Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনলাইন বিদ্বেষের বিরুদ্ধে জার্মানীর লড়াই

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:৪১ পিএম

ইন্টারনেটে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বন্ধ করতে ফেব্রুয়ারি থেকে জোরদার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে জার্মানিতে৷ বিদ্বেষমূলক অপরাধের নজরদারিতে কেন্দ্রীয় একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু যেভাবে অনলাইনে হিংসার পরিমাণ বাড়ছে, সেই হিংসা বন্ধ করতে এটুকুই কি যথেষ্ট?

ইন্টারনেট ব্যবহার করলে সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে–এ কথা জানতেন রেগিনা নেইগেল৷ ফেসবুকে পোস্ট এবং মন্তব্যও বেশ বুঝেশুনে করতেন তিনি৷ ফেসবুকে কারা কারা তার বন্ধুতালিকায় রয়েছে, এ বিষয়টি নিয়েও সচেতন ছিলেন রেগিনা৷ কিন্তু এ সব সাবধানতাও যথেষ্ট ছিল না৷

গত সেপ্টেম্বরে রেগিনার এক বন্ধু তার একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন৷ এরপর একের পর এক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা হয়৷ একটি ক্যাথলিক গির্জায় কাজ করেন রেগিনা৷ পাশাপাশি, গির্জার ‘রিফর্ম মুভমেন্ট’-এর একজন সদস্য রেগিনা৷ একে বলা হয় ‘সিনোডাল পাথ’৷ ক্যাথলিক গির্জায় শিশুনিগ্রহের অভিযোগ আসার পর সংস্কার আন্দোলনের বিষয়টি শুরু হয়েছিল৷

নাগেলের পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় সবচেয়ে আপত্তিকর মন্তব্য এসেছিল একজন ডানপন্থী ক্যাথলিকের থেকে৷ গির্জায় কর্মরত নারী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন তিনি৷ ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন রেগিনাকে৷ পরবর্তী পোস্টে রেগিনার চেহারা নিয়ে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি৷

রেগিনা বলেন, ‘‘মন্তব্যটি কুরুচিকর, অশালীন এতে কোনো সন্দেহ নেই৷ স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত হুমকি না থাকায় পোস্টটিকে গুরুত্ব দিইনি৷ যেমনটা অনেক রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে হয়েছে৷’’ তবে তার দুই বন্ধু ফেসবুকে অশালীন মন্তব্যটি নিয়ে ‘রিপোর্ট' করেছিলেন৷ তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ পোস্টটি এখনও সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে৷

এমন অজস্র ঘটনা ঘটেছে সামাজিক মাধ্যমে৷ এ জাতীয় মন্তব্যগুলি যথেষ্ট আক্রমণাত্মক৷ কোভিড আসার আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷ সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নারীরা, বিশেষ করে যাদের প্রোফাইল ‘পাবলিক’ করা রয়েছে৷ এই কারণেই ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো বড় মাপের সামাজিক মাধ্যমগুলি জার্মানিতে ঘৃণ্য পোস্টগুলি সরাতে বাধ্য হবে বলা যেতে পারে৷

পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে জার্মানিতে নতুন এবং অত্যন্ত কঠোর একটি আইনি কাঠামো চালু হয়েছে৷ ২০ লাখের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে এমন সব নেটওয়ার্ককে বেআইনি বিষয়বস্তু সরাতে তো হবেই, পাশাপাশি সেই বিষয়বস্তু এবং ব্যবহারকারীর ‘আইপি অ্যাড্রেস’ ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিসে (বিকেএ) নথিভুক্ত করতে হবে৷ ফলে ইন্টারনেটে অপরাধমূলক এবং আপত্তিকর পোস্টগুলি নতুন একটি কেন্দ্রীয় রিপোর্টিং ইউনিটের (জেডএমআই) কাছে চলে যাবে৷

প্রায় ২০০ কর্মকর্তার এই রিপোর্টগুলি দেখার কথা৷ আশঙ্কা একটাই, অনলাইনে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বন্ধ করার লড়াইয়ের জন্য জার্মানিতে যে কাঠামো রয়েছে, তা একেবারেই জোরালো নয়৷ প্রথমত, নাগেলকে নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছিল, পরিবর্তনের ফলে তাতে কোনও প্রভাব পড়বে না৷ ইন্টারনেটে বিদ্বেষমূলক অপরাধের শিকার হন যারা, তাদের পাশে থাকে হেটএইড নামে একটি সংস্থা৷

সংস্থার অভিজ্ঞ আইনি পরামর্শদাতা জোসেফিন ব্যালন জানান, বর্তমানে মানহানি সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, সেখানে কোনও অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে নিগৃহীত ব্যক্তি কী চাইছেন, সেই গুরুত্ব অনেক বেশি৷ নিগৃহীত চাইলে তবেই অভিযোগ দায়ের হবে৷ তার মত, বিকেএ পুলিশের কাছে কোনও ঘটনা বা বিষয়বস্তু নিয়ে অভিযোগ দায়ের হবে কি না তা ঠিক করে সামাজিক মাধ্যমগুলি৷ এতে ব্যবহারকারীর ভূমিকা নেই৷ বিকেএ-র তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্য, বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য, হত্যার হুমকি এবং অসাংবিধানিক প্রতীক ব্যবহারের মতো বেআইনি বিষয়বস্তু৷

জোসেফিনের কথায়, ‘‘বিদ্বেষমূলক মন্তব্য সংক্রান্ত অভিযোগের বিচারপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে এই নতুন সিস্টেম৷শুধু সেই ভিত্তিতে এটিকে স্বাগত জানানো যায়৷’’ সরকারি আইনজীবীদের ক্রমবর্ধমান কাজের চাপ কমাতে বিকেএ-র নতুন শাখা তৈরি করা হয়েছে৷ পাশাপাশি ‘আইপি-অ্যাড্রেস’গুলির দ্রুত চিহ্নিত করার জন্যও বিকেএ-র নতুন শাখাটি জরুরি ছিল৷ তবে জার্মানিতে এই ‘আইপি-অ্যাড্রেস’ শুধুমাত্র কয়েক দিনের জন্য সংরক্ষিত থাকে৷

সঙ্গত কারণে এ সব সিদ্ধান্ত সরকারি আইনজীবীরা নেন৷ তাদের মূল্যায়নের পরেই পুলিশ তাদের তদন্ত শুরু করে৷ তবে নতুন শাখাটির ক্ষেত্রে পুলিশ নিজেই তদন্ত শুরু করতে পারে৷ ফেসবুক এবং গুগল নতুন এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে আপিল করছে৷ যাতে আপাতত তাদের বিকেএ তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে না হয়৷ জোসেফিন বলেন, ‘‘আশঙ্কার দিকটি হল, বিকেএ একটি বিশাল তথ্যভাণ্ডারে পরিণত হতে পারে৷ কোনো আদালত বা সরকারি আইনজীবী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে, খতিয়ে না দেখলে মুশকিল৷’’

সামাজিক মাধ্যমের পোস্টের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলি শুধুই কালো বা সাদা এমন তো নয়৷ জোসেফিন সতর্ক করেছেন, বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিষয়টিও৷ তার কথায়, শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা কোনও বিতর্কে অংশ না নিলে মুশকিল৷ এদিকে বেআইনি কোনও কিছু পোস্ট না করেও বিকেএ-র খাতায় কারও নামে অভিযোগ থাকলে সমস্যা বাড়বে৷ এই প্রসঙ্গে স্বস্তিক চিহ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উগ্র ডানপন্থী কেউ এটি পোস্ট করছে নাকি শুধুমাত্র শিক্ষা এবং শৈল্পিক ব্যবহার হিসেবে এই চিহ্নের প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার পার্থক্য বুঝতে হবে৷

এই প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বিকেএ জানিয়েছে, এ জাতীয় উদ্বেগ দূর করতে চায় তারা৷ মূল্যায়নের প্রতিটি পর্যায়ে বিচারবিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে৷ সেন্ট্রাল অফিস ফর দ্য রেজিস্ট্রেশন অফ সাইবারক্রাইম (জেডএসি) এবং কোলনের সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বিকেএ৷ সেন্ট্রাল ডেটাবেস তৈরির পরিকল্পনা বিকেএ-র নেই, জানিয়েছে তারা৷ তবে হেটএইডের দাবি, প্রচুর অভিযোগ এলে বিচারপ্রক্রিয়ায় দেরি হতে পারে৷

হেটএইডের দাবি, ফেসবুক বা গুগলের মতো সামাজিক মাধ্যমই বিকেএ-র কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারে৷যদি মানুষ এতে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে কিছু বদলাবে না৷ অনলাইনে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের শিকার যে সমস্ত মানুষজন, তাদের নিয়ে কাজ করে রিপোর্টহেট৷ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা লিওনহার্ট ট্রাউমারও জোসেফিনকে সমর্থন করেছেন৷

তার কটাক্ষ, ‘‘যখন বেসরকারি মার্কিন সংস্থাগুলি বলবে যে সম্ভাব্য অপরাধমূলক কার্যকলাপ শনাক্ত করা হয়েছে, তখন সংস্থা তা দেখবে৷’’ জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে আদৌ কী অভিযোগ এসে পৌঁছবে তা নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করে লিওনহার্ট বলেন, ‘‘এটি কোনও কার্যকর সিস্টেম হতে পারে না৷’’ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ