পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাসের দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি মানসিক ও শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই করোনা লকডাউনে শিশু-কিশোররা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাংলাদেশে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। বিরতিহীনভাবে প্রায় দুই বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব উচ্চমাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় নতুন নির্দেশনায় আবারো বন্ধ করে দেয়া হয়। নতুন বছরে নতুন পাঠ্যপুস্তকে মনোনিবেশ করে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার নিমিত্তে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা মনোযোগী হতে শুরু করা প্রাক্কালে আবারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের মনে নতুন হতাশার জন্ম দিয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় একমাস পর গতকাল থেকে আবারো মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়নি। আগামী মার্চ থেকে খোলার নির্দেশনা রয়েছে।
ইউনেস্কো থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বিশ্বের দেড় শতাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয় বাংলাদেশে। যেখানে ডেল্টা ও ওমিক্রন সংক্রমণের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরও প্রতিবেশি ভারত ২৫ সপ্তাহ এবং পাকিস্তান ৩৭ সপ্তাহ স্কুল কলেজ বন্ধ রাখে, সেখানে বাংলাদেশ বন্ধ রাখে ৮২ সপ্তাহ ধরে। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা অন্য দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে, কুয়েত ৬২ সপ্তাহ, ভেনিজুয়েলা ৬১ সপ্তাহ, ফিলিপাইন ও উগান্ডা ৬০ সপ্তাহ, মিয়ানমার ৫৯ সপ্তাহ এবং হন্ডুরাস ৫৮ সপ্তাহ। অন্যদিকে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অস্ট্রেলিয়া ও সুইডেনের মত দেশ একদিনের জন্যও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেনি। আমাদের দেশই ব্যতিক্রম। কঠোর লকডাউনের সময়ও রফতানিমুখী গার্মেন্ট কারখানাগুলো চালু রাখা হয়েছিল। সে সব ফ্যাক্টরি থেকে কোথাও শ্রমিকদের মাঝে গণসংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়নি। তাহলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কেন বার বার বন্ধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, এই প্রশ্ন শিক্ষাবিদরা বিভিন্ন সময়ে তুলেছেন। কোনো অুজহাতেই স্কুল বন্ধ না রাখার বিষয়ে বিশ্ব সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বার বার তাগিদ দেয়া হলেও আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। তবে আশার বিষয়, সরকার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আবারও পাড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার সুযোগ হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখন না বোঝা গেলেও কয়েক বছর পর তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তারা অন্যত্র কাজে মনোনিবেশ করেছে। এ ক্ষতি জাতির জন্য বিশাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিশুমনে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবার পরে বন্ধ এবং খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে খোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারখানা, গণপরিবহন, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা হলেও বন্ধ রাখা হয়েছে শুধু স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বছরজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাখায় পাবলিক পরীক্ষায় অটোপাশের নজির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার জন্য এটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের সম্পদ এবং রাষ্ট্র ও সমাজের ভবিষ্যৎ। তাদের শারিরীক-মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সুশিক্ষা ও মেধার বিকাশ নির্ভরশীল। করোনায় অর্থনৈতিক ক্ষতির তুলনায় শিশু-কিশোরদের মানসিক যে ক্ষতি হয়েছে, তা সহসা পূরণ হবার নয়। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় নব উদ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে বলে আমরা আশা করি। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ালেখার বাড়তি চাপ প্রয়োগ না করা হয়। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকায় তাদের মানসিক অবস্থার যে পরিবর্তন হয়েছে তা একবারে নিরাময় করা সম্ভব নয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী করার প্রক্রিয়া চালাতে হবে। মানসিকভাবে তাদের প্রস্তুতির জন্য ধারাবাহিকভাবে গ্রুমিং করতে হবে। করোনার কারণে ঝরে পড়া এবং স্কুল বিমুখ শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষাকে আনন্দময়, বাস্তবমুখী ও মনোজাগতিক উন্নয়নের ধারায় উন্নীত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।