চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মহান আল্লাহ তাঁর অপার অনুগ্রহে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁদেরকে সুন্দর ও সর্বশ্রেষ্ঠ দেহাবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি বরং তিনি তাদেরকে বিবেক ও বিবেচনার ক্ষেত্রে স্বাধীনতাও দিযেছেন। জীবনবিধান অবতীর্ণ করে তিনি মানবজাতিকে ‘আশরাফুল মাখলুকাতের’ মর্যাদায় সমুন্নত করেন। মানবজাতিকে হেদায়েতের লক্ষ্যে, দুনিয়া ও আখেরাতের তাদের কল্যাণের নিমিত্তে যুগে যুগে তিনি অসংখ্য নবী রাসুল পাঠান। দুনিয়ায় মহান প্রভুর নির্দেশ ও আদেশ পালন করে মানবজাতি যেন পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে এ জন্য তিনি বিধান প্রবর্তন করেন। আল্লাহপাক তাঁরই নির্দেশ ও আদেশ পালনকারীকে ‘সাওয়াব’ দিবেন এবং নিষেধ অমান্য কারীদের ‘আযাব’ বা শাস্তি দিবেন। এ সকল নির্দেশনা তিনি পবিত্র কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করেন। আল্লাহপাক মানবজাতির সকল কর্মকান্ড লক্ষ্য করেন। সবকিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে, তাঁর কর্তৃত্বে, তাঁর ক্ষমতার অধীনে। তিনি মানবজাতির সকল মানুষকে তাঁরই ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তিনি কোরআন সুন্নাহয় এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক মানুষের হেফাযত ও আমলনামা সংরক্ষণের জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন।
কিরামান কাতেবীনদের পরিচয়ঃ ‘কিরামান কাতেবীন’ ইসলামী আরবি পরিভাষা। এ পরিভাষা দ্বারা মানুষের আমল লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণকারী দুজন ফেরেশতাকে বুঝায়। মহান আল্লাহ সকল মানুষের আমলনামায় পাপ ও পূণ্য লিপিবদ্ধ করা এবং এগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য প্রত্যেকের দুই কাঁধে দুজন সম্মানিত ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন। সম্মানিত এ ফেরেশতাগণই হলেন ‘কিরামান কাতেবীন’। কতিপয় মুফাসসির এর মতে, কিরামান কাতেবীন ফেরেশতার একজন হলেন ‘রাকিব’ অপরজন হলেন ‘আতিদ’। সকল বান্দাহ এর ডান কাঁধে অবস্থানকারী ফেরেশতা তাদের সকল প্রকার নেককাজ লিপিবদ্ধ করেন। আর বাম কাঁধের ফেরেশতা বান্দাহর সকল পাপকে লিপিবদ্ধ করেন। আল্লাহপাক লিপিবদ্ধকারী দুজন ফেরেশতা ছাড়াও সকল ব্যক্তির জন্য আরো দুজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেন, যারা উক্ত ব্যক্তির হেফাজতের জিম্মাদারী পালন করে। তাদের একজন বান্দার সামনে থাকে অপরজন বান্দার পিছনে থাকে। আমলনামা লিপিবদ্ধকারী দুজন, বান্দাহর নিরাপত্তায় নিয়োজিত দুজন মিলে মোট চারজন ফেরেশতা দিন ও রাতে পালাক্রমে আগমন ও প্রস্থান করেন। মহান আল্লাহর নিদেশনা এ চারজন জিম্মাদারের মাধ্যমে সুনিপূণভাবে সম্পাদিত হয়। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহয় তাঁদের পরিচয় ও দায়িত্ব সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রখ্যাত মুফাসসিরগণ তাঁদের গবেষণালব্ধ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।
কিরামান কাতেবীনদের সম্পর্কে কোরআন ও সুন্নাহর বর্ণনাঃ পবিত্র কোরআন মাজিদে মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘যখন দু’জন ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমলনামা লিপিবদ্ধ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। (সুরা ক্বা-ফ: আয়াত: ১৭-১৮; ইবনু কাছীর)। তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পরপর আগত পাহারাদার ফেরেশতারা রয়েছে, যারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহর হুকুমে’। (সুরা রা‘দ: আয়াত: ১১)। যে ফেরেশতা ডানে অবস্থান করেন তিনি মানুষের ছওয়াব লিখেন। আর যে বামে অবস্থান করেন তিনি পাপ লিখেন। এর অর্থ ফেরেশতা মানুষের সাথে সর্বদা অবস্থান করে (ছহীহাহ হা/১২০৯)। সুতরাং এটা প্রমাণিত যে, একজন ব্যক্তিকে দিনে ও রাতে কমপক্ষে চারজন করে ফেরেশতা পাহারা দেয়। যাদের দু’জন ডানে ও বামে মানুষের আমলনামা লিখে, অপর দু’জন মানুষের পিছনে ও সামনে থেকে পাহারা দিয়ে থাকে (বুখারী, হা/৫৫৫; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা রা‘দ ঐ আয়াত)। উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ মনে করে রাকীব ও আতীদ দুইজন ফেরেশতার নাম যা সঠিক নয় (ড. ওমর সুলায়মান, আলামুল মালায়েকাতিল আবরার, ১২ পৃ.)।
আল্লাহপাক বলেন,‘অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর। (সুরা ইনফিতার: আয়াত: ১০-১২)। তিনি আরো বলেন, ‘আমার কাছে রক্ষিত এই আমলনামা তোমাদের সম্পর্কে সত্য কথা বলবে। তোমরা যা করতে আমি তা লিপিবদ্ধ করতাম। (সুরা জাসিয়া: আয়াত: ২৯)। তিনি আরো বলেন, তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও গোপন পরামর্শ শুনি না? হ্যাঁ, শুনি। আমার ফেরেশতাগণ তাদের নিকটে থেকে লিপিবদ্ধ করে। (সুরা যুখরুফ: আয়াত: ৮০)। তিনি আরো বলেন, নিশ্চয়ই আমাদের ফেরেশতারা লিখে রাখে তোমাদের ছল - চাতুরী। (সুরা ইউনুস: আয়াত: ২১)। (চলবে)
লেখক ঃ মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, নোয়াখালী সদর, নোয়াখালী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।