বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিলেট নগরীতে উন্নয়ণ দূর্ভোগ সীমাহীন। এতে নাভিশ^াস জনজীবন। আন্ত:জেলা সড়কের সাথে নগরীর প্রবেশদ্বার। মুলত সিলেট সুরমা নদীর উপর স্থাপিত কিন ব্রিজ। সেই কিন ব্রিজ থেকে কদমতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ব্যস্ততম একটি সড়ক। এই সড়কের পাশে সিলেট রেল স্টেশন। কিন্তু সড়কের পুরোটাজুড়েই দাঁড় করিয়ে রাখা শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি। গাড়ির কারণে এই সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচল করারও মাহ সংকট। অপরিকল্পিতভাবে রাখা হয় গাড়ি গুলো। মনে হবে দৃশত: যেন এটি গাড়ি পাকিং জোন । অথচ এমনটিই নয়। বিশাল এ রাস্তা পরিণত হয়েছে এ অবস্থায়। গাড়ি রাখার কারনে সংকুচিত হয়ে পড়েছে চলাচল ব্যবস্থা। প্রায় তিনবছর ধরেই চলে আসছে এমন অবস্থা। এ নিয়ে দায় নেই কারোও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অবস্থান কদমতলী এলাকায়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টার্মিনালের আধুনিকায়ন চলছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া আধুনিকায়ন কাজ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। তবে ২০২২সালে এসেও শেষ হয়নি কাজ। বাস টার্মিনালের আধুনিকায়নের কাজ চলায় সেখানে কোনো বাস রাখা যাচ্ছে না। ফলে তিন বছর ধরে সড়কই হয়ে উঠেছে টার্মিনাল। বাস টার্মিনাল ও আশপাশের সড়কজুড়ে দিন রাত দাঁড় করিয়ে রাখা হয় শ’য়ে শ’য়ে বাস। এই সড়কের পাশেই সিলেট রেলওয়ে স্টেশন। রেল স্টেশনের সামনেও দাড়িয়ে থাকে বাসের সারি। ফলে রেল স্টেশনে যাত্রীদের যাওয়া আসায়ও দুর্ভোগ পোহাতে যাত্রীদের। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন দূরপাল্লার প্রায় পাঁচশ’ বাস ছেড়ে যায়। এরচেয়ে দিগুণ সংখ্যক বাস চলাচল করে আন্তঃজেলা রুটে। টার্মিনালে আধুনিকায়নের কাজ চলায় এই বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয় সড়কের উপর। বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় এই সড়কে সবসময়ই লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। ফলে যাত্রীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের শুরুতে। প্রায় সাড়ে ৭ একর জমির উপর এই টার্মিনাল নির্মাণ কাজে ব্যয় হচ্ছে ১১৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যথাসময়ে শেষ হয়নি কাজ।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, আগের বাস টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য বসার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। ফলে যাত্রীদের পোহাতে হত দুর্ভোগ। এছাড়া টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য ছিলো না কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা। পুরো বাস টার্মিনালে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হতো। এরকম অবস্থায় সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।
সিসিক সূত্র জানিয়েছে, বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ ও টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য ৫৬ কোটি টাকা এবং টার্মিনালের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৬১ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। পুরো বাস টার্মিনালের ময়লা-আবর্জনা যাবে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানে ময়লা-আবর্জনাকে পরিশোধন করা হবে। এছাড়া বাস টার্মিনালে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কক্ষ, টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকবে। সিসিকের কর্মকর্তারা জানান, আধুনিক টার্মিনালে প্রত্যেক রুটের জন্য আলাদা পার্কিং জোন, প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা রাস্তা থাকবে। টার্মিনালে থাকবে মেডিকেল সেন্টার। কেউ অসুস্থ হলে কিংবা দুর্ঘটনার শিকার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে।
সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলায় ভেতরে গাড়ি রাখার সুযোগ নেই। সব গাড়ি টার্মিনালের বাইরে সড়কেই পার্কিং করা। কিনব্রিজ পার হয়ে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত পুরো সড়কেই মনে হয় বড়সড় বাস টার্মিনাল। কেবল সড়ক নয়, আশপাশের বিপণিবিতানগুলোর সামনে, রেলস্টেশনের খোলা অংশজুড়েও পার্কিং করে রাখা হয়েছে শত শত বাস। ফলে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। ফলে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হাজারও মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় । এই টার্মিনাল থেকে ঢাকা-সিলেট, সিলেট-কুমিল্লা, সিলেট-চট্টগ্রাম, সিলেট-হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলের যানবাহন ছেড়ে যায়। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার কোচ, মিনিবাস চলাচল করে এখান থেকে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন টার্মিনালের কাজ বন্ধ ছিল। টার্মিনালের আধুনিকায়ন চলায় সড়কেই গাড়ি রাখতে হয়। তিনি বলেন, যথাসময়ে কাজ না হওয়ায় আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। দীর্ঘ যানজটের কারণে যথাসময়ে বাস ছেড়ে যেতে ও প্রবেশ করতে পারে না। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের জুনে মধ্যে টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনার কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। এই জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। তখন আর দুর্ভোগ থাকবে না। এছাড়া তিনি বলেন, আধুনিকায়ন কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের অন্যতম আধুনিক বাস টার্মিনাল। এখানে আধুনিক ভবনে যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কক্ষ, টয়লেট, বিশুদ্ধ পানি প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া প্রত্যেক রুটের জন্য আলাদা পার্কিং জোন, প্রবেশ ও বের হওয়ার আলাদা রাস্তা থাকবে। টার্মিনালে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা দুর্ঘটনার শিকার কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে আলাদা কক্ষ ও চিকিৎসক থাকবে।
স্থানীয় সূত্র মতে, এই এলাকায় রয়েছে স্কুল সহ আবাসিক এলাকা। সকলেই উন্নয়ণযজ্ঞে কাহিল। তারা বলেন, উন্নয়নের জন্য গাড়িগুলো পরিকিল্পতভাবে কোন স্থানে পাকিং জোন গড়ে তুলতে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী ছিল। বিকল্প ব্যবস্থা না করে ব্যস্ততম একটি সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জনদূর্ভোগ কার্যত নাগরিক সুবিধা হরণের নামান্তর। তারা এ্ও বলছেন, টার্মিনালে উন্নয়ণযজ্ঞ প্রত্যাশিত কিন্তু উন্নয়নের নামে দুর্ণীত্ওি কম নয়। যেমন তেমন কাজ্ও চলছে টার্মিনালে। সেকারনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সেই কাজের মান তদারিক করলে অনেক অনিয়ম উঠে আসতো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।