২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
শীতের নানান সবজির মধ্যে শিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এটি ছোট বড় সকলের নিকট অতি পরিচিত। এ সবজির পুষ্টিগুণ প্রচুর। শিম শুধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় না, রোগ জীবাণু শরীরকে আক্রমণ করতে দেয় না। শিমে প্রচুর পরিমাণে আমিষ বা প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি, সি ও কে উপাদান পাওয়া যায়। যা আমাদের সুস্থ দেহ গঠনে ও রোগ নিরাময়ে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
রাসায়নিক উপাদান : পাতা ও ফলে থাকে স্টেরল, ফ্যাটি এসিড, পামিটিক, পামিটোলেইক, লাইনোলেয়িক এবং লাইনো লেনিক এসিড। বীজে থাকে গ্লোবিউলিন, এলবুমিন, লেকটিন, ট্রিপসিন, এমাইনো, অ্যালকোহল, স্পারমিডিন, লেগহিমোগ্লোবিন প্রভূতি বীজের খোসায় পেকটিক পলিস্যাকারাইড পাওয়া যায়।
পুষ্টি উপাদান : প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী তরতাজা শিমে পুষ্টি উপাদান নিম্নরুপ: জলীয় অংশ ৮৬.১ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩.৯ গ্রাম, শর্করা ৬.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম, আঁশ ১.৮ গ্রাম, খনিজ উপাদান ০.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ২.৬ গ্রাম, ভিটামিন এ ১৮৭ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০১মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম, তাছাড়া শিমে জিঙ্ক, সিলিকন ও ভিটামিন বি-৬ পাওয়া যায়।
উপকারিতা : শিম অতি সহজে পাওয়া যোগ্য সবজি। এ সবজির নানা উপাদান মানব শরীরকে বিভিন্ন প্রকার রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই নিয়মিত পরিমাণ মতো শিম খাওয়া দরকার।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : কোনো কারণে পায়খানা শক্ত হলে বা পায়খানা কম হলে শিমের তরকারি খান বেশ উপকার পাবেন। শিমে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকে এই আঁশ দেহের মলকে নরম করে এবং দেহ থেকে বের করতে সাহায্য করে।
রাতকানা রোগ দূর করে: ভিটামিন এর অভাবে চোখের জ্যোতি কমে যায়। চোখে নানা সমস্যা হয়। শিমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে যা মানব শরীরের চোখের সমস্যা দূর করে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। এ সবজিটি শিশুদের নিয়মিত খেতে দিন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে : নানা কারণে আমাদের দেহে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষ ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়। শিমে ক্লোরোফাইল নামে একটি উপাদান থাকে যা ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধি থেকে দেহকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত শিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারাও শিম পরিমাণ মতো খেতে পারেন। শিমের ফাইবার বা আঁশ যুক্ত হওয়ায় ধীরে ধীরে সুগার রক্তে প্রবেশ করে। এতে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগার জমার সম্ভাবনা থাকে না। রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য রক্ষায় : শিমের নানা পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মহিলার খুবই উপকারি একটি সবজি। এতে গর্ভস্থ শিশুর গঠন সুন্দর ও সবল হয়। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হয় বেশী, তাই নিয়মিত শিম খেলে উপকার পাবেন। মা ও শিশুর পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে।
মানসিক চাপ কমাতে : শিমের ফলিত উপাদান শরীরে অতি সহজেই শোষিত হয়, ফলে দেহের অস্থিরতা, মানসিক চাপ, উদাসিনতা কমিয়ে দেয়।
ত্বক ও চুল সুন্দর করে : শিমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। ফলে দেহের চামড়ার রোগ প্রতিরোধ করে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। চামড়ার কোষ কলাগুলোকে সতেজ রাখে। এ সবজির উপাদান গুলো চুলের গঠন সুন্দর করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে।
হাঁড় শক্ত রাখে : শিমে সিলিকন জাতীয় উপাদান থাকে। যা দেহের হাঁড়গুলোকে সুরক্ষা করে ও সুগঠিত করে। এ সবজির ক্যালসিয়াম দাঁতের নানা সমস্যা দূর করে। মাংস পেশীর বিষ-ব্যথা দূর করে।
হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে : শিমে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ইনফ্ল্যাটরি উভয় উপাদান থাকে যা হার্টের সুস্থার জন্য ভালো কাজ করে এবং ক্লোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফরে করোনারি হৃদরোগ ও হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
স্মৃতি শক্তি বাড়ায় : শিমে ভিটামিন বি-৬ থাকে। যা দেহের স্নায়ু তন্ত্রকে সুস্থ ও সবল রাখে। স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে প্যারালাইসিস রোগীদের বেশ উপকার করে শিম।
রক্তশূণ্যতা দূর করে : শিমে ভালো পরিমাণে লৌহ বা আয়রণ থাকে। যাদের শরীরে রক্ত পরিমাণ কম, রোগা রোগা, বসা থেকে উঠলে মাথা ঘুরায় তারা নিয়মিত শিম খান বেশ উপকার পাবেন। ধীরে ধীরে দেহে রক্ত তৈরী হবে এবং ঘাটতি পূরণ হবে।
অপকারিতা : শিমে সামান্য পরিমাণে ক্ষতিকর সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড উপাদান থাকে। শুকনো শিমে এ উপাদান বেশী থাকে। তাই শুকনো শিম রান্নার সময় পানি দিয়ে ফুটিয়ে পানি ফেলে দিতে হবে। তারপর তরকারি রান্না করতে হবে। না হয় এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সতর্কতা : শিম খাওয়ার পর এলার্জি ও মাথা ব্যথার তীব্রতা বাড়লে খাবে না। কিডনি রোগীরা বা কিডনিতে সমস্যা আছে তারা শিমের বিচি ফেলে দিয়ে শুধু শিম খেতে পারবেন। কিডনি রোগীরা শিম খাবেন না। যেকোন সবজি খেলে যেকোন সমস্যা দেখা দিয়ে সে সবজি খাবেন না। নিয়মিত টাটকা শাক-সবজি খান সুস্থ্য থাকুন।
মো: জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।