গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. বিল্লাল হোসেন মিথ্যা অভিযোগে নিজ হলের শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করেছেন দাবি করে তার পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাবির সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই আল্টিমেটাম ঘোষণা দেন অধিকার পরিষদের সভাপতি আখতার হোসেন। মিথ্যা অভিযোগে হলের ছাত্রকে থানায় দেয়া এবং থানা থেকে আনার পথে অধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতা ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়ার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
বিক্ষোভ সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, যে প্রভোস্ট শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বরং সেই শিক্ষার্থীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে অনতিবিলম্বে সেই প্রভোস্টকে পদত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জিয়া হলের প্রভোস্টকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করা না হয় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর ছাত্র জনতাকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ রাজপথে নেমে আসবে। সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বিভাগের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে মত প্রকাশ করে বিপাকে পড়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মেফতাহুল মারুফও।
মারুফ বলেন, আমি কোনোদিন চিন্তাও করিনি যে, আমাকে কোনো ধরনের ট্যাগ দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হবে। আমি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে সেদিন যে আলাপটি তুলেছিলাম সেই আলাপের সারমর্ম হলো, কোন সরকারের আমলে যদি কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে সেই ঘটনা ঘটানোর পেছনে সেই সরকারের দায় আছে কি না।
তিনি বলেন, এটি একটি পলিটিক্যাল ডিসকোর্স। এটির ¯িঙঊনশর্ট কোনোভাবে হল ছাত্রলীগের কাছে যায়। তারা এটি নিয়ে প্রশড়ব তোলে এবং এটির ভুল ব্যাখ্যা করে প্রশাসনের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রভোস্ট স্যার কোনো ধরনের বাছবিচার না করে ছাত্রলীগের প্রোপাগাণ্ডাকে এডপ্ট করে নিয়ে আমাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন।
সমাবেশ শেষে সংগঠনটি একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি রাজু ভাষ্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে সূর্যসেন হল, মুহসীন হল প্রদিক্ষণ করে আবার রাজু ভাষ্কর্যে এসে শেষ হয়।
এসময় তারা হল যদি ছাত্রলীগ চালায়, শিক্ষক কেন বেতন পায়, পুলিশ দিয়ে নির্যাতন এই ক্যাম্পাসে চলবে না, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী চলবে না, জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষের, পদত্যাগ চাই ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থীকে বিভাগের মেসেঞ্জার গ্রুপে দেয়া এক মেসেজের ওপর ভিত্তি করে জঙ্গি অভিযোগে পুলিশে দিয়েছে হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. বিল্লাল হোসেন। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন প্রফেসর বিল্লাল। বৃহস্পতিবার রাত ও শুμবার দুপুর পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তের পর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ওই ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মাঝে মধ্যেই মেসেঞ্জার গ্রুপে বিভিনড়ব ইস্যু নিয়ে আলোচনা, ডিবেট এসব হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এগুলোর চর্চা করার চেষ্টা করি। কিন্তু মারুফের ওই বক্তব্যের মধ্যে সন্দেহজনক কী থাকতে পারে সেটা কোনভাবেই বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, তার বিষয়ে অভিযোগ পাবার পর আমরা তার এলাকায় খোঁজ নিয়েছি। তার পরিবারের বড় দুই রাজনৈতিক দলের সাথেই সংশ্লিষ্টতা আছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে তার কোনো দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই। সে যে মন্তব্য করেছে এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মতামত। তাই আমরা তদন্তের পরে তাকে একটি মুচলেকা দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, সরকারবিরোধী মন্তব্য দেখে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তার ফেসবুকে এ সংগঠনের পেইজে লাইক দেয়া ছিল। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পেরে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেই এবং তারা পুলিশের হাতে দিলে পুলিশ আরো অনেক তথ্য বের করতে সক্ষম হয়। আমার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব আমি করেছি।
এদিকে, বিভাগীয় মেসেঞ্জার গ্রুপে একটি মন্তব্য লেখার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের যে ছাত্রকে থানায় দেয়া হয়েছিল, মুক্তি দেয়ার পর তাকে নিয়ে আসার সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই কর্মীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কর্মীরাই তাদের ওপর হামলা করেছেন। গতকাল শুμবার দুপুরে মিথ্যা অভিযোগে থানায় দেয়া ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে ফেরার পথে শাহবাগ থানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার দু’জন হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দফতর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত ও অর্থ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান।
ছাত্র অধিকার পরিষদ কর্মীদের অভিযোগ, মারধরের ঘটনায় কবি জসিম হল ছাত্রলীগের কর্মীরা অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম তারা জানতে পেরেছে।
ভুক্তভোগীরা সালেহ উদ্দিন সিফাত ইনকিলাবকে বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে তানজির আরাফাত তুষার এবং হেদায়েতুল ইসলাম সবচেয়ে বেশি মারধর করেন।
তবে হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, এটি মিথ্যা কথা। আমি সেখানে ছিলাম না। আমি তখন নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম। কেউ আমার নামে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে। তানজির আরাফাত তুষার বলেন, আমি জুমার নামাজ পড়েছি মোহাম্মদপুরে। সেখান থেকে ফিরেছি একটু আগে। আমি সেই ঘটনায় ছিলাম না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।