভা-ার। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ মানব। ব্যক্তি জীবনে আল্লাহ আল কোরআনে যা করতে বলেছেন তিনি তাই করতেন এবং আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তিনি তা করতেন না। তিনি সমস্ত কাজ, হাঁটা-চলা, ওঠা-বসা, খাওয়া-পরা, কথাবার্তা, আচার-আচরণ, ব্যবহার আল কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক করতেন। তাই তাঁকে জীবন্ত কোরআন বলা হতো। তিনি ছিলেন একজন ব্যক্তি, গৃহকর্তা, সমাজপতি, চাকরিজীবী, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, বিচারপতি, সেনাপতি, জগতের সেরা রাজনীতিবিদ, সর্বোপরি রাষ্ট্রপতি। তিনি তাঁর ব্যক্তি জীবনের, কর্মজীবনের সর্ব অবস্থানে-সর্বস্তরে সবার কাছে আল্লাহর আইন আল্লাহর শাসন প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা করে সবার ব্যক্তি জীবনে, সংসারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে তথা দেশের সর্বত্র সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নতি সমৃদ্ধি সাধন করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রতিনিধিগণ স্পেন থেকে ইন্দোনেশিয়া ইথিয়পিয়া থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্ত সর্বত্র আল্লাহর আইন আল্লাহর শাসন প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আল কোরআনের আলো বাংলাদেশেও।
হজরত মোহাম্মদ (সা.) আমাদের নেতা-একমাত্র নেতা। আমরা তাঁকেই অনুসরণ-অনুকরণ করব সর্ব বিষয়ে, সর্ব কাজে। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কিভাবে, কেমন করে কাজ করব সে বিষয়েও শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরাও আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে, সর্ব অবস্থায়, সব কাজে-কর্মে প্রচার-প্রসার, প্রতিষ্ঠা করব আল্লাহর আইন, আল্লাহর শাসন। প্রত্যেকের জীবনে, প্রতিটি সংসারে, সমাজে, সর্বত্র তথা সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহর আইন, আল্লাহর শাসন, সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি। থাকবে না শোষণ, লুণ্ঠন, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, যুলুম, নির্যাতন, অধিকার হরণের সুড়ঙ্গ পথ।
কিন্তু অতীব দুঃখ ও লজ্জার ব্যাপার আমরা অনেকেই আল্লাহ, রাসূল (সা.), আল কোরআন, হাদিস, আল্লাহর প্রতিনিধি, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, সৎ কাজের সাথে আল্লাহর প্রতিনিধির সম্পর্ক কি তার কিছুই জানি না। ফলে আমাদের কলেমা আমাদেরকে ঈমানদার বানাতে পারে না। নামাজ আমাদেরকে অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না, রোজা আমাদেরকে তাকওয়া শেখায় না, হজ, যাকাত, সৎ কাজ আল্লাহতে আত্মসমর্পণকারী বানাতে পারে না। ক্ষমার অযোগ্য এ অজ্ঞতা, অজ্ঞানতা, উদাসীনতা, আলেম সমাজের দলাদলি, আবু জেহেল, আবু লাহাবদের উত্তরসূরি দেশি-বিদেশি গভীর চক্রান্ত ষড়যন্ত্র আমাদেরকে ধ্বংসের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে। ত্যাগ, তিতিক্ষা, দুঃখ-কষ্ট, কোরবানিহীন আয়েশি গতানুগতিক মিলাদ, মাহফিল, ধর্মসভা, বক্তৃতা-বিবৃতি, উরশ শরীফ, রেডিও ও টিভিতে টকশো, তবলিগ, খবরের কাগজে লেখালেখিতে এ অবস্থার প্রতিকার-পরিবর্তন হয়নি, হচ্ছে না।
সবরকমের দলাদলি ভুলে যেয়ে, প্রলোভনের ফাঁদে না পড়ে শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামা, পীর মাশায়েখগণকেই যুযোপযোগী ও কার্যকরী পথ ও পন্থা ঠিক করে অবস্থা উত্তরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। “ ... আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন-মরণ বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্য” (সূরা আনআম : আয়াত-১৬২) আল্লাহ তায়ালার আদেশের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরম শ্রদ্ধেয় পাঠকগণের কাছে অধম লেখকের বিনীত প্রস্তাবÑ সময়ের দাবি গদি, হুজরাখানা, ওয়াজ মাহফিল মিলাদ, টকশো এবং সংসার থেকে সময় বের করে নিয়ে বছরে অন্তত একমাস শহরে, নগরে, বন্দরে, গ্রামেগঞ্জে, হাটে, মাঠে, ঘাটে, বাজারে, ক্ষেতে-খামারে, স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, এমনকি বাড়ি বাড়ি যেয়ে সাধারণ শিক্ষিত, অশিক্ষিত, চাষি, মজুর, কামার, কুমার, সুতার, মিস্ত্রি, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, ধনী, দরিদ্র সবার কাছে ছুটে যাই। তাদের সুদিনে-দুর্দিনে পাশে থেকে উপকার করি, আর আল কোরআনের ও হাদিসের বাণী, আল্লাহ, রাসূল (সা.) এবং বিশেষ করে বলি “আপনি, আমি, আমরা সবাই আল্লাহর প্রতিনিধি।
আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা সবাইকে বলি।” আরো বলি “আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে সঠিকভাবে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পুরস্কারই জান্নাত। আর আল্লাহর প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন না করলে আল্লাহর অসন্তুষ্টির শাস্তি জাহান্নাম।” (সূরা আলবাকারা : আয়াত ৩৮,৩৯)।
লাখ লাখ নায়েবে রাসূল (সা.) আশেকে রাসূল (সা.), হাজী, গাজী, পীর মুর্শেদ, খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জেন, ইসলাম দরদি ভাই-বোন সবাই নিজেদের শ্রম, সামর্থ্য, মেধা, ত্যাগ, কোরবানি দিয়ে সত্যিকার অর্থেই আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আন্তরিকভাবে যদি চেষ্টা করি ইনশা আল্লাহ সারাদেশের মানুষ আল কোরআনের আলোকে হবে আলোকিত, হবে আল্লাহর প্রকৃত প্রতিনিধি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।