পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধর্ষণ মামলা আইনে পরিবর্তন আসছে। এ আইনে পরিবর্তন করতে একটি খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান-সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশের জন্য সারসংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জামা দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১৫০ বছরের পূর্বের এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারার ৪ উপধারার ভিত্তিতে ধর্ষণের অভিযোগ মামলা হয়ে আসছে। এতে ধর্ষণের শিকার ভিকটিমকে তার নৈতিক চরিত্র হরনের শিকার হতে হয়েছিল। ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে চরিত্র এবং অতীত ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করার সম্পর্কিত বিধান বাতিল করা হচ্ছে। পুলিশের জেরা করার ক্ষমতা আর আইনে থাকছে না। মন্ত্রিপরিষদ খসড়া আইন যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলে জানা গেছে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত পাঠানো আইনের সার-সংক্ষেপে বলা হয়, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য চিহিৃতকরণ ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ, প্রমাণের দায়ভার, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি ও আদালতের সাক্ষ্য উপস্থাপনসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণ করা লক্ষ্যে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট)-১৮৭২ আইন প্রণয়ন করা হয়। সাক্ষ্য সম্পর্কিত এ রুপ বিধিবদ্ধ একক আইন এই উপমহাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। ১৫০ বছরে আগে প্রণীত আইনটি বর্তমান সময়ে কার্যকরভাবে প্রাসঙ্গিক হলেও বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশন একটি নতুন বাস্তবতা এবং এ বাস্তবতার নিরিখে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট)-১৮৭২ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যমান এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) ১৮৭২ অনুযায়ী ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে জেরাকালে তার চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। যা নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর ও আইনের চোখে সমতা নীতি পরিপন্থি। এমতাবস্থায়, বিদ্যামান এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) ১৮৭২ আইন সংশোধন করে ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা সম্পর্কিত বিধানটি বিলুপ্ত করা আবশ্যক।
এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) ১৮৭২ ইংরাজি ভাষায় প্রণীত। ওই আইনের বিভিন্ন ধারা বা গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তিসমূহ উচ্চ আদালত বিষয়টি ইংরেজি ভাষায় ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে নজির আকারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাক্ষ্য আইন বাংলা ভাষায় নতুন করে প্রণয়ন করা হলে উচ্চ আদালতের রায়ে ব্যবহৃত অভিব্যক্তিসমূহ পুনরায় ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতে পারে যা পরবর্তীতে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) ১৮৭২ আইনটি ইংরেজি ভাষায় থাকা সমীচীন হবে। বিচারকার্যে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে সম্পাদানের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ২০২২-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীর মাধ্যমে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক পদার্থ বা বস্তুসমূহকে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করে তার গ্রহণযোগতা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধান বিদ্যমান আইনে সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে তার চরিত্র সম্পর্কে জেরা করা সম্পর্কিত বিধান বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক সাক্ষ্য-সংক্রান্ত বিধান এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) ১৮৭২-এ সংযোজন করা হলে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে বিচারকার্য নিম্পত্তি করার হবে।
এর আগে খসড়া আইনটি নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, অ্যাটর্নি-জেনারেলের কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টারস, সিআইডি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ, বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইনজীবীদের উপস্থিততে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইটির ওপর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া হয়েছে। এছাড়া খসড়া আইনটি প্রস্তুত কালে দেশের সাক্ষ্য আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে তা চিঠিতে বলা হয়েছে।
এদিকে গত ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নেতৃত্বে বিডব্লিউএইচসি, মেরী স্টোপস এবং আমরাই পারি জোটের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সখী প্রকল্পের অধীনে এ পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়।
পরামর্শ সভায় আলোচকরা বলেছেন, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারার ৪ উপধারার ভিত্তিতে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করা হচ্ছে। এতে ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র এবং অতীত ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। আসামিপক্ষের আইনজীবী ধর্ষণের শিকার নারীর নৈতিক চরিত্র হরণ করে যেসব প্রশ্ন করেন, তা আরেকবার ধর্ষণের শামিল। তাই আইনের এই উপধারা বাতিল করতে হবে। এই উপধারা বাতিলের পক্ষে বহুবার মতামত দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিসহ আইন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এটি বাতিলের সুপারিশও করেছেন। এখন পর্যন্ত এ ধরনের উপধারা কীভাবে বহাল থাকে, তাই সবার কাছে বড় প্রশ্ন।
‘বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলার বিচারে চারিত্রিক সাক্ষ্যের ব্যবহার’ বিষয়ক এই পরামর্শ সভায় অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন বিচারপতিসহ আইন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং বিভিন্ন সংগঠনের মানবাধিকারকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ধর্ষকের চরিত্র কেমন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। কিন্তু ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র জানার জন্য প্রশ্ন করা হয়। তাই এ ধরনের ধারা ও উপধারা বাতিল করতে হবে। অবশ্য তিনি বলেছেন, বিদ্যমান আইন ও বিধির মধ্যে থেকেও যেকোনো ধরনের হয়রানি থেকে নারীকে উদ্ধার করার দায়িত্ব আদালত এবং বিচারকের। আইনজীবী পরিশীলিত প্রশ্ন না করলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বিচারক। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ১৭ বছর আগে যখন আইনজীবী ছিলাম, তখন আমরাও বলতাম মেডিক্যাল প্রতিবেদনে ধর্ষণ প্রমাণিত না হলে মামলা টেকে না। কিন্তু মেডিক্যাল প্রতিবেদনে ধর্ষণের কথা নেই, এ ধরনের অনেক মামলায় বিচারক যথাযথ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আসামিকে শাস্তি দিয়েছেন। আদালত একজনের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে আসামিকে ফাঁসির সাজাও দিতে পারেন।
বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, দেড়শ’ বছরের আইনি প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণের সময় আবারও প্রায় ধর্ষণের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ধর্ষকের ধর্ষণ করার ইতিহাস আছে কি-না বা প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু তা হচ্ছে না। সম্প্রতি উচ্চ স্তরের একজন আইনজীবীও এক টকশোতে বলেছেন, ধর্ষণ কখনো একতরফা হয় না। ধর্ষণের শিকার নারীর বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটতে হবে।
আলোচনায় ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারার ৪ উপধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যিনি অভিযোগকারী, তার চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে। অন্য কোনো আইনে এ ধরনের কোনো নজির নেই।
পরামর্শ সভায় ব্লাস্টের সমন্বয়কারী (গবেষণা ও ডকুমেন্টেশন) নাওমী নাজ চৌধুরী ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালে বিভিন্ন ধর্ষণ মামলার রায় পর্যালোচনা করে তৈরি করা প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন মামলার রায়ে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি যৌনকাজে ‘অভ্যস্ত’, ‘চঞ্চল’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণ প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য আইনের এ ধরনের ধারা বাতিল করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।