চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পূতময় মহান রব। রহস্যের অন্তহীন আধার। সৃষ্টিকুলের প্রতিটি পরতে লুকিয়ে আছে তাঁর সৃষ্টিকৌশল, অপার শক্তিমত্তা ও পরিচিতির নিখুঁত গাঁথুনি। বান্দা একটু মেধা কাটালেই নানাভাবে ধরা পড়বে তাঁর সৃষ্টিরহস্যের অনেক কিছু। পরিষ্কার হবে প্রভুর অস্তিত্ব¡। প্রশান্তি লাভ করবে তার আত্মা। কারণ তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তিনি জাহের তিনি বাতেন বা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য।’ (সুরা হাদিদ : ৩)। তাঁর কোন কাজ অনর্থক বা প্রজ্ঞাহীন নয়। সবকিছুর পেছনেই আছে কোন না কোন লক্ষ্য। কোন নিগূঢ় রহস্য। আমরা তা কখনো আংশিক বুঝি কখনো বা থেকে যায় অদৃশ্যের অন্তহীন ভান্ডারে। যে ভান্ডারের মালিক কেবলই তিনি। ঘোষিত হয়েছে, ‘আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিকাঠি। এগুলো তিনি ছাড়া কেউ জানেনা।’ (সুরা আনয়াম : ৫৯)।
তবুও বান্দা ইমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সামন্য কিছু জানার চেষ্টা করলে বা কিছু রহস্য উদঘাটনে সচেষ্ট হলে এবং তা যথার্থ হলে সমস্যা কী? তিনি কি তবে বড় অপরাধী হয়ে যাবেন! গায়বের পেছনে বা রহস্য উদঘাটনে শরীয়তের যে নিষেধাজ্ঞা তা হয়তো এমন ক্ষেত্রে নয়। তবুও গোস্তাকির জন্য দয়াময়ের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেমন পবিত্র, সুমহান,বরকতময় তেমনই তাঁর জন্য নির্ধারিত ‘ইসমে জাত’ (সত্তাগত নাম) পরিচিতিজ্ঞাপক সর্বাপেক্ষা বড় কল্যাণময় বাক্য- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ও সমপর্যায়ভুক্ত। এই কালেমাটির মর্যাদা-মাহাত্ম্য এ থেকেই অনুমেয় যে, মানব জাতির জন্য প্রেরিত সমস্ত নবী-রাসুলের প্রধান এবং প্রথম কাজই ছিল তাদেরকে এই কালেমার দাওয়াত দেওয়া কিংবা তাদের থেকে এই মর্মার্থের স্বীকৃতি নেওয়া। ইসলামের মৌলিক পঞ্চভিত্তির প্রথমটিই এই ‘কালেমা’র সাক্ষ্য প্রদান। ‘কালেমা’র প্রতি বিশ্বাস ছাড়া কোন মানুষ মুমিন হতে পারেনা। তার কোন ইবাদতও আল্লাহ’র কাছে মূল্যমান বা প্রতিদানযোগ্য হতে পারেনা।
নেকির পাল্লায় এই ‘কালোমা’র ওজন সমস্ত আমল অপেক্ষা বেশি হবে। এমনকি সাত আসমান সাত জমিনের সবকিছু থেকেও ‘কালেমা’র ওজন বেশি হবে।’ (মুসনাদে আহমদ) আকাশের দৃশ্যমান কোন খুঁটি বা পিলার নেই যা কোরআন থেকে আমরা জানতে পারি (সুরা রা’দ : ২)। কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির কথা আমরা নবীজির (সা.) হাদিস থেকে জানতে পারি। তিনি ঘোষণা করেছেন- ‘যতদিন পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলা হবে ততদিন পৃথিবী ধ্বংস হবে না।’ (মুসলিম)। কোন কোন হাদিসে ‘কালেমা’র ব্যাপারেও এমন কথা রয়েছে। তাই আমরা এবার ‘লফজে আল্লাহ’ এবং পবিত্র ‘কালোমা’র কিছু গোপন কথা বা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাবো ইনশা আল্লাহ। সত্তাগত বা গুণগতভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেমন শরিকানার ঊর্ধ্বে তেমনই তাঁর জন্য নির্ধারিত নাম ‘লফজে আল্লাহ’ও অলৌকিকভাবে আজও শরিকানামুক্ত, ভবিষ্যতেও তেমনই থাকবে ইনশাআল্লাহ। আজ পর্যন্ত কোন মানুষ জেনে কিংবা না জেনে, শখের বশে কিংবা দুষ্টুমি করে এ নাম তথা ‘আল্লাহ’ নাম ধারণ করেনি কিংবা ধারনের মতো ধৃষ্টতা দেখায়নি। হযরত মুসা’র (আ.) যুগের ফেরাউন ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলেছিল- ‘আনা রাব্বুকুমুল আ’লা তথা আমি তোমাদের সর্বাপেক্ষা বড় রব!’ (সুরা নাযিয়াত : ২৪)।
এমনিভাবে হযরত ইবরাহিম’র (আ.) সময়কার নমরূদ নিজেকে ‘রাব্বুল আলামিন’ দাবি করে তর্কের মজলিসে বলেছিল- ‘আনা উহয়ি ওয়া উমিতু বা আমি জীবনদাতা মৃত্যুদাতা!’ (সুরা বাকারা.২৫৮) কিন্তু ‘আল্লাহ’ দাবি করার দুঃসাহস তারা দেখায়নি। আল্লাহু আকবার! কেয়ামতের আগে মহাপ্রতারক, মহামিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব হবে; কিন্তু সেও ‘আল্লাহ’ নাম ধারণ করতে পারবেনা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নাম তিনিই হেফাযত করে যাচ্ছেন। এবার দেখা যাক অক্ষরগত দিক থেকে কী চমক রয়েছে নামটিতে। শব্দটিতে আরবি মূলবর্ণ রয়েছে তিনটি। আলিফ, লাম ও গোল হা। প্রত্যেকটি বর্ণ নুকতা ছাড়া। নুকতা আরবি বর্ণের একটি দুর্বলতা। এদিক থেকে শব্দটি শক্তিশালী বা দুর্বলতামুক্ত। অপর দিকে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রত্যেকটি বর্ণ উচ্চারণে সহজ। তাই শব্দটির তালাফফুজ সহজ ও শ্রুতিমধুর। আবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাক্যটি আল্লাহ শব্দে বর্ণিত তিনটি বর্ণ দ্বারাই গঠিত যা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে । পৃথিবীতে এমন সত্তা কে আছেন যে তাঁর নাম এবং পরিচয় একই বর্ণযোগে দিতে পারেন! সুবহানাল্লাহ! ‘আল্লাহ’ শব্দটির গাঁথুনিতে মোট ৪টি বর্ণ আছে। আবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাক্যটিতে ৪টি শব্দ রয়েছে। কী চমৎকার মিল! বাক্যটিতে বর্ণগুলো ব্যবহার হয়েছে মোট ১২বার, যা ৩ ও ৪ সংখ্যা দ্বার নিঃশেষে বিভাজ্য। তার মানে বুঝা যায় বিষয়গুলি কাকতালীয় নয়। তার পেছনে অবশ্যই কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। সে কথা একটু পরে বলছি। তার আগে ‘কালেমা’র অপর অংশ- ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বাক্যটিতে একটু দৃষ্টি দিই। এখানেও পূর্বের বাক্যটির মতো মিরাকেল দেখতে পাবো। ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটিতে আল্লাহ শব্দের মতো মূলবর্ণ তিনটি ব্যবহার করা হয়েছে। যথা- হা, মীম ও দাল। এই বর্ণগুলিও নুকতামুক্ত। আবার ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটির গঠনে মোট ৪টি বর্ণ রয়েছে। আর বাক্যটিতে আছে ১২টি বর্ণ। তাহলে দুটি বাক্যের মধ্যেই আমরা ৩,৪,ও ১২ সংখ্যার মধ্যে মিল দেখতে পাচ্ছি। আবার বাক্য দুটিতে মোট বর্ণের সংখ্যা ২৪টি। ২৪ সংখ্যাটি পূর্বের প্রত্যেকটি সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য। তার মানে প্রত্যেকটি সংখ্যাই একে অপরের সঙ্গে মিল রাখছে। এবার রহস্য উদঘাটন করা যাক। ৩ সংখ্যাটি আল্লাহ তায়ালার ১. অনাদি ২. অনন্ত ও ৩. বিরাজমান হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। তার প্রতি এভাবেই বিশ্বাস স্থাপন ইমানের দাবি। প্রশ্ন তোলা র্নির্বুদ্ধিতা। এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ’র রাসুল ও প্রিয়বন্ধু সর্বযুগে, সর্বজগতে তথা ১. বিশ্ব সৃষ্টির আগে ২. পরে এবং ৩. পরজগতে। আর এ বিশ্বাস বুদ্ধিমান তিনটি প্রাণী তথা মানুষ, জিন এবং ফেরেশতা সবার মধ্যে থাকা আবশ্যক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।