বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নওগাঁ মূলত বরেন্দ্র অঞ্চল অধ্যুষিত কৃষি প্রধান জেলা। এ জেলা ধান উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত। তবে অসংখ্য নদী, বিল, খালের অস্থিত্ব থাকার কারনে মাছ উৎপাদনেও নওগাঁ উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে বিবেচ্য। সম্প্রতি আম এ জেলার অর্থকরী ফসল হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
অর্থনীতি এবং কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলেছে এ জেলায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি নদী। তার মধ্যে অন্যতম নদীগুলো হচ্ছে আত্রাই নদী, ছোট যমুনা নদী, ফকিরনী নদী, শিব নদী,পূনর্ভবা নদী, নাগর নদী এবং তুলশীগঙ্গা নদী।
ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট থেকে নওগাঁ জেলার রধামইরহাট উপজেলায় আত্রাই নদী প্রবেশ করেছে। জেলার অন্যতম বৃহৎ নদী এটি। বাংলাদেশের ব্যপক পরিচিত নদ-নদীগুলোর মধ্যেও এই নদী উল্লেখযোগ্য। এই নদীর জেলার ধামইরহাট থেকে পতœীতলা, মহাদেবপুর, মান্দা ও আত্রাই উপজেলা স্পর্শ করে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় প্রবেশ করেছে। কালের মাছ উৎপাদনসহ কৃষি পন্য বিপনন এবং অন্যান্য ব্যবসা ক্ষেত্রে আত্রাই নদীর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। তবে কালের প্রবাহে নদীর প্রবাহ অনেক কমে গেছে। কেবলমাত্র বর্ষা মওসুমে এই নদীর প্রবাহ গতিশলি থাকে। শুকনা মওসুমে প্রায় শুষ্ক হয়ে পড়ে নদী। এর ফলে বর্ষা মওসুমে ব্যপকভাবে নৌকা চলাচল করলেও শুকনা মওসুমে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এই নদীতে বেশীর ভাগ এলাকায় মাঝে মাঝে চর জেগে উঠে। তবে আত্রাই নদী খনন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
জেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন নদী হচ্ছে ছোট যমুনা। এই নদীটিও ভারত থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। দিনাজপুর থেকে আবার ভারত হয়ে বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলা হয়ে নওগাঁ জেলায় প্রবেশ করেছে। জেলার বদলগাছি, নওগাঁ সদর, রানীনগর উপজেলা হয়ে আত্রাই উপজেলায় আত্রাই নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে। এই নদী বিশেষ করে নওগাঁ শহরকে দুইভাগ করে বয়ে গেছে। এই নদীর অবস্থা আরও শোচনীয়। বর্ষকালে পানির প্রবাহ থাকলেও শুকনা মওসুমে প্রতি বছর পানি শুকিয়ে যায়। এই নদীতে বর্ষাকালে কিছুটা নৌকা চলাচল করলেও শুকনা মওসুমে একেবারেই চলাচলের কোন সুযোগ থাকে না। এই নদীটি বিশেষ করে নওগাঁ শহর এলাকায় ব্যপকভাবে দুষন এবং দখলের শিকার হয়েছে। নদীর উভয় ধারে প্রভাবশালীরা দখল করেছে। তারা নদী দখল করে তাদের বাড়িঘড় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়াও নদীর উভয়ধারের বাসিন্দারা তাদের বাড়ির প্রাত্যহিক ময়লা আবর্জনা প্রতিনিয়ত নদীতেই ফেলে থাকেন। এ ছাড়[াও জয়পুরহাট চিনি কলের বিষাক্ত গাদ প্রায় প্রতিবছর ছেড়ে দেয়া হয় এই নদীতে ফলে নদীর পানি দুষিত করে তোলে। এর ফলে মাছ এবং জলজ প্রাণী নিধন হয়ে থাকে প্রতি বছর।
নওগাঁ জেলা শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া আরেকটি নদীর নাম তুলশীগঙ্গা। এই নদীও পার্শ্ববর্তি জয়পুরহাট জেলা থেকে নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নে দিয়ে প্রবেশ করেছে। নওগাঁ সদর উপজেলাতেই আবরো ছোট যমুনা নদীতে প্রবেশের মধ্যে দিয়ে এই নদীর সমাপ্তি হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে এই নদীর প্রায় অংশ ভরাট হয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। এই নদীতে কোন পানি প্রবাহ নেই। কেবল কচুরিপানায় ভরে গেছে। সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নে এই নদীর গতিপথ বন্ধ করে দিয়ে ছোট যমুনা নদীর সাথে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ফলে নদীর নিচের বাঁকী অংশ বন্ধ হয়ে পড়েছে যদিও এটি খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মান্দা উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলে নুরুল্যাবাদ এলাকায় আত্রাই নদী থেকে সৃষ্টি হয়েছে ফকিরনি নদী। বর্ষাকালে এই নদীর কিছুটা অস্থিত্ব অনুভুত হলেও শুকনা মওসুমে তা একেবারে মরে যায়। এই নদীও অস্থিত্ব সংকটে রয়েছে। ব্যপকভাবে গণ দখলের কবলে রয়েছে এই নদীও। এই নদীতে কোন নৌযান চলাচল কোনদিনও করে না।
বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলা থেকে নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলায় প্রবেশ করেছে নাগর নদ। দুপচাচিয়া উপজেলা থেকে রানীনগর, আত্রাই উপজেলার কিশা ইউনিয়নের সমসপাড়া এলাকায় আত্রাই নদীর সাথে যুক্ত হয়ে এই নদীর অস্থিত্ব বিলীন হয়েছে। এই নদীও এক সময় ছিল খরস্রোতা। এই নদীর পাশে অবস্থিত বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি পতিসর কাচারীবাড়ি। এই নদী পথেই কবি বহুবার বজরায় চড়ে চলনবিল হয়ে শাহজাদপুর ও শিলাইদহ থেকে পতিসরে এসেছেন। এই কারনে নদীটি প্রসিদ্ধ। নদীটি এখন অস্থিত্ব সংকটে রয়েছে। ব্যপকভাবে দখল আর দুষনের শিকার হয়েছে।
জেলার আরেক নদী পুনর্ভবা। এটিও একটি ছোট নদী। ভারত থেকে এসে নদীটি নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী সাপাহার ও পোরশ্ উপজেলার উপর দিয়ে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করেছে। নদীটি ছোট হলেও মৎস্য সম্পদে ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। নদীটি কালের প্রবাহে অস্থিত্ব সংকটে রয়েছে। শুকনা মওসুমে কোন পানিই থাকে না এই নদীতে। নদী দখল করে বিভিন্ন স্থানে বসতি, বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
জেলার মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে নিয়ামতপুর উপজেলার সীমানা ছুয়ে শিব নামের আরেক নদী বয়ে গেছে। নদীটি বিভিন্ন বিলাঞ্চল অতিক্রম করে রাজশাহী জেলার মধ্যে প্রবেশ করে বাড়নই নদীতে যুক্ত হয়েছে। এই নদীও কালের প্রবাহে ভরাট হয়ে গেছে। কোন নৌযান কনোদিন এই নদী দিয়ে চলাচল করেনি। তবে স্থানীয়ভাবে মাছের পযূ্প্তা যোগান দিয়ে থাকে এই নদী। বর্তমানে নদীটি অস্থিত্ব সংকটে নিপতিত হয়েছে।
জেলার সাধারন মানুষের দাবী নদীগুলো খনন করে অস্থিত্ব রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলে কৃষি, মৎস্য এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে আবারো গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে সক্ষম হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।