চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
করনীয় বিষয় হলোঃ-
ক. নিয়্যাত বিশুদ্ধ করা ঃ ইলম তলবের জন্য নিয়্যাতকে বিশুদ্ধ করা জরুরী। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন, ‘সকল কাজ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল, ব্যক্তি তা পায় যা সে নিয়্যাত করে। নিয়্যাতের মধ্যকার বিশুদ্ধতা তথা ‘ইখলাস’ হলো আল্লাহ এবং তার বান্দার মধ্যকার এমন এক নিবিড় সম্পর্ক যার নাগাল শয়তান এমনকি ফেরেশতাগন পর্যন্ত পায় না। কাজেই প্রত্যেক তালেবকে সর্বপ্রথম নিয়্যাত বিশুদ্ধ করতে হবে।
খ. আল্লাহর উপর ভরসা করা ঃ ইলম আল্লাহ পক্ষ থেকে প্রদত্ত মহা নেয়ামত। কাজেই তা অর্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা করা অতীব জরুরী। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহর তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: আয়াত:০৩)।
গ. আশাবাদী হওয়া ঃ ইলম অর্জনের সময় বেশ আশাবাদী হওয়া। কেননা যারা নিরাশার দোলাচলে ঘুরপাক খায় তারা কিছুই অর্জন করতে পারেনা। আশাবাদ কোন কিছু অর্জনে ব্যক্তিকে চরম ভাবে উৎসাহিত করে। আল্লাহ পাক আশাবাদ অবলম্বন সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না’। (সুরা আয যুমার: আয়াত:৫৩)। কাজেই প্রত্যেক তালেবকে ইলম তলবের সময় আশাবাদী হতে হবে। কেননা ইলমও আল্লাহর রহমত।
ঘ. পবিত্রতা অবলম্বন কর ঃ ইলম মহাপবিত্র ও মহামূল্যবান সম্পদ। এ মহাপবিত্র সম্পদ তলব কালে প্রত্যেককেই পবিত্রতা আবলম্বন করতে হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ পবিত্রতা ব্যতিত তোমরা তা স্পর্শ কর না’। (সুরা ওয়াকিয়াহ: আয়াত: ৭৯)। তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অবলম্বন কারীদের ভালোবাসেন’। (সুরা বাকারাহ: আয়াত: ২২২)। কাজেই প্রত্যেক তালেবকে ইলম তলবের সময় পবিত্রতা অবলম্বন করতে হবে।
ঙ. তা’লীমের প্রতি সদা মনযোগী হওয়া ঃ ইলম যেহেতু মহা মুল্যবান সম্পদ কাজেই তা তলবের সময় তালেব কে তালীমের প্রতি মনযোগী হওয়া অতি জরুরী। কেননা মনযোগ ব্যতিত ইলম হাসিল হয়না।
চ. মুযাকারা, মুতালায়া, তাকরারে নিজেকে নিয়োজিত রাখা ঃ প্রত্যেক তালেব কে ইলম তলব কালীন সময়ে বর্তমান তালিম কে মুযাকারা, পুর্বের তালিম কে মুতালাআ, সামষ্টিক ও সম্মিলত ভাবে তাকরার চালিয়ে যাওয়া অতি জরুরী। কেননা এ সকল পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের ফলে ইলম অর্জনের পথ সুগম হয়।
ছ. নেক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা ঃ প্রত্যেক তালেব কে ইলম হাসিল কালিন সময়ে সকল নেক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
জ. আমল করা ঃ প্রত্যেক তালেব প্রতিদিন ইলম হিসেবে যা হাসিল করবে তার যথাযথ আমল করবে। কেননা আমল বিহীন ইলম মূল্যহীন । এক সময় দেখা যাবে যে, আমল না করার দরুন ইলম আর নেই।
তালেবে ইলমের বর্জনীয় বিষয়াবলী ঃ
১. মিথ্যা কথা বলা ঃ মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ। কাজেই ইলম হাসিল কারী তালেবে ইলমকে আবশ্যিকভাবে মিথ্যাকথা বলার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
২. কুচিন্তায় লিপ্ত হওয়া ঃ কুচিন্তা, কু মনন মানসিক কন্ডুয়ন সৃষ্টি করে যার প্রেক্ষিতে মানব দেহে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হয় । কাজেই সুস্থ নিরোগ থাকার পাশাপাশি সরস মনের জন্য প্রত্যেক তালেবকে কুচিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে সুচিন্তায় মনোযোগী হতে হবে।
৩. অসৎ সঙ্গ ঃ ‘সৎ সঙ্গ স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গ সর্বনাস’ এ প্রবাদের মর্ম চিরন্তণ। কাজেই সকল তালেবে ইলমকে ভালো মানুষদের সঙ্গী বানিয়ে নিজের যাবতীয় বিষয়ে পরামর্শ, মতামত গ্রহণ করতে হবে এবং সকল প্রকার অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
৪. প্রতারণা ও শঠতার আশ্রয়ঃ প্রতারণা, শঠতা, ধোঁকা ইত্যাদী দুরারোগ্য আত্মিক ব্যাধি, যা মানুষের মনকে বিষিয়ে দেয়। মানুষকে অমানুষে পরিণত করে, মানুষকে নির্মম করে তোলে, যার ফলে দেখা যায় মানুষ মানুষের সাথে পশুসুলভ আচরণ করে। কাজেই তালেবে ইলমকে এ সকল ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে উত্তম চারিত্রিক গুণে গুনাণ্বিত হতে হবে।
৫. অলসতা অবলম্বণ ঃ অলস ব্যক্তি কখনো কামিয়াব হতে পারে না। অলসতা ব্যক্তিকে মনবিকলাঙ্গ করার পাশাপাশি অনেক সময় শারীরিক বিকলাঙ্গও করে ফেলে। কাজেই সকল তালেবকে অলসতা পরিহার করতে হবে।
৬. হিংসা বিদ্ধেষ পরনিন্দা পরচর্চা করা ঃ এ সকল ব্যাধি শুধু মাত্র ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না বরং গোটা সমাজকেই ধংস করে। কাজেই এ সকল ধ্বংসাত্মক ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত রাাখতে হবে। এ সকল ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি যেমনিভােেব উদার হতে পারে না ঠিক তেমনি ভাবে মানুষের হিতাকাঙ্খিও হতে পারে না।
৭। লক্ষ্যবিহীন অধ্যয়ন ঃ লক্ষ্যহীন ব্যক্তি কখনোই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা। কাজেই তালেবে এলেমকে অধ্যয়ন কালে তার সুনির্দ্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সে পথে সতর্কতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই উক্ত তালেব তার কাঙ্খিত মঞ্জিলে পৌঁছতে সক্ষম হবে।
৮। অযথা সময় অপচয় ঃ মানব জীবনে সময়ের গুরুত্ব অত্যধিক। যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়ার ফলে অনেক সময় দেখা যায় মানুষ প্রভূত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। তালেবে ইলমের নিকট সময় অনেক দামী নেয়ামত। কাজেই কোন অবস্থায় সময় অপচয় করা যাবে না।
শেষ কথা ঃ মহান আল্লাহর বানীকে তাঁর জমিনে রাসুল (সা.) এর সুন্নাহর আলোকে বাস্তবায়নে তালেবে ইলমের ভূমিকা সর্বাগ্রে। কাজেই প্রত্যেক তালেবকে হতে হবে আল্লাহ প্রিয় বান্দা ও রাসুল (সা.) এর সুন্নাহর খাঁটি অনুসারি। প্রকৃত তালেবে ইলমকে করণীয় বিষয়াবলীকে একনিষ্ঠভাবে পালন করতে হবে এবং বর্জনীয় বিষয়াবলী জীবন থেকে সতর্কতার সাথে পরিহার করতে হবে।
লেখকঃ মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।