পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাকালিন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৮শ’ ১৮টি শিশুকে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৯৪ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জন কন্যাশিশুকে। এ সময়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০টি শিশু। এর আগের বছর ২০২০ সালে শিশুধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৬২৬টি।
গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‹বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১› শীর্ষক সংবাদ বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের শিশুদের সার্বিক পরিস্থিতি সার্বিকভাবে উদ্বেগজনক বলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এই পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। দেশের ৫টি বাংলা দৈনিক ও ৩টি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা করে এই তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গতবছর আত্মহত্যা করেছে ৭৮টি শিশু। এরমধ্যে ৫৭ জন ছেলে এবং ২১ জন মেয়ে শিশু। এই সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ২৩ জন শিশু। ২০২০ সালে আত্মহত্যাকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৪। মূলত পরীক্ষায় ফল-বিপর্যয়, পরিবারের ওপর রাগ, উত্যক্ত হয়ে, ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়া এবং সাইবার ক্রাইম ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
গতবছর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৮৩টি শিশু এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৫টি শিশুকে। ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয়েছিল ১৪৫ জন শিশু।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর আধেয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শিশুরা পরিবারের পরিচিত লোকদের দ্বারা ধর্ষণ হওয়া ছাড়াও,প্রতিবেশীদের হাতেও শিশুরা নিরাপদ ছিল না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন বয়স ছিল ২ বছর। বেশিরভাগ শিশুদের খেলার সময় প্রলোভন দেখিয়ে পরিচিতরা ধর্ষণ করেছে। কিছু শিক্ষক স্কুল এবং মাদ্রাসায় নারী শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করেন। এর বাইরে নানাধরনের নির্যাতনে আহত হয়েছে ২৫৪টি শিশু। নিখোঁজ ৩৮ জন। পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫শ’৭০টি শিশু। ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬৫। ২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২২। অপহরণের কারণ হিসেবে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ গ্রহণ, পাচার ও মুক্তিপণ দাবি সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২১ সালে নিহত হয়েছে ৬৯ শিশু। তার আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৫৮।
শিশু নির্যাতনের ৫৬টি ঘটনার মাধ্যমে ২৫৪টি শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। ২০২০ সালে শিশু নির্যাতনের ১৬টি ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনকারী হিসেবে গৃহকর্তা, বাবা-মা, শিক্ষক, উত্ত্যক্তকারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান, চাকরিদাতা,প্রতিবেশীর নাম উঠে এসেছে। এমনকি ২০২১ সালে অপরাধে সংশ্লিষ্ট হওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২০ যা ২০২০ সালে ছিল ২টি। শিশুদের নিয়ে ২৫টি বিষয়ের ওপর নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ১ হাজার ৯৩০টি। ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ১২টি বিষয়ের উপর ১০৬টি।
‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মুহিবুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব, শিশু ও সমন্বয় উইং, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাহবুবা বিলকিস, ডেপুটি সেক্রেটারি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এমজেএফের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ‹বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১› এর সার্বিকচিত্র উপস্থাপন করেন সংস্থার কোঅর্ডিনেটর রাফেজা শাহীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহিবুজ্জামান বলেন, পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, অপরাধ প্রবণতার ধারণামাত্র। ১৫টি পত্রিকা থেকে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় তথ্য গ্রহণ করে। ১০৯ হট লাইন নম্বরে প্রতিদিন অসংখ্য ফোন আসে। সেখান থেকে আমরা অপরাধের একটা ডেটাবেইস তৈরি করি।›
শাহীন আনাম বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায় নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধ করার জন্য সবাইকে এখনই জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, নতুবা এই হার বাড়তেই থাকবে। তিনি শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আরও বেশি সহৃদয়বান হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে আলাদাভাবে আধেয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালে মোট ১৮টি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েশিশুর সংখ্যা ৩৮ এবং সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। ৩৮ জন গৃহকর্মী ধর্ষণসহ নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১২ জন নিহত, ২৪ জন আহত ও ২ জন আত্মহত্যা করেছে। নিহত গৃহকর্মীদের মধ্যে ৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।