Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাটকীয় মোড় নিতে পারে পরিস্থিতি

সেনা সরাচ্ছে কানাডা, ইউক্রেন বিমানবন্দরে বিদেশি যাত্রীদের ভিড়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এড়াতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় ঢোকার ইচ্ছা বাদ দিতে পারে ইউক্রেন। বিবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই নাটকীয় ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত কিয়েভের রাষ্ট্রদূত ভøাদিম প্রিস্টাইকো। রাশিয়া মূলত ন্যাটো ইস্যুতেই নিরাপত্তা আশঙ্কার কথা জানিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ বাড়িয়েছে। ফলে তাদের দাবি মেনে নিলে বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে নাটকীয় মোড় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেন এখনো ন্যাটোর সদস্য নয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা এই সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। ন্যাটোর পক্ষ থেকেও কিয়েভকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে। ইউক্রেন ন্যাটের সদস্য হলে পশ্চিমা সেনারা রাশিয়া সীমান্তের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের অভিযোগ, পশ্চিমা জোটের সঙ্গে ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠতা বাড়লে দেশটি ন্যাটো ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি হয়ে উঠতে পারে, যা হবে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এটি ঠেকাতে সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখের বেশি সৈন্যসহ ভারী সমরাস্ত্র মোতায়েন করেছে মস্কো। রুশ সেনারা ইউক্রেনকে তিন দিন থেকে ঘিরে ফেলেছে বলে দাবি পশ্চিমাদের। রাশিয়া যেকোনো দিন অদ্ভুত কোনো অজুহাত তুলে সাবেক সোভিয়েত দেশটি আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ওয়াশিংটন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রদূত প্রিস্টাইকোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা থেকে কিয়েভের সরে আসার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। জবাবে তিনি বিবিসি ইউক্রেনকে বলেন, যেভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে ও সেদিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমরা সরে আসতেও পারি। যদিও রাশিয়া বরাবরই ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে। মস্কো বলেছে, বাধ্য না হলে তাদের ইউক্রেন আক্রমণ করার কোনো ইচ্ছা নেই। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর এবার ইউক্রেন থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডাও। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার চলমান উত্তেজনার মধ্যে রোববার কানাডা সরকার এ ঘোষণা দিল। খবর আনাদোলুর। বর্তমানে কানাডার যেসব সেনা ইউক্রেনে অবস্থান করছে, তাদের দ্রুত ইউরোপে ন্যাটোর অন্য কোনো ঘাঁটিতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কানাডা সেনাবাহিনী যখন নিরাপদ মনে করবে, তখন আবার ইউক্রেনে ফিরে আসবে। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি রোববার বলেছেন, ইউক্রেনে যে কোনো দিন রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকে সেখানে অবস্থানরত সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যে কোনো সময় আক্রমণ করার মতো রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন জন কিরবি। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার চলমান উত্তেজনার মধ্যে আমেরিকা ইউরোপে আরও তিন হাজার সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ন্যাটো সামরিক জোটভুক্ত দেশ পোলান্ডে পাঁচ হাজার সেনার সমাবেশ ঘটাতে যাচ্ছে আমেরিকা। আগেই ইউরোপজুড়ে ৮০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। অন্যদিকে কৃষ্ণসাগরে ৩০টির বেশি যুদ্ধজাহাজের তৎপরতাকে রাশিয়া প্রশিক্ষণ মহড়া বলে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু জন কিরবি বলছেন, এ মহড়া ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। মর্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সতর্কবার্তা জারির পর ইউক্রেনে অবস্থানরত আমেরিকার নাগরিকদের জন্য পোল্যান্ড তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ফ্লোরিডা ন্যাশনাল গার্ডের ১৬০ সদস্যকেও সরিয়ে নেয় আমেরিকা। এসব গার্ড ইউক্রেনের সেনা সদস্যদের প্রশিক্ষণে নিয়োজিত ছিল। এদিকে, ইউক্রেনের আকাশপথে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় দেশটিতে বসবাসরত বিদেশিরা নিজ দেশে পাড়ি জমাতে শুরু করেছে। তাদেরই একজন মরক্কোর উদ্যোক্তা এমরান বাউজিয়ান। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ বিমানবন্দরে অপেক্ষারত অবস্থায় যখন তার ফ্লাইটের বোর্ডিং চিহ্ন জ্বলে উঠল সঙ্গে সঙ্গে তার চোখেমুখে ফুটে উঠল স্বস্তি। গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেন সীমান্তে লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে মস্কো। দুই দেশের মধ্যে এমন উত্তেজনার মধ্যেই নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে অনেক রাষ্ট্রই। এরপর থেকেই কিয়েভ ছাড়তে শুরু করেন বিদেশিরা। বিমানবন্দরের পাসপোর্ট কন্ট্রোলের দিকে হেটে যাওয়ার সময় ২৩ বছর বয়সী এমরান বলেন, ‘আমি মনে করি যতোদ্রুত সম্ভব ইউক্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি পরিস্থিতির কারণেই এখান থেকে চলে যাচ্ছি। কারণ আমার কাছে জীবনের মূল্য অনেক। যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে জানিয়েছে যে কোনো দিনই রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে কোনো মুহূর্তে ইউক্রেনের আকাশে নিজেদের বিমান পাঠানো বন্ধ করে দিতে পারে বিমান সংস্থাগুলো। এছাড়াও ইউক্রেনের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছে নেদারল্যান্ডসের এয়ারলাইনস কোম্পানি কেএলএম। ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখের বেশি রুশ সেনার মহড়ার কারণে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে এমন কথা উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তারা। ইউক্রেনে খেলাধুলা নিয়ে কাজ করা মার্কিন কোচ ডেনিস লুসিনস বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করিনা তেমন (যুদ্ধের) কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো এখন পর্যন্ত কেউই এটি ধারণা করতে পারছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কোন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন।’ রয়টার্স, আনাদোলু, ফ্রান্স২৪।



 

Show all comments
  • Masud Mia ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৩ এএম says : 0
    মি. পুতিন চায়ছেন বিশ্ব ক্ষমতার পরিবর্তন আসুক , পুতিন যানে আমেরিকাকে যুদ্বে ঝড়াতে পারলে বিশ্বের ক্ষমতার পালাবদল হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ রাজু হোসাইন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৩ এএম says : 0
    দুনিয়াবি আমেরিকার আগ্রাসন বন্ধ হোক রাশিয়া এটাই চায় আর কিছুই নয়!
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul H Bhuiyan ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    যুদ্ধ আশা করা জগণ্য,তবুও আমি চাই ইউরোপে একটা যুদ্ধ হোক।তাহলে অন্তত ওরা বুঝতে পারবে এশিয়া ও আফ্রিকায় ওদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ কত অমানবিক!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Abul Mamun ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    আফগানিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে পতনের শেষ প্রান্তে এসে সমাজতান্ত্রিক দেশ রাশিয়া বর্তমানে কিছুটা অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করেছিল, তা আবার ধ্বংস করার মনেবাসনা নিয়েই ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে জড়াচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মীর নিসার উদ্দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    ইউক্রেনের অপরিণামদর্শী নেতাদের জন্য গত ১০ বছরে তারা ক্রিমিয়া, দনবাস হারিয়েছে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সবই হয়েছে আমেরিকার প্ররোচনায় লাভ কিছুই হয় নি। তাই উচিত তাদের নিরপেক্ষ থাকা, ন্যাটোয় যোগ না দেয়া। আমেরিকার কাজ অন্য দেশে উস্কানি দিয়ে নিজের আখের গোছানো। রাশিয়ার মত বৃহৎ প্রতিবেশিকে রাগিয়ে বেশিদূর যাওয়া যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Anindya Kumar Pal ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৫ এএম says : 0
    গর্বাচেভের সাথে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আমেরিকা যে ইউক্রেনে ন্যাটোতে যোগ দেবে না। আমেরিকা কথা রাখে নি।
    Total Reply(0) Reply
  • Iqbal Hossain ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৫ এএম says : 0
    পশ্চিমাদের উস্কানিমূলক আচরণ পরিস্থিতি এমন ঘোলাটে করেছে। কৃষ্ণ সাগরে ইঙ্গ-মার্কিন নৌ মহরা থেকে এ অবস্থার সূত্রপাত। পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক দূরবস্থা হতে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে এই উত্তেজনার সৃষ্টি। রাশিয়া-চীন পশ্চিমাদের মোকাবেলায় সক্ষম এবং এরা পিছু হটবে বলে মনে হয় না । ফলশ্রুতিতে একটা বৃহৎ যুদ্ধের সম্ভাবনা খুবই বেশী।
    Total Reply(0) Reply
  • Jabed Hossain Rana ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
    রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে রাশিয়া পন্থী সরকার বসাবে,,,তারপর ডিফেন্স একদম নড়বড়ে করে রাখবে। যদি রাশিয়ার কোন সেনা নেটোর হাতে মারা যায় তাহলে গুষ্টিরপিণ্ডি ছাড়া করবে আর৷ একই সময় তুরস্ক হামলা করবে গ্রীসে,চীন করবে লাদাখে আর এই সুযোগে পাকিস্তান চেয়ে বসবে কাশ্মীর।মনে গিয়ে হল ইউক্রেনে হামলা করবেই আর নেটো আসলে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ