Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাকালে বেড়েছে আত্মহত্যা

দেশে প্রতিদিন ২৮ জন আত্মহত্যা করেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

একাকীত্ব, মানসিক রোগ, অর্থনৈতিক সঙ্কট, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ, মাদকাসক্তি ও দারিদ্র্যতাসহ নানা কারণে দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছেন। গত দুই বছরে করোনা সংক্রমণ চলাকালে আত্মহত্যার এই প্রবণতা আরো বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে এর মধ্যে আত্মহত্যা ১৩তম প্রধান কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যার প্রবণতার অন্যতম কারণ জেনেটিক (বংশানুক্রমিক) কারণ। আত্মহত্যার প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জিন দায়ী। ফলে কোনো পরিবারে একজন আত্মহত্যা করলে এর প্রভাব অন্য সদস্যদের ওপরও পড়ে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আত্মহত্যার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশ করছে। বিবিএস-এর হিসাব মতে, বর্তমানে দেশে প্রতি লাখে ৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করছেন। এটাকে ২০৩০ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সামাজিকভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বিবিএস সূত্র জানায়, বর্তমানে তথা সর্বশেষ ২০২০ সালের জরিপে দেখা যায় প্রতি লাখে ৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেন। সে সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয় ১৭ কোটি ১৬ লাখ। ২০২০ সালে সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ৮১৪ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের গড় প্রায় সমান।

২০১৯ সালে প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তখন দেশের মোট জনসংখ্যা ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি ৫৯ লাখ। সে হিসাবে ওই সময়ে দেশে মোট জনসংখ্যার ১২ হাজার ৯৫৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন। এতেই স্পষ্ট হয়, দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে।

২০১৫ সালে প্রতি লাখে ৭ দশমিক ৬৮, ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ৮৪, ২০১৭ সালে ৩ দশমিক ৭৯ ও ২০১৮ সালে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটা এখন ৮ শতাংশের ওপরে চলে এসেছে।
বিবিএস সূত্র জানায়, ২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে দেশে মোট মৃত্যুর কিছু কারণ খুঁজে বের করে বিবিএস। ১০ মাসে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ৫ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। মহামারির এ সময়ে দেশে শুধু হার্টঅ্যাটাক, হার্ট-ফেইলিওর ও হৃদরোগে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬ জন। ২০১৪ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আর পুলিশ সদর দফতরের হিসাবে বছরে গড়ে ১০ হাজার মানুষ ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। এর বাইরে ঘুমের ওষুধ সেবন, ছাদ কিংবা উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া কিংবা রেললাইনে ঝাঁপ দেয়ার মতো ঘটনাগুলোও বিরল নয়।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফেলো ডা. নাঈম আকতার আব্বাসী বলেন, যারা আত্মহত্যা করেন তারা সামাজিক ও মানসিকভাবে অতিরিক্ত বিষণ্নতায় ভোগেন। আত্মহননকারী ব্যক্তি নিজেকে পৃথিবীতে অর্থহীন মনে করেন। যার কারণে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তিনি আরো বলেন, রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার এক শিক্ষার্থী প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ভেঙে পড়েছিলেন। কয়েকবার আত্মহত্যা করতে গিয়েও ব্যর্থ হন। এরপর আমাদের কাছে চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি সুস্থ এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরিও করছেন। ফলে আমার পরামর্শ-আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। জীবনকে ভালোবাসতে হবে।

খুলনায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা : খুলনা ব্যুরো জানায়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। হতাশাগ্রস্ত হয়ে অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পল্লবী মন্ডল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে খুলনার ডুমুরিয়ায় নিজ বাড়ির রান্নাঘর থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান জুবাইদুর রহমান জানান, আমি বিষয়টি পল্লবীর সহপাঠীদের কাছ থেকে জেনেছি। এছাড়া ইতোপূর্বে আমার সাথে পল্লবীর মা দেখা করতে এসেছিলেন এবং তার হতাশ হয়ে পড়ার বিষয়ে অবগত করেছিলেন।

আত্মহত্যার ঘটনায় সহপাঠীরা জানান, পল্লবী বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা, বিশেষ করে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট সেশনজটের কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং এর জেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পল্লবীর মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আত্মহত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ