পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামী বক্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার ৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো তদন্তই শেষ হয়নি। কবে নাগাদ তদন্ত শেষে বিচার হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে পরিবার। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়েছে যেন তদন্ত শেষ করে মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
তবে তদন্ত সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ফারুকী হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাকেই চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিতে পারছেন না তারা। এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া জেএমবি সদস্য সাগর ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিতে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে একজনের নাম বলেছে। কিন্তু, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম টিমসহ পুলিশের কোনও গোয়েন্দা সংস্থাই নব্য জেএমবির ওই শীর্ষ পরিকল্পনাকারীকে শনাক্ত করতে পারছে না। এ কারণে তার নামও প্রকাশ করছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত ৫৬ বার সময় নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।
হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পার হলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তার ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী। তিনি বলেন, আমাদের কী করার আছে। পুলিশের যারা তদন্ত করছেন তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। হত্যাকাণ্ডের সাত বছর হয়েছে। মামলার তদন্তই শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে চার্জশিট দিলে এবং আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে তো আমরা কিছুটা চেষ্টা করতে পারতাম। তারপরও আশায় আছি, আজ হোক আর কাল হোক, আমরা আমাদের বাবাকে হত্যার বিচার পাবো।
রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট দুবৃর্ত্তদের হাতে খুন হন মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’র কাফেলা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও হাইকোর্ট মাজার মসজিদের খতিব ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতেন তিনি। নিজ বাসায় খুন হওয়ার পর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ধারণা করে ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে আপত্তি থাকার কারণে প্রতিপক্ষ বা উগ্রবাদী কোনও সংগঠনের জঙ্গিরা তাকে হত্যা করে। তবে এর মদদদাতা বা মূল হোতাকে আজও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, মাওলানা ফারুকী খুনের ঘটনায় জেএমবি’র সাগর নামের এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুলিশের ধারণাকে আরও স্পষ্ট করে সাগর। কিন্তু, সে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যার নাম বলেছে এখনও তাকে চিহ্নিত করতে পারেনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাই গোপনীয়তার স্বার্থে নামটি প্রকাশ না করে এখন তাকেই খুঁজছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
মামলার তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির এসএস কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, কয়েক মাস হলো মামলাটি আমরা পেয়েছি। যেনতেনভাবে অভিযোগপত্র দিলে তো মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কবে নাগাদ অভিযোগপত্র দেয়া যাবে সেটাও নির্ভর করবে মূল আসামিকে শনাক্তের ওপর। হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে সিআইডির কর্মকর্তারা কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হত্যাকাণ্ডের একদিন পর মাওলানা ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা নয় জনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা ও ডাকাতির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে মামলাটি ডিবি থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়।
এ মামলায় তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচিত শায়খ মোযাফফর বিন মুহসিনসহ আনসারুল্লাহর তিনজন, নব্য জেএমবি›র ছয়জন ও হরকাতুল জিহাদের তিন সদস্যসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এরমধ্যে মোযাফফর বিন মুহসিন জামিনে ছাড়া পান। জেএমবি’র ছয়জনসহ ১২ জন এখনও কারাগারে রয়েছে।
মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনীদের সম্পর্কে উল্লেখ্য করার মতো কোন তথ্য নেই। মামলার ডকেট পর্যালোচনা করে যা জানা গেছে তাতে খুনীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য নেই। সব মিলিয়ে মামলার তদন্তের অগ্রগতি অনেকটাই অন্ধকারে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, চারটি কারণ তালিকায় রেখে ফারুকী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। এগুলো হলো-ফারুকীর ধর্মীয় মতাদর্শ নিয়ে বিরোধিতা, পারিবারিক সমস্যা, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, হজে লোক পাঠানো নিয়ে বিরোধিতার জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে মামলার তদন্ত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, ফারুকী ব্যক্তিগত জীবনে তিন বিয়ে করেছেন। এ ছাড়া তিনি একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেরও মালিক ছিলেন। ধর্মীয় একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ধর্ম প্রচারণা চালাতেন। এ ছাড়া প্রতিবছর তিনি হজে লোক পাঠাতেন। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। তবে তার স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা দাবি করেন, তার ধর্মীয় মতাদর্শের প্রচার-প্রচারণা ও মাজারবিরোধী উগ্র গোষ্ঠীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।