Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

উন্নয়ন প্রকল্পে বিএসএফ’র বাধা

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:৫২ এএম

বিএসএফ’র বাঁধার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন গতিহীন হয়ে পড়েছে। বিএসএফ’র অযাচিত বাঁধার পর উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগও সমঝোতা সত্বেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা যত্রতত্র বাঁধা সৃষ্টি করে উন্নয়ন ব্যহত করছে। বহুল প্রত্যাশিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা এবং বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ গত বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিএসএফ’র বাঁধার কারণে একাধিকবার কাজ বন্ধ থাকায় বিলম্বিত হয়। চলতি অর্থবছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আবারো বিএসএফ’র বাঁধায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণে উভয়পক্ষের সম্মতি ও সমঝোতার শর্ত রয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, বিলোনিয়া স্থলবন্দর এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু অংশ সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে পড়ার দাবি তুলে বিএসএফ প্রকল্পের কাজে আবারো বাঁধা দিয়েছে। বিএসএফ’র বাধার কারণে গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল এবং ১০ জুন থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি এর প্রাক্কলন খরচ এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের খরচসহ সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে চলেছে। কাজে বার বার বাধা আসার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিলের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

দেশের ১৭তম স্থলবন্দর হিসেবে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া স্থলবন্দরটি ২০০৮ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রস্তাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। মূলত: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরাসহ সন্নিহিত এলাকার সাথে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় এই বন্দর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রকল্পের কাজের শুরুতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সহযোগিতা করলেও কাজ শেষের দিকে আসার পর সীমানাবিরোধ সামনে এনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ইতিমধ্যে বিরোধীয় অংশের উন্নয়নে ব্যয় হওয়া কোটি কোটি টাকা কোনো কাজে আসছে না। দ্বিপাক্ষিক সম্মতিতে এবং দুই দেশের বাণিজ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহিত প্রকল্পে বিএসএফ’র এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বৈরীতাপূর্ণ আচরণে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বিষ্মিত ও বিক্ষুব্ধ। ফেনী সীমান্তে বিরোধপূর্ণ এলাকার ভ’মিবিরোধ নিস্পত্তির পর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপিত না হওয়ায় পরশুরামের মুহুরীর চরের ভ’মি মালিকরা এখনো বিএসএফ’র বাধার কারণে নিজেদের জমিতে যেতে পারছে না বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ’র বেপরোয়া, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং গুলিবর্ষণের কারনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিশ্বের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অথচ দুই দেশের সরকার ও ক’টনৈতিক অবস্থান থেকে প্রায়শ বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় রয়েছে।

নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব সময় সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সংযম প্রদর্শন করা হয়েছে। সীমান্তে গরু চোরাচালানের মত তৎপরতার সাথে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও দালালরা সম্পৃক্ত থাকলেও বিএসএফ শুধু বাংলাদেশীদের উপর গুলিয়ে চালিয়ে মানুষ হত্যা করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে সীমান্তে লিথ্যাল ওয়েপন ব্যবহারসহ সীমান্তহত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও বিএসএফ-এর বাড়াবাড়ি কখনো বন্ধ হয়নি।বিএসএফ’র বাড়াবাড়ির কারণে ২০০১ সালে রৌমারী সীমান্তে বিএসএফ ও বিডিআরের মধ্যে ভয়াবহ সীমান্তযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ভারতের রফতানি বাণিজ্য ও রেমিটেন্স আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম বড় অংশীদার। গত দেড় দশকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে ভারতের প্রত্যাশিত প্রায় সবকিছুই করেছে বাংলাদেশ। প্রায় বিনাশুল্কে বাংলাদেশের নৌ, রেল, সড়কপথ ও স্থলবন্দরকে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে ভারত। পক্ষান্তরে, অমীমাংসিত সীমান্ত ইস্যু, গঙ্গার পানি ও তিস্তা চুক্তিসহ বহুল প্রত্যাশিত অনেক কিছুই পায়নি বাংলাদেশ। দ্বিপাক্ষিক সম্মতিতে শুরু হওয়া আখাউড়া-লাকসাম রেলপথের ডুয়েল গেজ নির্মাণ এবং বিলোনিয়া স্থল বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের শেষ প্রান্তে এসে বিএসএফ’র বাধা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএসএফ’র অপ্রীতিকর ভ’মিকার প্রতিবাদ হিসেবে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ করা উচিত। দ্বিপাক্ষিক ক’টনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টির স্থায়ী নিম্পত্তি হওয়া আবশ্যক। শুধু মুখে মুখে সম্পর্কের অনন্য উচ্চতার কথা বলে কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশকে অবশ্যই নিজের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন