Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বায়ুদূষণ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৯ এএম

বাংলাদেশে হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ)-এর হিসেব মতে বাংলাদেশের ১২.৫% মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যদিও এটি অতিশয় কম প্রাবল্য হতে পারে। আর যে সব দেশে ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হার অনেক বেশি, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। ২০১৯ সালের হিসাবে এদেশে প্রায় ৮৪ লক্ষ পূর্ণ বয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছিল, ২০৪৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লক্ষে পৌঁছাবে। ২০১৯ সালের হিসাবে আরও প্রায় ৩৮ লক্ষ মানুষ প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থায় ছিল। শতকরা ৩ ভাগ মানুষের মৃত্যুর জন্য এই ডায়াবেটিস সরাসরি সম্পৃক্ত।

বাংলাদেশের মানুষের ডায়াবেটিস হবার অনেকগুলো কারণ রয়েছে ঃ জিনগত ত্রুটি, পরিবেশগত ও ব্যক্তিগত ঝুঁকি। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ক্রুটিযুক্ত, ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ও অন্যান্য খারাপ অভ্যাস যেমন:
১. প্রতিদিন প্রচুর শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া,
২. অতি অল্প পরিমানে আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া,
৩. শাকশবজি এবং তাজা ফলমূল কম খাওয়া,
৪. একবারে অধিক খাওয়া ও দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা ইত্যাদি
৫. ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়া,
৬. ক্রমশ শারিরীক শ্রমহীন জীবন-যাপনে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া,

৭. মুটিয়ে যাওয়া,
৮. উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে না রাখা,
৯. বারবার বিভিন্ন সংক্রমনে আক্রান্ত হওয়া,
১০. চিত্ত বিনোদনের আকাল ও চাপযুক্ত দিনাতিপাত;
১১. সর্বোপরি, ছোটবেলা থেকেই দৈহিক স্থুলতায় ভোগা।
এগুলো সমাধানের রাস্তা খোলা আছে, যদিও অতি সরল নয়।

অন্যদিকে, ২০২২ এর জানুয়ারীতে ঢাকা এ পৃথিবীর সবচেয়ে বায়ুদুষিত নগরীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এবং বরাবরই এর কাছাকাছি অবস্থানেই ছিল ঢাকা। দেশের অন্যান্য শহরের অবস্থাও অনুরূপ, তবে রাজশাহীতে একটু কম।

কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ের কিছু বৈশ্বিক গবেষণা আমাদের আরও কিছু নূতনতর ফ্যাক্টরের দিকে নজর দিতে বাধ্য করছে যেগুলোও অন্যান্য অনেক দেশের মানুষের মত, বাংলাদেশের মানুষেরও ডায়াবেটিস বৃদ্ধির ঝুঁকি হিসেবে ভেবে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অধুনা প্রকাশিত গবেষণায় ফলাফলে দেখা দিয়েছে, বায়ু দূষণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। কম বয়সী বা তরুন-তরুনীরাই বরং বেশি করে বায়ু দূষণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে পরছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সাথেও পরিবেশ দূষণের নিবিড় সংযুক্তি প্রমানিত।

বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, ২০১৮ সনে শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণেই পৃথিবীতে ৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের ডায়বেটিসজনিত দীর্ঘস্থায়ী জটিলতাগুলো পরিবেশ দূষণের কারনে বহু গুণ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

বাতাসে ঘুরে বেড়ানো ধোঁয়া যেমন: গাড়ীর ইঞ্জিনের ধোঁয়া, ইট ভাটার ধোঁয়া, রান্নার ধোঁয়া ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীর জন্যে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। তবে এটা কি কি ভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় তা বিজ্ঞানীরা এখনও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না, তবে বায়ুদুষণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয় এটা প্রমানিত। তামাক, বিড়ি- সিগারেটের ধোঁয়া যেমন ডায়াবেটিস হবার কারণ, তেমনি ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা বৃদ্ধিরও কারণ।

ধুলোবালি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, এগুলো ডায়াবেটিস হবার ও ডায়াবেটিসের জটিলতা বাড়ার সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের বাতাস ধুলো-ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। রাস্তা-সেতু-ইমারত বানাতে প্রতিদিন যেভাবে ধুলো বাতাসে উগড়ে দেয়া হচ্ছে, তা ভয়াবহ। পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে সতর্ক করে যাচ্ছেন।

তাহলে, আমরা এখন কি করব?
ডায়াবেটিসই একমাত্র সমস্যা নয়। আরও নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আসছে পরিবেশ দূষণ। সতর্ক হওয়া ও ব্যবস্থা নেবার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।

এখনই যা করতে পারি আমরাঃ
১) ধূমপান শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনতে জোরদার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেয়া;
২) গাড়ির ধোঁয়া নির্গমন নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সুপারিসমালা বলবত করা;
৩) রাস্তা-সেতু-ইমারত বানাতে ধুলো সৃষ্টি কমাতে উন্নত দেশগুলোর পদ্ধতি মেনে চলা;
৪) ইট ভাটায় বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা;

একাজে দেশের সকল মানুষকে সাথে নিতে হবে, তাই সরকারকে সামগ্রিক জনমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিসের তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যান্য ঝুঁকি কমাবার উদ্যোগ নেবার সাথে পরিবেশ দূষণ রহিতকরণও বিবেচনায় আনতে হবে।

ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন