Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অধিগ্রহণ করা জমির অর্থ দ্রুত ছাড় দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

এনইসি বৈঠকে ২ লাখ সাড়ে ৭ হাজার কোটির উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন : বরাদ্দ কমেছে রূপপুর ও মেট্রোরেলে, বেড়েছে পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

অধিগ্রহণ করা জমির অর্থ দ্রুত ছাড় দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অধিগ্রহণ করা জমির টাকা মানুষ যাতে দ্রুত পায় সে জন্য অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করতে হবে। একই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা কমাতে হবে। কোথাও জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করা হলে আগেই সেখানকার ছবি তুলে রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোপনে ছবি তুলে রাখার কারন হলো, যাতে পরবর্তীতে অধিগ্রহণের খবর শুনে মানুষ বাড়ী-ঘর কিংবা কোন গাছপালা লাগাতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোন অবকাঠানো বা রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বৈদ্যুতিক খুটি বা অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস সরানোর জন্য আলাদা কোন প্রকল্পের প্রয়োজন নেই। কেননা দেখা যাবে, এই প্রকল্প দেখভাল করতেই আবার প্রকল্প নিতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে তিনি এমন নির্দেশ দেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভাচুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এনইসি বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি)। মূল এডিপি থেকে এই অর্থ কমিয়ে আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। শুরুতে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে সার্বিক বরাদ্দ কমছে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আরএডিপিতে খাত ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে। প্রকল্প ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে রূপপুর পারমাকি বিদ্যুৎ প্রকল্প। অবশ্য আরএডিপি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়েছে। এর বাইরেও চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৫৬৭ কোটি টাকা। তবে পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রায় দ্বিগুণ ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব প্রদতীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমসহ অন্য সদস্যরা।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এনইসি বৈঠকে আমরা আর্থিক ৬টি খাতের শক্তিশালী অবস্থান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। এগুলো হলো- জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ শতাংশের মতো অর্জন। এছাড়া কৃষি খাতের চমৎকার অর্জন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাফল্য। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি একটু বাড়লেও তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কেননা আমেরিকা ও ভারতসহ বিশ্বের বুরো অনেক অর্থনীতির দেশের তুলনায় আমাদের মূল্যষ্ফীতি এখনো কম। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার যুদ্ধের পক্ষে নই। বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুটি দেশই আমাদের বন্ধু। রাশিয়া মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনেক সহায়তা করেছে। তা না হলে ৩০ লাখের পরিবর্তে হয়তো ৬০ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হতো। ইউক্রেন যুদ্ধ রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কোন প্রভাব পড়বে না। এটা হচ্ছে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে। এছাড়া করোনা মহামারীর মতো যুদ্ধেও রাশিয়া প্লেন ভাড়া করে লোকবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে হিট থাকলে তাপ কিছুটা আসবেই। দেখতে হবে আমাদের চামড়া কিংবা লোম কতটা পুড়ে যায়।

বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার কেন কমে এমন প্রশ্নের জবাবে আইএমইডি সচিব জামান বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের নানা শর্ত থাকে। এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে পরামর্শক ও যন্ত্রপাতি আনতে হয় বিদেশ থেকে। করোনার কারনে সেসব বাঁধাগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্য এত টাকা কমাতে হয়েছে।

ব্রিফিং এ জানানো হয়, সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে বৈদেশিক সহায়তা অংশে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাক টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে মোট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা।

অনুমোদন পাওয়া সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৭৫৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৫০৭টি, কারিগরি প্রকল্প ১৪০টি এবং স্বায়স্তশাসিত সংস্থার প্রকল্প রয়েছে ১০৭টি। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল প্রায় দেড় হাজার। সংশোধিত এডিপিতে মোট প্রকল্পের মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১৯৯টি। এছাড়া চলমান অর্থবছরের মূল এডিপিতে অন্তর্ভূক্ত নেই এমন বাদ পড়া ২১টি প্রকল্প বরাদ্দসহ আরএডিপিতে রাখা হয়েছে। এদিকে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদি নতন প্রকল্প রয়েছে ৪৫৪টি। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প আছে ১৩২টি। স্বায়স্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প রয়েছে ১২টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প আছে ৭৮টি। এছাড়া চলতি অর্থবছরের মধ্যেই সমাপ্তর জন্য নির্ধারিত প্রকল্প রয়েছে ৩৭৮টি।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাত হচ্ছে-পরবহণ ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি ৩৬ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা খাতে ২০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৫ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে ৯ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি প্রকল্প হচ্ছে-রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ হচ্ছে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ চুতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীতে ৬ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে ৬ হাজার ১৩৭ কোিিট টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পে ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। সাসেক রোড সংযোগ প্রকল্প: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়তকরণ প্রকল্পে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এছাড়া সাপোর্ট টু ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়ক প্রকল্পে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।



 

Show all comments
  • ছালে অাহমেদ শিপন ১৮ মার্চ, ২০২২, ৯:৩১ পিএম says : 0
    Needless to say, it’s the biggest project in history of Bangladesh. Really, We are proud of " THE PADMA BRIDGE ".
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা সেতু

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৬ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ