পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর গোপীবাগে পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জনকে খুনের ঘটনায় আট বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত। আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত ১১৮ বার সময় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আর এ তদন্ত প্রতিবেদন না আসায় আটকে রয়েছে বিচার কার্যক্রম। ফলে হত্যাকারীদের শনাক্তে অনেকটা অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে পুলিশ।
২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর গোপীবাগের বাসায় পীর লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জন খুন হন। এরপর এই ঘটনায় ওয়ারী থানায় মামলা করেন নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক। এরপর এ মামলায় আটজন গ্রেফতার হন। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা এ মামলায় তদন্ত করে। তবে সর্বশেষ এ মামলাটি ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলা সম্পর্কে নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, গত ৮ বছর হয়ে গেল এখনো মামলার তদন্তই শেষ হলো না। বিচার তো দূরের কথা এখানো কোনো মামলার অগ্রগতি নেই। শুনেছি নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আসে আবার চেঞ্জ হয়। এভাবেই চলছে মামলাটি। কবে নাগাদ শেষ হবে তদন্ত আর কবে পাবো বিচার একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। বিচারের আশা করতে করতে হতাশ হয়ে যাচ্ছি। তবু আশা ছাড়ছি না। আশা করি একদিন ন্যায় বিচার পাবো।
সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জনকে খুনের মামলা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্তদের শনাক্ত করতে টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা একজন আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু কিছু কারণে তাকে এখনই রিমান্ডে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ওই আসামি অন্য মামলায় রিমান্ডে রয়েছে। ওই আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হত্যাকান্ডের রহস্য বা কারা জড়িত তা বেরিয়ে আসবে বলে ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান মন্তব্য করেন।
মামলা তদন্তের সাথে জড়িত সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। এখনো খুনের আসল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা খুন করেছে তা জানা যায়নি। আমাদের কাছে মামলাটি আসার আগে থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ তদন্ত করেছে। ঘটনা ঘটার পর পর জোরালো তদন্ত করলে রহস্য উদ্ঘাটন করে এতদিন মামলার বিচারও শেষ হয়ে যেতে পারত। কিছু বিলম্বের কারণে মামলাটির তদন্ত শেষ করতে দেরি হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সম্ভব মামলার তদন্ত শেষ হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জনকে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় খুনী কারা তা শনাক্ত করে খুনীদের গ্রেফতার করার জন্য দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৮ বছর পার হয়ে গেছে। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে, খুনী শনাক্ত হবে, তা এতটাই অনিশ্চিত যে এখন আর কেউই জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছেন না। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গত ৮ বছরে তদন্ত সংস্থা সময় নিয়েছে ১১৮ বার। আরও কতবার সময় নেয়া হবে তার হিসাব কারও জানা নেই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির ইন্সপেক্টর মো. সোহরাব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কেউ কোন তথ্য প্রদান বা গ্রেফতারকৃতরা হত্যার সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে স্বীকার করছে না। আমরা ছয় খুনের সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
গোপীবাগ ৬ খুনের মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, নিহত লুৎফর রহমান ফারুক পীর ছিলেন। এ কারণে তার অনেক মুরিদ ছিলেন, যারা তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনি নিজেকে সবার কাছে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দাবি করতেন। যার কারণে আগেও রাজধানীর বিবির বাগিচায় লুৎফর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয় এবং গেন্ডারিয়া ও গোপীবাগে হামলার চেষ্টা করা হয়। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মাগরিবের নামাজের আগে ১০-১২ জন লোক ধর্মীয় বিষয়ে জানার জন্য এসেছে বলে জানায়।
লুৎফর রহমান ফারুক সবাইকে দরবার ঘরে বসতে দিয়ে তাদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য মুরিদ শাহিনকে বাজারে পাঠায়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে লুৎফর রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, তার মুরিদ শাহিন, মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম, রাসেল ভূইয়া-সবাইকে মুখে স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকিয়ে, হাত-পা বেঁধে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। ওই ঘটনায় পীর লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ওয়ারী থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
তদন্তের স্বার্থে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা হলেন-হাদিসুর রহমান সাগর, জুলফিকার বিন সাদ ওরফে আবু ওয়াক্কাস, মামুনুর রশীদ রিপন, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে জিতু ওরফে নিরব ওরফে নিয়ন ওরফে হিমু, সৈয়দ আল আমিন, তরিকুল ইসলাম, আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আ. হাদী, মোঃ আজমির অমিত ও মো. গোলাম সরোয়ার, জাহাঙ্গীর হোসেন। বর্তমানে আসামিরা কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু তদন্ত ওই পর্যন্তই যেন শেষ হয়ে শেষ হচ্ছে না।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট গত ১৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছিলেন। ওইদিনও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রতিবেদন দাখিল করতে না পেরে বার বার সময় প্রার্থনা করছে। আদালত সময় দিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই পার হয়ে গেছে ৮ বছর। মামলার বাদীসহ নিহতের স্বজনরা বিচারের আশায় এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরে ত্যাক্ত, বিরক্ত, ক্লান্ত, অসহায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।