Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাথার ওপর থেকে ঝুলন্ত তার কবে সরাবে?

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

দেশ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেলেও ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির সংযোগ লাইন এখনো পুরনো অবস্থায় রয়ে গেছে। রাজধানীসহ সারাদেশের নগর এমনকি উপজেলায় এসব সংযোগ মাথার উপর বৈদ্যুতিক খাম্বার উপর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এতে নগরীর সৌন্দর্য ব্যহত হওয়া ছাড়াও বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বহু আগে থেকেই বিটিআরসি এবং বিদ্যুৎ বিভাগ ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও ক্যাবল অপারেটরস প্রতিষ্ঠানকে (কোয়াব) মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ নেয়ার নির্দেশ দিলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। প্রতিষ্ঠান দুটিকে সংযোগ ক্যাবল সরিয়ে নেয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে আল্টিমেটাম দিলেও তার কোনো সুফল মেলেনি। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের মতো দুই সিটি করপোরেশনও ব্যর্থ। মাঝে মাঝে দুই সিটি করপোরেশন অভিযান চালিয়ে তার কেটে দিলেও, তার স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক ঘন্টা থাকে। তার কেটে দেয়ার পরপরই তা আবার মাথার উপর লাগিয়ে দেয়া হয়। এই তার কাটা এবং লাগানো নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর বেড়াল খেলা চলছে। তারের জঞ্জাল আর সরছে না। এটা বিটিআরসি, বিদ্যুৎ বিভাগ ও দুই সিটি করপোরেশনের চরম ব্যর্থতা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

রাজধানী বাসযোগ্যতা অনেক আগেই হারিয়েছে। যানজট, পানিবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ, কাক্সিক্ষত সেবার অপ্রতুলতা, অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ ঢাকা অসভ্য নগরীর তালিকায় ঠাঁই নিয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, তা এখন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত নগরীতে পরিণত হয়েছে। এতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ারও জো নেই। উপরন্তু মানুষ শ্বাসরোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের অসুস্থতা এবং মৃত্যু বেড়েছে। অনেকে দিন দিন বধির হয়ে যাচ্ছে। এসবের কোনো কার্যকর প্রতিকার নেই। কোনো জায়গা ছাড় না দিয়ে একটির সাথে আরেকটি বড় বড় হাইরাইজ ভবন গড়ে উঠেছে এবং এর সাথে বড় বড় বিলবোর্ড যুক্ত হওয়ায় আকাশও ঠিকমতো দেখা যায় না। এসব ভবনের কারণে ঢাকার তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে সব সময় অত্যধিক থাকে। রাজধানীর অভ্যন্তরের দূষিত পরিবেশের পাশাপাশি চারপাশ বেষ্টিত নদীগুলোও দূষিত হয়ে আছে। রাজধানী যেন নর্দমা বেষ্টিত একটি নগরীতে পরিণত হয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যে নগরীর সৌন্দর্যহানির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট ও ক্যবল টিভির তারের জঞ্জাল। প্রতিদিনই নতুন নতুন সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারের জঞ্জালও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাথার উপর কুণ্ডলী পাকিয়ে ঝুলে থাকছে। অনেক সময় এসব তার বিচ্ছিন্ন হয়ে সড়কের উপর পড়ে থাকে। এমনকি বিদ্যুতের তারও যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকে, তা বোঝার উপায় থাকে না। এতে তার প্যাঁচিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। মাথার উপর ঝুলে থাকা তারের এ জঞ্জাল সরানো এবং মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ দেয়ার কথা বলা হলেও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাতে সাড়া দেয় না। উল্টো তার কেটে দিলে ধর্মঘটের হুমকি দেয়। মাঝে মাঝে লোকবল নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট তার কেটে দিয়ে গেলেও অপারেটররা কালবিলম্ব না করে তা আবার নতুন করে লাগিয়ে দেয়। এটি অনেকটা নদী দখল ও উচ্ছেদ এবং পুনরায় দখলের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন সাড়ম্বরে ঢাকঢোল পিটিয়ে নদী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে এবং কিছুদিন না যেতেই উচ্ছেদকৃত জায়গা আবার দখল হয়ে যায়, তেমনি তারের জঞ্জাল কাটা ও পুনরায় লাগিয়ে দেয়ার বিষয়টি একই রূপ লাভ করেছে। এই উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না।

তারের জঞ্জাল সরানোর ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয় চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বারবার ঘোষণা দিয়েও সমস্যার সুরাহা করতে পারছেন না। অথচ দুই মেয়র নগরীর উন্নয়ন, সেবা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি নিয়ে বড় বড় কথা বললেও কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে লোকদেখানো উদ্যোগ নিয়ে তাদের সাফল্য দেখাতে চাচ্ছেন। স্থায়ী কোনো সমাধানের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা ধরে রাখতে পারছে না। নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানের সময় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। একইভাবে তারের জঞ্জাল সরানোর সময়ও অর্থ ব্যয় হয়। এ অর্থ জনগণের ট্যাক্সের। সমস্যার সমাধান না হওয়ায়, জনগণের অর্থের অপচয় হচ্ছে। এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, রাজধানীসহ সারাদেশে বিস্তৃত তারের জঞ্জাল সরাতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে। উন্নত বিশ্বের কোনো নগরীতেই মাথার উপর তারের জঞ্জাল ঝুলতে দেখা যায় না। আমাদেরকেও মাথার উপরে ঝুলন্ত তার সরিয়ে মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তার কাটা এবং অল্প সময় পরে আবার তা লাগিয়ে দেয়ার এমন খেলা বন্ধ করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, এর সাথে সিটি করপোরেশনের একশ্রেণীর লোকজনের সাথে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসের কারণে স্থায়ী সমাধান মিলছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর স্থায়ী সমাধান করতে হলে বিচ্ছিন্নভাবে তার না কেটে নির্দিষ্ট এলাকা বেছে নিয়ে মাটির নিচ দিয়ে তার প্রতিস্থাপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এভাবে ধাপে ধাপে এলাকাভিত্তিক ঝুলন্ত তার মাটির অভ্যন্তরে নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন