চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
সুখ একটি পরিচিত শব্দ, পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না, যে কিনা সুখ-সমৃদ্ধি পাওয়ার আশায় থাকে না। একটু সুখের আশায় মানুষ কত-ই না কষ্ট করে। সেই ছোট বেলা থেকে মা-বাবা, শিক্ষক, আত্নীয়-স্বজন সহ জ্ঞানী ব্যক্তিদের থেকে বলতে শুনেছি, তোমাদের অনেক বড় হতে হবে। তখন সেই ছোট মানুষগুলো হয়ত এটাই বুঝত যে আমরা এখন লম্বায় তাদের থেকে কম, আমরা যখন তাদের মত লম্বা, সুঠাম দেহের অধিকারী হব তখন হয়ত আমরা বড় হব। আসলে এটা ছিল ছোট্ট বেলায় হারিয়ে যাওয়া মনি মুক্তার চেয়ে দামী কিছু সময়। ফুটন্ত গোলাপের মত ছিল, সকল আবদার, চাওয়া-পাওয়া। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের অভিভাবকরা এটাই বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, তোমরা বড় হয়ে সুন্দর ভাবে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, ভাল মানুষ হয়ে সমাজের বুকে বেঁচে থাকবে। ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজীবি, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, সরকারি-বেসরকারী চাকুরিজীবি সহ যাদের যে পেশা ভাল লাগে, সে পেশায় তাদের সন্তানদের গড়ে উঠতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র এই ভূবনে যেন সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেই আশায়।
অথচ আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, অনেকে ভাল অবস্থানে থাকার পরেও তাঁর জীবনে সুখের লেশ বিন্দু মাত্রও নেই। আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করেও পরম সুখে দিনাতিপাত করছে। এটির একমাত্র কারণ হচ্ছে- আল্লাহ যদি কাউকে সুখ-শান্তি না দেয়, পৃথিবীর কারও শক্তি নেই যে, তাকে শান্তি দিতে পারে। পক্ষান্তরে, তিনি যদি কাউকে প্রশান্তিতে রাখতে চান, তাহলে পৃথিবীর কারও ক্ষমতা নেই তাকে অশান্তিতে ভোগাতে পারে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যদি আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কোনো দুঃখ-কষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া কেউই নেই তাকে দূরীভূত করার, (আবার) তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান তাহলে তাঁর সে কল্যাণ রদ করার ক্ষমতা কারও নেই; তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান, তাকেই তা প্রদান করেন; তিনি বড়োই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সুরা-ইউনুস, আয়াত (১০৭)।
প্রকৃতপক্ষে টাকা, সম্পদ, ক্ষমতা দিয়ে অনেক কিছু করা যেতে পারে কিন্তু, এসব দিয়ে সুখ কেনা যায় না। ‘মনের সুখ-ই আসল সুখ।’ সমুদ্র কিংবা নদীপথে মাঝিরা মনের সুখে গান গায়, আবার (শিতাতাপ নিয়ন্ত্রিত) অফিসে বসে কেউ ডিপ্রেশনে ভুগছে। অনেকে বিয়ের আগে সম্পর্কে জড়িয়ে, নিজের পছন্দ মত বিয়ে করে অশান্তির দাবানলে জ্বলে-পুড়ে মরছে; অন্যদিকে ইসলামিক মোতাবেক বিয়ে করে অনেকে সুখের সংসার করছে। বাস্তবতা হলো- যদি কারও ভাগ্যে ‘সুখ’ না থাকে তবে সে, সুখের দেশেও অসুখী থাকবে। আর যদি কারও ভাগ্যে ‘সুখ’ থাকে তবে সে যে কোন অবস্থাতে-ই সুখে থাকবে। যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিচালিত করে; তার এই চলা পথে যত বাধার আসুক না যদি সেটা হয় ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণীঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডোর মতো তারপরও মহান আল্লাহ তায়লা সেসব মোকাবেলার ক্ষমতা তাকে দিয়ে দেন।
বাহ্যিক দিক দিয়ে আমরা যদিও দেখি লোকটি কষ্টে আছে, কিন্তু তাঁর হৃদয়টা যদি কেউ দেখতো পেত, তাহলে সত্যি-ই আশ্চর্য না হয়ে কেউ থাকতে পারতো না। কেউ কেউ সারারাত নাইট ক্লাবে কাটিয়ে, আল্লাহর হুকুম অমান্য করে এসে ঘুমে। কেউ কেউ রাতে এশার নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সকালে ফযরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করে। এখানে অবশ্যই যিনি আল্লাহর হুকুম পালন করে, সকাল শুরু করেছেন, তিনি যে মনে একটা তৃপ্তি পাবে, প্রশান্তি লাভ করবে, পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ দিয়ে, সেই তৃপ্তি লাভ করা অসম্ভব। তাই, একজন মুসলিম হিসেবে আমরা যদি আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করে, তাঁর রহমতের সাগরে ডুব দেই, আশাকরি তিনি আমাদের উপর সহায় হবেন এবং ইহকাল এবং পরকালে আমরা পরম সুখে-শান্তিতে থাকব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।