বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
খবরটি অদ্ভুত ও বিস্ময়কর শোনালেও যারা গৃহপালিত পশুর মালিক, তাদের জন্য শিক্ষা গ্রহণের বহু কিছু রয়েছে এ খবরে। সম্প্রতি ইনকিলাবে ‘উটের জন্য বিশ্বের প্রথম হোটেল সউদী আরবে’ শীর্ষক খবরে বলা হয় যে, উটের দেখাশোনার জন্য সউদী আরবে একটি ১২০ কক্ষের হোটেল স্থাপন করা হয়েছে। একজন কর্মকর্তা জানান, এটিই বিশ্বের প্রথম উটের হোটেল। ‘মরু জাহাজ’ নামে খ্যাত উট সউদী আরবসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও লালন-পালন করা হয়। কিন্তু অন্যান্য দেশে এত অধিক পরিমাণে লালন-পালনের নজির আছে বলে জানা নেই। এর প্রধান কারণ, চতুস্পদ প্রাণীগুলোর মধ্যে বৃহদাকারের উট প্রথম সারির পশু এবং মুসলমানদের ঐতিহ্যের প্রতীকও বটে।
গালফ্ নিউজ সূত্রে এ খবরে আরো বলা হয় যে, সউদী ক্যামেল ক্লাবের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-হারবি জানান, রুম সার্ভিস, উটের যতœ এবং জনপ্রিয় প্রাণীগুলোকে পাহারা দেয়ার জন্য এই হোটেলে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আছেন। একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, হোটেলটি খাবার পরিবেশন, গরম দুধ এবং উটের চেহারার যতœ নেয়াসহ ফাইভস্টার পরিবেশগুলো অফার করছে। উটের হোটলের এ জনপ্রিয়তা উট প্রেমিকদেরকে আরো উৎসাহিত করবে। এ মরুজাহাজ সর্ম্পকে যাদের মনে ঘৃণার মনোভাব ছিল বা আছে , এ পদক্ষেপ তার অবসান ঘটাতে পারে।
উটের গুণগান আরবি সাহিত্যের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে। কোরআনে উটের বিভিন্ন নাম ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, (১) ‘আল ইবিল’ অর্থ উট। এটি সূরা আন-আম ও সূরা আল-গাশিয়ায়ে দু’বার ব্যবহৃত হয়েছে। (২) আল-জামালু বহু বচনে ‘আল জামাল’ (মীমের পরে আলিফ যোগে ) সূরা নাহ্লে একবার। (৩) ‘নাকাতুন’ (একাধিক স্থানে) অর্থাৎ উট্নী। এর দুধ ও গোশ আরব মুসলমানদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য। উট প্রধান (সোওয়ারী) হওয়া ছাড়াও মালসামানের বোঝা বহনে সক্ষম।
উটের চামড়া দিয়ে নানা ধরনের চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদন করে লাভবান হওয়া যায়। উট গৃহপালিত পশু হিসেবে মানুষের বহু উপকার করে। হজ্বের সময় হাজী সাহেবান অধিকাংশ উটের দিয়ে কোরবানী করে থাকেন। সুতরাং উট মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। উট জবাই করে মেহমানদের আপ্যায়ন করার রীতি আরবদের মধ্যে বহুল প্রচলিত।
উটের লালন-পালন আরবদের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই দেখা যায়। খোদ রসূলুল্লাহ (সা.) এর দাদা মহাতœা আব্দুল মোত্তালেব বহু উটের মালিক ছিলেন। কুখ্যাত জালেম আবরাহা পবিত্র খানা-ই-কাবা ধ্বংস করতে গিয়ে লুটপাটের অংশ হিসেবে আব্দুল মোত্তালেবের দুইশত উটও নিয়ে যায়। তিনি তাঁর উটের দাবি নিয়ে আবরাহার নিকট গমন করেন। সে প্রশ্ন করে, আপনি খানাই-কাবা সম্পর্কে কিছু বললেন না কেন, আমি তো সেটি ধ্বংস করতে এসেছি, অথচ আপনি কেবল উটের দাবি নিয়ে এসেছেন? জবাবে আব্দুল মোত্তালেব বলেছিলেন, খানা-ই-কাবা আল্লাহর ঘর, তিনিই তাঁর ঘর রক্ষা করবেন আর আমিই উটের মালিক, আমার উট রক্ষার জন্য আমি তোমার কাছে এসেছি। একথা শুনে আবরাহা তাজ্জব বনে যায় এবং লুট করে নিয়ে যাওয়া সব উট আব্দুল মোত্তালেবকে ফেরত দিয়ে বিদায় করে।
বর্তমান সউদী রাজ পরিবার উটের ঐতিহ্য সংরক্ষণে এবং আরো মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করবার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উট উৎসব অন্যতম। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সউদী আরবে ষষ্ঠ বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাদশাহ আবুদল আজিজ উট উৎসব। প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে সুন্দর উটের মালিককে পুরস্কার হিসেবে ৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার দেয়া হয়। উটবিরোধীদের এতে গা জ্বালা হলেও এটা উৎসাহব্যঞ্জক ও প্রেরণাদায়ক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।