মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনে রুশ অভিযানকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পারমাণবিক শক্তিকে বিশেষ সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইউক্রেন প্রশ্নে নেটোর নেতাদের "আগ্রাসী বক্তব্যের" কারণেই এ পদক্ষেপ - বলছে রাশিয়া।
আরো সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ইউক্রেনে রুশ মিশনে কেউ বাধা দিতে চাইলে তাকে এমন পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে, ইতিহাসে এর আগে কেউ কখনো হয়নি। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং নোভোয়া গেজেটা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ বিশ্বাস করেন, "পুতিনের শব্দচয়নকে মনে হয়েছে পারমাণবিক যুদ্ধের সরাসরি হুমকি।" এ নিয়ে ব্রিটেন এবং সারা বিশ্বেরই সংবাদমাধ্যমে অনেক বিশ্লেষকই নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এগুলোতে সাধারণভাবে উঠে এসেছে যে রাশিয়ার চার ধরনের পারমাণবিক প্রস্তুতিমূলক সতর্কাবস্থা আছে। প্রথমটি হচ্ছে সাধারণ সার্বক্ষণিক সতর্কাবস্থা, দ্বিতীয়টি হচ্ছে 'উচ্চতর', তৃতীয়টি হচ্ছে 'সামরিক বিপদ', এবং শেষটি হচ্ছে 'ফুল' বা পূর্ণ।
পুতিন যেটা করেছেন তা হলো - সতর্কাবস্থাকে দ্বিতীয় অর্থাৎ 'উচ্চতর' স্তরে উন্নীত করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে তিনি সেনা কমান্ডারদের বলছেন যে, তিনি চান যে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের বিকল্পটি তার হাতের নাগালে থাকুক। ব্রিটেনের রাজকীয় ইউনাইটেড সার্ভিসের ইনস্টিটিউটের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন - তৃতীয় স্তর অর্থাৎ সামরিক বিপদ মানে হচ্ছে রাশিয়া মনে করছে যে তারা পারমাণবিক আক্রমণের শিকার হতে পারে। আর 'ফুল' মানে হচ্ছে পারমাণবিক যুদ্ধ।
হঠাৎ পুতিনের এই পারমাণবিক হুমকি দেবার আসল কারণটা কী? এখন মনে করা হচ্ছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের একটি উক্তি থেকে এ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। পুতিনের পদক্ষেপের একদিন পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক নাটকীয় উক্তিতে এটা আরো স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটকে কেন্দ্র করে কিছু অগ্রহণযোগ্য মন্তব্যের জবাবে ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক সতর্কাবস্থার স্তর বাড়িয়ে দিয়েছেন। "নেটো এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য বাগযুদ্ধ বা সংঘাত সম্পর্কে বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা বিবৃতি দিয়েছেন। আমরা মনে করি এসব বক্তব্য একেবারই অগ্রহণযোগ্য। এসব বিবৃতির প্রণেতাদের আমি নাম করতে চাই না। যদিও ইনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।"
তরে লিজ ট্রাসের ঠিক কোন মন্তব্য নিয়ে ক্রেমলিন ক্ষুব্ধ - তা স্পষ্ট হয়নি। গত রোববার ট্রাস বলেছিলেন, রাশিয়াকে না থামালে অন্য বাল্টিক দেশগুলো, পোল্যান্ড বা মলদোভার মত আরো দেশ হুমকিতে পড়তে পারে এবং পরিণতিতে নেটোর সাথে সংঘাত বেধে যেতে পারে। লিজ ট্রাস আরো বলেন, ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে কোন ব্রিটিশ যদি সেখানে যুদ্ধ করতে যায় তাহলে তিনি তা সমর্থন করবেন।
মিজ ট্রাসের এসব উক্তির পর রাশিয়ার সরকারি টিভি চ্যানেল রোসিয়া ওয়ান নিউজ ফ্ল্যাশ দিয়ে এ খবর এবং ভ্লাদিমির পুতনের পারমাণবিক সতর্কাবস্থা বাড়ানোর খবর প্রচার করে। তবে এ বক্তব্য নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনার পর ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, যাদের সামরিক প্রশিক্ষণ নেই তাদের রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেন যাওয়া উচিত নয়। লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও বলা হয়, যুক্তরাজ্য অন্যভাবেও ইউক্রেনকে সাহায্য করতে পারে এবং সরকার এ মুহূর্তে ব্রিটিশ নাগরিকদের সেদেশে না যাবারই পরামর্শ দিচ্ছে।
রাশিয়া কি সত্যি পারমাণবিক আক্রমণ চালিয়ে বসবে? এ প্রশ্নের ব্যাপারে নানা বিশ্লেষক নানারকম মত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন এটা ভ্লাদিমির পুতিনের একটা ধাপ্পা ছাড়া কিছুই নয় - যার লক্ষ্য পশ্চিমা দেশগুলোকে এ যুদ্ধের বাইরে রাখা। দি গার্ডিয়ান পত্রিকার বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে বিজয় অর্জনের জন্য পুতিন পরিস্থিতিকে একটা চরম বিপর্যয়ের কিনারা পর্যন্ত নিয়ে যেতেও তৈরি আছেন - যাকে ইংরেজিতে বলে ব্রিংকসম্যানশিপ।
সাবেক ব্রিটিশ সামরিক কমান্ডার কর্নেল রিচার্ড কেম্প দি ডেইলি এক্সপ্রেসে এক বিশ্লেষণে বলছেন, পুতিনের এই হুমকি 'কথার লড়াইয়ের' অংশ। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, "পুতিন নিজ হাতে পারমাণবিক বোতামে চাপ দিতে পারেন না, এ ধরনের অকল্পনীয় নৃশংসতার একটি কাজে তার জেনারেলদেরও জড়িত করতে হবে।" তবে অন্য কিছু বিশ্লেষক বলছেন, পুতিনের বিরুদ্ধে যখন অসন্তোষ বাড়ছে এবং অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে তখন "একজন হিংস্র, ক্ষিপ্ত লোকের পক্ষে তার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য" বেপরোয়া কিছু করে ফেলা সম্ভব।
বিবিসির স্টিভ রোজেনবার্গ এক বিশ্লেষণে বলছেন, এর আগে অনেক ক্ষেত্রে তিনি ভেবেছেন যে "ভ্লাদিসির পুতিন এটা করবেন না" - কিন্তু তিনি তা করেছেন। স্টিভ রোজেনবার্গ কথা বলেছেন মস্কোভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ পাভেল ফেলজেনহাওয়ারের সাথে। ফেলজেনহাওয়ার বলছেন - "পুতিন খুবই কঠিন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন, তার সামনে তেমন কোন পথ খোলা নেই। পশ্চিমা বিশ্ব যদি রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করে ফেলে, সেক্ষেত্রে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পতন হবে।" "সেক্ষেত্রে রাশিয়ার জন্য একটি উপায় হতে পারে ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া।" "আর একটি বিকল্প হতে পারে ব্রিটেন এবং ডেনমার্কের মাঝামাঝি নর্থ সি'র কোন এক জায়গায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে - তাতে কী ঘটে সেটা পর্যবেক্ষণ করা।"
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ব্যাপারে এখনো সরাসরি কিছু বলেননি। মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, আমেরিকার নিজের পারমাণবিক সতর্কাবস্থার কেন পরিবর্তন করা হলো কিনা তা তারা প্রকাশ করবেন না। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, এটি হচ্ছে তাদের ভবিষ্যত কার্যক্রমকে যৌক্তিকতা দেবার জন্য উত্তেজনা বৃদ্ধির একটা চেষ্টা, তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটোর অবশ্যই আত্মরক্ষা করার সক্ষমতা আছে। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।