মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
একদিকে ছাত্র ও অভিভাবক এবং অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরা নিয়ে বিরোধের কারণে কোনও বড় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, হিজাব পরতে বাধা দেয়ায় শিক্ষিকার কর্নাটকের জৈন পিইউ কলেজের এক অধ্যাপিকা ইস্তফা দিয়েছেন।
জানা গেছে, ম্যানেজমেন্ট হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করা বন্ধ করার পর গত বৃহস্পতিবার উত্তর কর্ণাটকের বেলাগাভির একটি প্যারামেডিক্যাল কলেজে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। বিজয়া ইনস্টিটিউট অফ প্যারামেডিক্যাল সায়েন্সেস (ভিআইপিএস) মাথার স্কার্ফ নিষিদ্ধ করেছে, যদিও উচ্চ আদালতের অন্তর্র্বতী আদেশ শুধুমাত্র স্কুল এবং প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে সীমাবদ্ধ যেখানে ইউনিফর্ম/ড্রেস কোড নির্ধারিত রয়েছে। ভিআইপিএস-এর কর্মীরা ছাত্রীদের বলেন, কলেজে প্রবেশের আগে গেটে তাদের মাথার স্কার্ফ খুলে ফেলতে। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তোলায় ম্যানেজমেন্ট বলে যে, তারা শুধুমাত্র হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন করছে। পরে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। এদিকে, একদল ছাত্র কলেজের বাইরে জড়ো হয় এবং মেয়েদের ক্লাসরুমে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার দাবিতে সেøাগান দেয়। পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ডিসিপি রবীন্দ্র গদাদি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক আসার পরও কর্মী ও ছাত্রীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা পরে অচলাবস্থায় শেষ হয়। প্রকাশ পাটিল, যিনি কলেজটি পরিচালনা করেন, বলেছেন, ‘শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা বাড়ি ফিরেছেন, এবং দেখে মনে হচ্ছে তারা নিশ্চিত। তারা আগামীকাল তাদের হিজাব ছাড়াই কলেজে ফিরতে পারে।’ বাল্লারিতে প্রথম শ্রেণির সরকারি সরলাদেবী কলেজ এবং বিজয়পুরা শহরের সরকারি কলেজেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক পরীক্ষা এড়িয়ে গেছে, কিন্তু বাল্লারি কলেজ বৃহস্পতিবার যারা মিস করেছে তাদের জন্য এটি পুনরায় নির্ধারণ করতে সম্মত হয়েছে। মালনাদ অঞ্চল এবং মহিশূর, মান্ডা এবং চামরাজানগর জেলা জুড়ে বিক্ষোভ একাডেমিক পরিবেশকে ব্যাহত করতে থাকলেও পরিস্থিতি প্রায় শান্তিপূর্ণ ছিল। যাইহোক, কলেজগুলোতে ক্লাসে অংশ নেয়া মুসলিম মেয়েদের সংখ্যা কম ছিল। মহিশূরের ডিডিপিইউ ডি কে শ্রীনিবাস মূর্তি বলেছেন যে, ‘নরসিংহরাজ সীমার একটি পিইউ কলেজে বৃহস্পতিবার ২৯১ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সেখানে মোট ২৯৩ জন মুসলিম শিক্ষার্থী রয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আমাদের জানিয়েছেন যে, হাইকোর্টের রায়ের পরই তারা ক্লাসে উপস্থিত হবেন। আমরা এই শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করব।’
পিইউ এবং ডিগ্রি কলেজের কর্মীরা জানিয়েছেন যে, বেশিরভাগ মুসলিম মেয়েরা গত কয়েকদিন ধরে ক্লাস এড়িয়ে গেছে। ‘তারা শ্রেণীকক্ষে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে চিন্তিত,’ একজন কর্মী বলেছেন। মহিশূর জেলার নানজানগুদ তালুকের একটি স্কুলের এক ডজনেরও বেশি শিক্ষার্থী ক্লাস এড়িয়ে গেছে। কোডাগুতে, মাডিকেরির ফিল্ড মার্শাল কেএম করিয়াপ্পা কলেজে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী তাদের হিজাব ছাড়া ক্লাসে যেতে অস্বীকার করে বাড়ি ফিরে য্য়া। কুডিগে একটি পিইউ কলেজে নয়জন ছাত্রী বাড়ি ফিরে যায়। অন্যান্য অনেক স্কুল এবং কলেজের মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব খুলতে অস্বীকার করার পরে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
হাসানে, মহিলা পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দল বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার পরেও একটি স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। ‘কলেজে মাত্র ২৯ জন মুসলিম ছাত্রী রয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১৭ জন বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ করেছে। তাদের সাথে বহিরাগতরা যোগ দিয়েছিল,’ অধ্যক্ষ মঞ্জুলা কদম বলেছিলেন। উপকূলীয় জেলা উপ্পিনানগাডির সরকারি প্রথম শ্রেণির কলেজ হিজাব নিষিদ্ধের কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের সমর্থনে বেরিয়ে আসায় দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে। অধ্যক্ষ সুবাপ্পা কাইকাম্বা বলেন, বুধবার ছাত্রীরা হিজাব পরে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। হাইকোর্টের অন্তর্র্বতী আদেশের বিষয়ে তাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে, হিজার বিতর্কে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কর্নাটকের জৈন পিইউ কলেজের এক অধ্যাপিকা। চাঁদনি নামে ওই অধ্যাপিকার অভিযোগ, তাকে কলেজে ঢোকার মুখে হিজাব খুলতে বলেন কর্তৃপক্ষ। এর পরেই তিনি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। টুমাকুরু-র জৈন পিইউ কলেজের ওই অধ্যাপিকার দাবি, গত তিন বছর ধরে চাকরি করছেন। হিজাব পরেই শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। কখনও তাকে কেউ বলেননি, হিজাব খোলার কথা। এই প্রথম তাকে এ ভাবে বাধা দেয়া হল। চাঁদনি-র কথায়, ‘হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার কলেজের অধ্যক্ষ বললেন, হিজাব অথবা অন্য কোনও ধর্মীয় চিহ্ন থাকে, এমন পোশাক পরে ক্লাস নেওয়া যাবে না। কিন্তু গত তিন বছর ধরে তো আমি হিজাব পরেই ক্লাস নিলাম!’ চাকরি ছাড়া প্রসঙ্গে তার মন্তব্য, ‘এই নতুন সিদ্ধান্ত আমার আত্মমর্যাদায় আঘাত করেছে। তাই ইস্তফা দিলাম।’ ইস্তফাপত্রেও এ কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। হিজাব নিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে লেখেন, ‘আপনাদের এই অগণতান্ত্রিক কাজের আমি তীব্র নিন্দা করছি।’ অন্য দিকে কলেজের অধ্যক্ষ কে টি মঞ্জুনাথের দাবি তিনি বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কেউ চাঁদনিকে বলেননি যে হিজাব পরে ক্লাস নেয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হিজাব-বিতর্ক তীব্র আকার নিয়েছে। হিজাব নিষেধাজ্ঞার পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে আদালতে। মঙ্গলবার কর্নাটক হাই কোর্টে এক আন্দোলনকারী ছাত্রীর আইনজীবী সওয়াল করেন, কলেজে যদি দোপাট্টা, বালা, ঘোমটা দিয়ে যাওয়া যায় তা হলে হিজাবে আপত্তি কেন? হিজাবের মতো এগুলিও একটি একটি সম্প্রদায়ের পোশাক। হাই কোর্ট তার পরবর্তী সিদ্ধান্তে আসা পর্যন্ত কর্নাটক রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে হিজাব পরে যাওয়া যাবে না বলে জানানো হয় একটি অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশে। তার পরেও অবশ্য বিভিন্ন কলেজে হিজাব আন্দোলন দেখা গিয়েছে। সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস, টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।