চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
তারুণ্য হচ্ছে কাচা বয়সের একটি উদ্দিপনার নাম। তারুণ্য অর্থ হচ্ছে বাধা না মানা। তীব্র স্রোতে উজান সাতারে পাড়ি দেয়া-ই তরুণদের কর্ম। তারুণ্য একটি অদম্য শক্তি। এটি অপ্রতিরোধ্য ঝড়। একটি দৃপ্ত শপত। একটি অপারেজয় দুর্জেয় ঘাটি। তারুণ্য এক আসাধ্য সাধনের কারিগর। অফুরন্ত প্রাণ শক্তি আর সৃষ্টির উম্মাদনা-ই তারুণের গৌরব। বদ্ধ কুঠিরের দুয়ার চুর্ণ করে চাওয়াটা অর্জন করা-ই তার ধর্ম। চেতানাদৃপ্ত তরুণরা যখন জেগে ওঠে তখন সকল প্রতিবন্ধকতার সকল চড়াই-উৎরাই মাড়িয়ে তাঁরা বিজয় ছিনয়ে আনে। বিজয়ের পুষ্পমালা তাঁদের পদচুম্বন করে। ইতিবাচক অর্জনসহ সকল সেক্টরে-ই রয়েছে তাঁদের অবদান। এটা সর্বজন বিধিত যে, কেবল তরুণরাই পারবে জাতিকে একটি শান্তির সমাজ উপহার দিতে। যে সমাজে থাকবেনা কোন ধরণের অন্যায়-অবিচার, শোষন, জুলুম, গুম, খুন, দুর্নিতী, ইভটিজিং, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি পাপচার। যে সমাজের মানুষ শান্তিতে আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ ও পালনে সর্বদা থাকবে বিভোর। যে সমাজে থাকবেনা নাস্তিক মুরতাদদের কোন প্রকারের আস্ফালন। এহেন সুন্দর সমাজ কেবল তরুণরাই বিনির্মাণ করতে পারবে।
তারুণ্যের গুরুত্ব : ইসলামে তারুণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তারুণ্য মানব জীবনের অমুল্য এক সম্পদ। এটা জীবন মহীরুহের বিকশিত চারাগাছ। তারুণ্য তথা যৌবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালীন জীবনে মুক্তির বিশাল বাগিচায় উপণিত হবে। মানব জীবন মানুষের মহামুল্যবাণ এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য তথা যৌবন। এ কারণে হাদিসের মধ্যে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে ঐসমস্থ তরুণদেরকে বসার সুযোগ দিবেন যারা তরুণ বয়সের সময়কে আল্লাহর রাহে ব্যয় করে কাটিয়েছে’।
অন্য এক হাদিসের মধ্যে আছে ‘তরুণ বয়সের ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হবে। একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশী খুশি হন যে সমস্থ তরুণরা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে’। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, “হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে তম্নধ্যে একটি হচ্ছে সে তাঁর যৌবন কাল কিভাবে ব্যায় করছে”। তরণকাল অত্যান্ত মূল্যবান ও মর্যাদাপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি আন্দোলনে বিজয়ের সাফ্যলের পিছনে রয়েছে তরুণ সমাজর আত্ম্যত্যাগ। এই তরুণদের রক্তের বিনিময়ে ভেঙ্গে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়েছে অসংখ্য সরকার বাহাদুরের রাজ্য সিমা। ইতিহাসে চির অম্লাণ হয়ে আছে তরুণদের আত্মত্যাগের স্মৃতি।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) বিশ্বমানবতার কল্যাণে তরুণদের নিয়েই ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে পৃথিবীর উতিহাাসে সর্ব প্রথম সংগঠন ‘হিলফুল ফুযুল যুব সংঘ’ গঠন করেছিলেন। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) যখন দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে মাঠে নেমেছেন সর্বাগ্রে তরুণরাই এগিয়ে এসেছে। হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.) তরুণ বয়সে ইসলাম কবুল করেন। আসহাবে কাহাফে যারা ছিলেন তাঁরা ও ছিলেণ তরুণ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে নবী! আপনার কাছে আমি তাদের (আসহাফে কাহাফ) এর ইতিবৃত্তান্ত সঠিক ভাবে বর্ণনা করেছি, তাঁরা ছিল কয়েকজন তরুণ। তাঁরা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ণ করেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি’। ( সূরা কাহাফ- ১৩ )
ইসলামের প্রথম মুয়াজিন বেলাল রা. ছিলেন তরুণ। হযরত ইব্রাহিম আ. যখন মূতি পূজার বিরুদ্ধেআন্দোলন করতে গিয়ে পাষন্ড নমরুদের তেরীকৃত আগুনে নিক্ষিপ্তি হয়ে শাহাদত বরণ করেন তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত ইউসুফ আ: যখন কারাগারে ছিলেণ তখন তিনি তরুণ ছিলেন। হযরত ইউনুস আ: যখন সমুদ্রের মাছ গিলে ফেলে তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত দাউদ আ: যখন জালিম শাসক জালুত কে হত্য করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ।
জিহাদের ময়দানে তরুণরা : যুদ্ধের ময়দানেও তরুণরা ছিলেন সক্রিয়। বদরের যুদ্ধে হযরত মুআয ও মুআওয়িয নামক দু’জন তরুণ সাহাবী ইসলামের ঘোর দুশমন আবু জাহিলকে হত্যা করেন। তখন তাঁরা ছিলেন তরুণ। খায়বার বিজয়ী বীর সেনানী শে’রে খোদা হযরত আলী রা. যিনি কামূছ দুর্গের লৌহ কপাট উপড়িয়ে ফেলে এক মুষ্টিতে নিয়ে এটাকে যুদ্ধের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন তখন তিনি ও ছিলেন তরুণ। মু’তার যুদ্ধে সেনাপতি ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ তিনি ও ছিলেন তরুণ। স্পেন বিজয়ী সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ তিনিও ছিলেন তরুণ। এ ছাড়া অন্যান্য যুদ্ধের সেনাপতি হয়রত আবু বকর (রা.) আলী (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত উসমান (রা.), হযরত জাফর (রা.), হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) হযরত তাইয়ার (রা.), হযরত যুবায়ের (রা.), হযরত তালহা (রা.), হযরত অব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.), হযরত আব্দুল্লা ইবনে মাসউদ (রা.), সহ প্রায় সাহবায়ে কেরাম (রা.)গণ ছিলেন তরুণ।
এমনিভাবে ইতিহাসের পাতায় পাতায লেখা রয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগর কথা। ভারত বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসেম যখন ভারতে ইসলাম প্রচার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। কুতাইবা বিন মুসলিম যিনি এশিয়ার মধ্যে ইসলামের বিস্তার ঘটান তখন তিনিও ছিলেন তরুন। বাংলাদেশে ও অনেক আলেম-উলামা, ওলী-আওলীয়াগণ ইসলামের প্রচার-প্রসার করেন তাদের প্রায়ই ছিলেন তরুণ।
১৯২৯ সালে যখন ভারতের কুখ্যাত কাফির ‘রাজপাল’ ‘রঙ্গিলা রাসুল’ নামে একটি বই প্রকাশ করে এবং এ বইটিতে মহানবী সা এর চরিত্র হনন এবং রাসুল সা সর্ম্পকে কটুক্তি করে তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আলিম উদ্দিন নামে এক ভাই শহিদ হন তখন তিনি ও ছিলেন তরুন। আমাদের বাংলার ইতিহাসে যে ক’টি সংগ্রাম হয়েছে, যেমন- ১৯৫২ সালের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৬৯ এর গণঅভুত্থান, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯২ এর বাবরী মসজিদ রক্ষার আন্দোলন, ১৯৯৪ এর নাস্তিক-মুরতাদ বিরুধী আন্দোলন, ২০০১ এর ফাতওয়া বিরোধী আন্দোলন, ২০১১ এর কুরআন বিরুধী রায় বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন, সবিশেষে চলমান ২০১৩ নব্য নাস্তিক মুরতাদ বিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে-ই তরুণরাই বলিষ্ট ভুমিকা পালন করে আসছে।
এ ধরণের আরো অসংখ্য উপমা পেশ করা যাবে । সবগুলোর পিছনে রয়েছে তরুণদের বলিষ্ট ভুমিকা। এখনো তরুণরা-ই তরুণরাই ইসলাম, রাসুল, দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তরুণদের পদচারণায় আজ মুখরিত। বিশ্ব জোরে চলছে আজ তরুনদের জয় জয়কার। জাতির প্রাণের স্পন্দন তরুণ সমাজ। তরুণরা যে উদ্দেশ্যেই জেগেছে সে উদ্দেশ-ই হাসিল করেছে। তাঁরা যে আন্দোলনে নেমেছে সে আন্দোলনে-ই সফলতা তথা বিজয় এনেছে। দেশ ও জাতির সংকটময় মুহুর্তে আল্লাহ.রাসুল (সা.) ও ইসলামের দুশমনদের উৎখাত করে শান্তির সমাজ তথা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদেরকে-ই ভাবতে হবে। প্রত্যেক দেশের, প্রত্যেক সমাজের তরুণরাই হলো মূল চালিকা শক্তি। তরুণরা জাগলেই পরিবর্তন হয়, হয় বিপ্লব। তরুণদের হাতে ধরেই হতে পারে দেশ ইসলাম ও মুসলমান উন্নতি। তাই তরুণদের ফিরে আসতে হবে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে, ইসলামের পথে, কুরআনের পথে। এ দেশে আল্লাহর হুকুমাত কায়েমের জন্য তাদেরকেই চেষ্টা মোজাহেদা করতে হবে। হে তরুণরা সম্প্রদায় আপনারা আবার জোগে ওঠুন! তরুণরা জেগে ওঠলে বিজয় আবশ্যাম্ভবী। তরুণরা জেগে ওঠবে এর প্রতিক্ষায় রইলাম। আল্লাহ আামাদের তরুণ সমাজকে দ্বীনের পথে জেগে ওঠার তাওফিক দিন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।