Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বসন্তে নবজাতকের যত্ন ও পরিচর্যা

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১০ এএম

এই সময় বিভিন্ন ভাইরাল অসুখ শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে। তাই এই সময় নবজাতকের যত্ন সঠিকভাবে নিতে সব মা-বাবাই একটু বেশি চিন্তায় থাকেন। কেননা, এই ্্্্্্ঋতুতে ছোট্র শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যদিও নবজাতক বলতে এক থেকে আটাশ দিন বয়সি শিশুকে বোঝায়। তারপরও শিশুদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বসন্তের রোগে ভোগার ঝুঁকি বেশি। এজন্য এইসময় নবজাতকের প্রতি একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয় বাবা-মায়ের। তা হলে জেনে নিন নবজাতকের যত্নে করণীয় কী এবং কীভাবে নবজাতকের পরিচর্যা করতে হয়-

তাপমাত্রাঃ সাধারণ শিশু মায়ের গর্ভের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার পর পারিপার্শিক তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ও শিশুর শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। আরও মনে রাখতে হবে, মায়ের স্বাস্থ্যের সঙ্গে নবজাতকের স্বাস্থ্যও সম্পর্কযুক্ত। তাই মায়ের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে একইসঙ্গে।

বুকের দুধ ঃ জন্মের পরপরই শিশুকে প্রচুর মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে খুব জলদি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার ফলে শিশু সহজে ঠান্ডা, কাশি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হবে না। অবশ্যই সতর্কভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, চাহিদা অনুয়ায়ী শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা।

গরম কাপড় ঃ নবজাতক শিশুর ত্বক ও ম্বাসতন্ত্র অত্যন্ত অপরিণত। তাই শিশুর দেহ বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে না ও সহজেই ঠান্ডা লেগে যায়। শিশুর দেহ উষ্ণ রাখতে তাকে পর্যাপ্ত আরামদায়ক গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

শিশুর গোসল ঃ শূন্য থেকে ৩০ দিন বয়সের নবজাতকদের সপ্তাহে দু‘দিন, এরপর থেকে অর্থাৎ ৩০ দিনের বেশি বয়সি শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানো উচিৎ। তবে অল্প ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর নাক দিয়ে পানি পড়লে, নিউমোনিয়ার কোনও লক্ষণ থাকলে বা ঠান্ডা লাগার কোনও লক্ষণ থাকলে গোসল করানোই উচিৎ নয়। খুব ছোট শিশু কিংবা কিংবা ঠান্ডার সমস্যা আছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে বা যেদিন বেশি কুয়াশা থাকবে, সেদিন শিশুর গোসলের সময় কমিয়ে দিয়ে হালকা উষ্ণ পানিতে তা করাতে পারেন।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি ঃ এসময়ে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। নবজাতক শিশুর শ্বাসনালি অতি সংবেদনশীল হওয়ায় তার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই শিশুর ঘরে কাপের্ট, লোমমুক্ত চাদর, কম্বল ইত্যাদি ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।

যদি পরিবারের কোনও সদস্য বা কোনও আত্মীয়র সর্দি, কাশি, ভাইরাল জ্বর ইত্যাদি থাকে, সেক্ষত্রে মা ও শিশুকে তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশুকে এসময়ে যথাসম্ভব ঘরের বাইরে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ত্বকের যত্ন ঃ বসন্তের শুষ্ক রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে শিশুর ত্বকের ক্ষতি হয়। এমনকী বিভিন্ন চর্মরোগও হতে পারে। এমন পরিস্থিতি এ্ড়াতে শিশুর ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। অনেকের ধারণা, নবজাতকের মাথায় অনেক বেশি তেল দিলে মাথার তালুতে হলুদ বা বাদামি আঁশের মতো স্তর পড়ে। একে ক্রেডল ক্যাপ বলে। ক্রেডল ক্যাপ হয় মূলত মাথার তালুতে অনেক বেশি সিবাম বা তেল উৎপন্ন হলে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অয়েন্টমেন্ট লাগাতে হবে।

ডায়াপার ঃ নবজাতকের ডায়াপার পরালে অবশ্যই নিয়মিত তা বদলানোর কাজটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে, যাতে মল-মুত্র ত্যাগের পর তা দীর্ঘক্ষণ শিশুর গায়ে লেগে না থাকে। এক্ষেত্রে শিশুদের শরীরে বিশেষ ধরণের অ্যান্টি-র‌্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা ভাল। নইলে শিশুর শরীরে ফুসকুড়ি উঠতে পারে।

রোদ ঃ শিশুর ব্যবহার্য লেপ, তোষক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি কড়া রোদে শুকাতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ভালভাবে ঝেড়ে পরিষ্কার করাও জরুরি। এগুলোতে কাপড়ের কভার ব্যবহার করা ভাল। কারণ, তা করলে ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সহজেই।

এসময়ে শিশুর শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এতে তার ভিটামিন ডি-র চাহিদা পূরণ হবে এবং হাড়ও শক্ত হবে। তবে শিশুকে ঘরের বাইরে না নিয়ে দরজা-জানালার কাছে রোদ লাগানোর ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।

সতর্কতাঃ ঠান্ডা লেগে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেলে, বুকে কফের ঘড় ঘড় শব্দ হলে বা অন্য যে কোনও রোগের লক্ষণ চোখে পড়লে দেরি না করে খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। অনেকে মনে করেন, শিশুদের এসব লক্ষণ সাধারণত কোনও বড় সমস্যা নয়, তাই তারা অবহেলা করেন বা ঘরোয়া চিকিৎসা করেন, যা একদম ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে অহেতুক কোনও ওষুধ খাওয়ানো বা প্রয়োগ করা খুবই বিপজ্জক।

আফতাব চৌধুরী
সাংাবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন