পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রবাসী শ্রমিকরা বছরের পর বছর বিদেশে থেকে দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠায়। তবে ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে এলেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পড়েন মহা ঝামেলায়। সেখানে ডাকাত দল ওৎ পেতে থাকে। পরে প্রবাসীদের সবকিছু কেড়ে নেয় ওই চক্রের সদস্যরা।
জানা যায়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওৎ পেতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। তাদের টার্গেট মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা। পরে প্রবাসীদের বহনকারী গাড়ি টার্গেট করে এগোতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। নির্জন কোনো স্থানে বা জ্যামে গাড়ি পৌঁছানোর পর প্রবাসীর গাড়ি ঘিরে অস্ত্রের মুখে লুটে নেয় টাকা-পয়সা, পাসপোর্ট, স্বর্ণলঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী। তবে ভুক্তভোগিরা থানায় গিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ডাকাতির মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য পরামর্শ দেয় পুলিশ। ডাকাতির মালামাল উদ্ধারতো দূরের কথা, ডায়েরি করার পর তেমন কোনো তথ্যই মিলে না পুলিশের কাছে।
জাহিদ হাসান। তিনি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার বাকগ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়ার ছেলে। তিনি সউদী প্রবাসী। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর গত ১৯ ফেব্রæয়ারি দেশে আসেন। রাত সাড়ে ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। পরে ইমিগ্রেশন শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিজস্ব গাড়িতে কুমিল্লার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় সাথে ছিলেন তার বাবা-মা। রাত আড়াইটার দিকে আড়াইটায় দিকে সোনারগাঁও মুগড়াপাড়া এলাকায় জ্যামে আটকা পড়েন। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন হেমলেট ও মুখোশ পরিহিত যুবক অস্ত্র নিয়ে এসে তাদের গাড়ির উপর হামলা করে। অস্ত্রের মুখে তাদের গাড়ির লক ভেঙ্গে সউদী রিয়াল, টাকা-পয়সা, পাসপোর্ট, স্বর্ণলঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে সটকে পড়ে ডাকাত দলের সদস্যরা। এ সময় জাতীয় সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। পরবর্তীতে অভিযোগ দিতে সোনারগাঁও থানা গেলেও নিরাশ হয়ে ফিরেন। পরে চৌদ্দগ্রাম থানায় যান অভিযোগ দিতে। সেখানেও কোনো অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। তবে অভিযোগের পরবর্তীতে পাসপোর্ট হারানোর একটি সাধারণ ডায়রি করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। পুলিশের পরামর্শে তিনি সাধারণ ডায়রি করেন। ডায়রি নম্বর ৮৭৪।
জাহিদ হাসান ইনকিলাবকে বলেন, বিয়ের জন্য আমি স্বর্ণলঙ্কার ও মূল্যবান সামগ্রীসহ প্রায় ৩০ হাজার রিয়ালের মালামাল নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু ডাকাত দলের সদস্যরা সব নিয়ে গেছে। এমনকি আমার পাসপোর্টটাও নিয়ে গেছে তারা। এছাড়াও আমার মায়ের মোবাইল ও তার কাছে থাকা ব্যাগটিও নিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা।
শুধু জাহিদ হাসান নয়, তার মতো অনেক বিদেশফেরত যাত্রীরা সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
গত ১৮ ফেব্রæয়ারি সউদী আরব থেকে দেশে আসেন মো. গিয়াস উদ্দীন সবুজ ও তার চাচাতো ভাই কাজী জামাল উদ্দিন। তাদের গ্রামের বাড়িও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। তারা ইনকিলাবকে জানান, ১৮ ফেব্রæয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে নিয়ম অনুয়ায়ী ইমিগ্রেশন শেষ করে রাত ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তবে তারাও জাহিদের মতো সোনারগাঁওয়ের মুগড়াপাড়া এলাকায় যাওয়ার পর জ্যামে আটকা পড়েন। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন মূখোশধারী যুবক এসে তাদের গাড়িতে আচমকা হামালা চালায়। এক পর্যায়ে গাড়ির দরজার লক ভেঙে তাদের এলাপাথাড়ী কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। পরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মূল্যবান মালামাল ও জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণলঙ্কারসহ প্রায় ১৬ হাজার রিয়াল নিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা।
তাদের অভিযোগ, ডাকাতির শিকার হওয়ার সময় জাতীয় সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেন। পরে মামলা করতে সোনারগাঁও থানায় যান। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে পুলিশের পরামর্শে তারা একটি
সাধারণ ডায়রি করেন। ডায়রি নম্বর ১০৪৭। ডায়রিতে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে; এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়।
এসব অভিযোগর ব্যাপারে গতকাল সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বসে আছি অভিযোগ নেওয়ার জন্য। কেউ অভিযোগ নিয়ে আসে নাই। তবে অভিযোগ না নিয়ে সাধারণ ডায়রি নেওয়া হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে জানাতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেন, মহাসড়কে ডাকাতির বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। তবে সোনারগাঁও থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়রি নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব ১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তবে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে। সম্প্রতি তিন প্রবাসীর ডাকাতির ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আসে নাই। তবে অভিযোগ আসলে গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর লিটন সরকার নামে এক প্রবাসী মিশর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে গোলচত্ত¡রে ফুটওভার ব্রিজের নিচে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ৫-৬ জন লোক চাকু দেখিয়ে তার হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে যায়। তার পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট, আট আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, দুটি মোবাইল সেট, একটি স্মার্ট কার্ড ও প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়সহ নগদ ৪০ হাজার টাকা তারা নিয়ে যায়। এই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া একই বছর ৫ অক্টোবর ব্রিটেন থেকে ঢাকায় নামেন ওমর শরিফ। নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে অপহৃত হন তিনি। এরপর তাকে ঢাকার বাইরে নামিয়ে দেয়া হলেও তার পাসপার্টসহ প্রয়োজনীয় সব মালামাল লুট করা হয়। এই দুইটি ঘটনার পর অনুসন্ধানে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে গোয়েন্দা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, ওই চক্রের সদস্যরা বিমানবন্দর কেন্দ্রিক তারা গত এক বছরেই অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছিল। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক প্রবাসীদের টার্গেট করে চক্রটি ৫০ থেকে ৬০টি ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের পর মালামাল লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে মাত্র সাতটি। কিন্তু নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ না করায় ‘সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র’ অবাধে সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।