গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ছাত্রলীগের একক আধিপত্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত তটস্থ করে রাখা হয়। হলের সিনিয়র ছাড়াও বাহির থেকে যে কেউ এ হলে প্রবেশের সময় ভীতিবিহ্বল হয়ে তাঁদেরকে সালাম দিয়ে নিজেদের নাম, ডিপার্টমেন্ট ও জেলা বলতে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। ভুল বসত কখন কোন সিনিয়রকে সালাম দেওয়া মিস হয়ে যায়, এই ভয়ে হলের কর্মচারীদেরও সালাম দিয়ে নিজেদের পরিচয় জানাতে হয় প্রথম বর্ষের এসব নবীন শিক্ষার্থীদের।
এসব শিক্ষার্থীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, সারাদিন ভাই ভাই করতে করতে ক্লাসে শিক্ষককেও কখনো কখনো ভাই ডেকে ফেলি। ভাইদের সামনে এমনভাবে দাঁড়াতে হয় যেন রাজার সামনে তাঁর প্রজা দাঁড়িয়ে। হল প্রাঙ্গনে এমনভাবে পদচারণা করতে হয় যেন, রাজার রাজ্যে প্রজার বিচরণ। এতটাই দমিয়ে রাখা হয় আমাদের।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তিন শিক্ষাবর্ষের (২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ ) আবাসিক শিক্ষার্থীরা গণরুমে থাকে। যেখানে হলের রুমগুলোতে সর্বোচ্চ ৮ জন করে শিক্ষার্থী থাকতে পারে সেখানে প্রতি গণরুমে গাদাগাদি করে প্রায় ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী এই সংকটকালীন মুহূর্তেও থাকছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুম (ছদ্মনাম) বলেন, ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি হলে উঠেছি, এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ি। তিন বছর যাবত গণরুমে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন নিয়মিত ঠাসাঠাসি করে থাকি। হলের ছাত্রলীগের ভাইদেরকে আমার ইয়ারমেটরা মিলে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও সিট দিচ্ছে না, হল প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি তা মনে হয় বাস্তবায়ন হবে না। একই শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী তুহিন (ছদ্মনাম) বলেন, এই গণরুমগুলো বসবাসের অযোগ্য। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের থাবা চলছে, আবার আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকের বসন্ত রোগ দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হয়। পড়াশুনা ঠিকঠাক করতে পারছিনা।
সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এরকম গণরুমের সংখ্যা ১৬ টি। সেগুলো হলো ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৫, ১০৬, ১১২, ১১৩, ১১৪, ১১৫, ১১৬, ২০১, ২০২, ২০৩, ২০৪, এবং ২০৫ নং রুম। তদুপরি হলের বাকি সব রুমগুলোতে অনেক সংখ্যক সিট ফাঁকা রয়েছে। এছাড়াও ছাত্রত্ব শেষ এবং বহিরাগতরা সিটে থাকতেছে। হলের সিট গুলো ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বর্তমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর বিল্লাল হোসেন। হল ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আজহারুল ইসলাম মামুন এবং সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত। আজহারুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনিজত চন্দ্র দাসের অনুসারী এবং হাসিবুল হোসেন শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বর্ণনা দিয়েছেন যে, হাসিবুল হোসেন শান্ত ও তার কর্মীদের দাপটে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। উল্লেখ্য, করোনার এই সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, হলে কোন গণরুম থাকবে না। কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন আদতে ছিটেফোঁটাও হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।