মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেন আক্রমণের আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার উপর সর্বাধিক চাপ প্রয়োগ করতে চলেছে, রাশিয়ান নেতা ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্ব মঞ্চে তার সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার চীনের কাছ থেকে স্বস্তি পেয়েছেন। চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর বিরুদ্ধে পুতিনের অভিযোগের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে বাধা দেয়ার চেষ্টা করার জন্য রাশিয়ার সাথে যোগ দিয়েছে এবং রাশিয়ার আগ্রাসন ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি’ তৈরি করবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেছে। এদিকে, ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আজ শুক্রবার পুতিন বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং অন্যান্য নেতারা স্পষ্টভাবে শীতকালীন অলিম্পিক বয়কটের অঙ্গীকার করেছেন। যদিও দুই দেশের মধ্যে কোনো সম্ভাব্য চুক্তির বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, তবে বৈঠকটি গত দুই বছরের মধ্যে দুই বিশ্ব নেতার মধ্যে প্রথম। এটি দুই শক্তির মধ্যে ভ‚-রাজনৈতিক বন্ধুত্বের আরেকটি প্রকাশ্য প্রদর্শন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্রেমলিনের শীর্ষ বৈদেশিক নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি নতুন যুগে প্রবেশের বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি তৈরি করা হচ্ছে। এটি অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে মস্কো এবং বেইজিংয়ের ‘অভিন্ন মতামত’ প্রতিফলিত করবে। তিনি বলেন, ‘চীন নিরাপত্তাগ্যারান্টির জন্য রাশিয়ার দাবিকে সমর্থন করে।’
পুতিনের জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থনের একটি চীনা প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনের সীমান্তে তার সামরিক গঠনের জন্য রাশিয়ান নেতাকে বঞ্চিত করার জন্য বাইডেনের কৌশলকে দুর্বল করতে পারে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটি টেকটোনিক পরিবর্তনকেও বিরাম চিহ্ন দিতে পারে যা ইউরোপ থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রতিধ্বনিত হতে পারে। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইভান এস মেডিইরোস বলেছেন, ‘যদি ইউক্রেনের উপর যুদ্ধ হয়, এবং চীনা এবং রাশিয়ানরা স্পষ্টভাবে একে অপরের সাথে সারিবদ্ধ হয়, হঠাৎ করে আমরা যে বিশ্বে রয়েছি তা একটি খুব, খুব আলাদা একটির মত দেখায়।’ ‘এটি দীর্ঘমেয়াদী বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মতো দেখায়, যেখানে চীন পূর্ব দিকে থাকবে,’ তিনি যোগ করেছেন।
চীনের নেতারা ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষকে গভীরভাবে দেখেছেন, চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনে ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে বিভাজন তুলে ধরেছে এবং কখনও কখনও আনন্দের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। তারা এই শোডাউনকে আমেরিকান প্রভাব এবং সংকল্পের পরীক্ষা হিসাবে দেখেছে যা বাইডেনকে ২১ শতকের প্রাক-প্রখ্যাত কৌশলগত প্রতিদ্ব›দ্বী হিসাবে চীনের প্রতি তার প্রশাসনের মনোযোগ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ানের প্রতি ক্রমবর্ধমান আমেরিকান সমর্থন, দ্বীপ গণতন্ত্র যা চীন তার ভূখন্ডের অংশ হিসাবে দাবি করে।
ওয়াশিংটনে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা উদ্বিগ্ন যে বেইজিংয়ে শীর্ষ বৈঠকে, শি জিনপিং পুতিনকে চীনা সমর্থনের আশ্বাস দেবেন যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর ভারী অর্থনৈতিক জরিমানা আরোপ করে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের শাস্তি আরোপ করলে, পুতিনও বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের বিকল্প উৎস হিসেবে চীনের দিকে ঝুঁকেছিলেন, যা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কিছুটা কমিয়ে দিয়ে। সেই বছর, চীন এগিয়ে গিয়েছিল এবং রাশিয়ার সাথে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর বৈরিতা বহুদিনের। বৈশ্বিক রাজনীতির এমন সময়ে চীন ও রাশিয়ার কাছাকাছি আসা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। পশ্চিমা বিরোধিতা প্রশ্নে উভয় দেশ ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিলে ইউরোপের অনেক দেশে ভাঙন সৃষ্টি হবে। কারণ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চীনের কাছে অনেক দেশ দায়বদ্ধ। আবার সামরিক উন্নয়ন ও খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রেও রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল অনেক দেশ।
বিশ্লেষকরা নতুন এক জোটের সম্ভাবনা দেখছেন। বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সামরিক প্রশিক্ষণের দিক দিয়ে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে অংশীদারত্ব বাড়তে থাকলে তা কার্যকর জোটে রূপ নেবে। গত ডিসেম্বরে এক ভিডিওকলে শি রাশিয়ার প্রতি চীনের শীতল যুদ্ধের মানসিকতা পরিহার করে সহযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার অবস্থানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বেইজিংয়ের। রাশিয়া ন্যাটোকে যে বার্তা দিয়েছে চীনও তা দিতে চায়। রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটো যাতে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিতে মস্কোকে প্রয়োজনে সহায়তা করবে বেইজিং। অবশ্য পশ্চিমের বিরুদ্ধে অবস্থানে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ক‚টনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার অনেক নজির রয়েছে। ২০২১ সাল ছিল চীন-রাশিয়া সম্পর্কে ব্যানার ইয়ার। এসময় উভয় দেশ বিশটি চুক্তি নবায়ন করে এবং ১৪৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করে।
এদিকে, গতকাল ইউক্রেন সফরের আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে তুরস্ক তার ভ‚মিকা পালনে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থের ভ‚মিকা পালনে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছেন, তুরস্ক, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব তুরস্ক সমর্থন করে। এর আগে তিনি একথাও বলেছেন যে, রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত। এরদোগান গতকাল কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির যেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করছেন। তবে এই সফরের সময় ইউক্রেনে তুর্কি ড্রোন তৈরির একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হবে বলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানাচ্ছেন। তুরস্কের সাথে রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশেরই ভাল সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তুরস্ক গত বছর ইউক্রেনকে ড্রোন বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়ায় রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার বিপুল সৈন্য সমাবেশ নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তা নিরসনে বিশ্ব নেতাদের উদ্যোগে যোগ হয়েছে এরদোগানের সফর। তিনি নেটো নেতাদের থেকে ভিন্ন ক‚টনৈতিক পথ নিতে চাইছেন এবং তুরস্কের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এরদোগান এই সঙ্কটে কোন এক পক্ষের হয়ে কাজ করবেন না। কিয়েভের উদ্দেশ্যে রওনা হবার আগে আঙ্কারায় এরদোগান বলেছেন, তুরস্ক ওই অঞ্চলে শান্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করবে এবং তিনি আশা করছেন তিনি একজন মধ্যস্থের ভ‚মিকা পালন করতে পারবেন। তিনি দু পক্ষকেই সংযত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন সংলাপের মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এই দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। সূত্র : নিউই্য়র্ক টাইমস, বিবিসি নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।