Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর অসাধারণ উদ্যোগ

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৭ এএম

বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের জমিজমা কিংবা ভিটামাটি বিক্রি করে বিদেশ যেতে নিরুৎসাহী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরিবর্তে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে অনুরোধ করেছেন তিনি। এজন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর নির্দেশের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে। গত সোমবার মন্ত্রীসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহবান এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি এ কথাও বলেছেন, বিদেশগামীদের ভিসার জন্য যাতে অতিরিক্ত টাকা না দেয়া হয়। বিদেশগামী শ্রমিকরা যাতে এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের সাথে যোগাযোগ রাখে। সেখান থেকে তারা বিদেশ যাওয়ার সব ধরনের তথ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত হতে পারবে। ব্যাংক থেকে লোন নিলে শ্রমিকদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফার্ম না করা পর্যন্ত পেমেন্ট দিতে হবে না। এতে শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত হবে। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের প্রকৃত খরচ এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আহবান এবং নির্দেশনা যুগান্তকারী এবং অভিনন্দনযোগ্য।

বিদেশে শ্রমিক নিয়োগ বা জনশক্তি রফতানি দেশের অন্যতম প্রধান রফতানি খাত। রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস এবং অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হয়ে আছে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশে আমাদের লাখ লাখ শ্রমিকের পাঠানো অর্থ অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিজের ভাগ্য উন্নয়নে, পরিবারকে স্বচ্ছল করে তুলে একটু সুখের মুখ দেখার জন্য প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে। এজন্য তারা নিজের জমিজমা এমনকি বসত বাড়িটিও বিক্রি কিংবা বন্ধক রাখে। এদের অনেকেই শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে বিদেশ গেলেও যথাযথ প্রক্রিয়া ও তথ্য না থাকায় বিপদে পড়ে। বিভিন্ন দালাল চক্র ও একশ্রেণীর অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির লোভনীয় ফাঁদে পড়ে কাক্সিক্ষত চাকরি না পেয়ে বা বৈধ কাগজ পত্র না থাকায় সেসব দেশে অবৈধ হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যেতে হয়। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কারাগারে এখনও কয়েক হাজার শ্রমিক বন্দি হয়ে আছে। অনেকে সংশ্লিষ্ট দেশে চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে এবং হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দিয়েও এ অর্থ তুলতে পারে না। নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে। এমনও দেখা যায়, কোনো পরিবার সবকিছু বিক্রি করে কর্মক্ষম সন্তানকে বিদেশ পাঠিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পুরো পরিবার পথে বসেছে। এদের অনেকেই সঠিক তথ্য না জেনে ও বুঝে দালাল চক্র এবং অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির ফাঁদে পড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে। অনেকে বিদেশ যেতে পারলেও সেখানে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। অবৈধভাবে লুকুচুরির মাধ্যমে কাজ করলেও এক সময় ধরা পড়ে খালি হাতে দেশে ফিরে। কেউ কেউ অন্যকোনো দেশে যেতে অবৈধপথ পাড়ি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে। সাগর পথে নৌকাডুবিতে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এ নিয়ে বহু বছর ধরেই লেখালেখি হলেও বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের মধ্যে যেমন সচেতনতা বাড়েনি, তেমনি সরকারি পর্যায়েও সচেতন করার তেমন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের দিক-নির্দেশনা এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আহবান জানিয়ে একটি সময়োপযোগী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

জরুরি খাতের উন্নয়ন কার্যক্রমে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময়ে ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করে নির্দেশনাও দিয়েছেন। দেখা যায়, নানা অজুহাতে তাঁর নির্দেশনাও অনেক সময় বাস্তবায়িত হয় না। জনশক্তি রফতানি খাতে লোন নিয়ে বিদেশ যাওয়ার যুগোপোযোগী আহবান করে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, এক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করলে সমস্যা থেকেই যাবে। যত দ্রæত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা দেখেছি, করোনাকালে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে এবং দরিদ্রদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণে প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। অনিয়ম ও দুর্নীতি এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠে। প্রণোদনার অর্থ কেউ পেয়েছে, কেউ পায়নি। বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের লোন দেয়ার ক্ষেত্রে যাতে এমনটি না ঘটে, তা এখন থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। জমিজমা ও ভিটামাটি বিক্রি না করেও যে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়া যায়, এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। গ্রামে-গঞ্জের মানুষকে সচেতন করতে গণমাধ্যমসহ এলাকাভিত্তিক নানা প্রচারণা চালাতে হবে। আর্থিক নিরাপত্তা ও বিদেশ যাওয়ার সঠিক তথ্য তাদের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেও প্রচারণা চালাতে হবে। ব্যাংক লোন পাওয়ার বিষয়টি সহজ ও জটিলতামুক্ত করতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন