পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে অচলাবস্থা নিরসনে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে চ্যান্সেলরের কাছে খোলা চিঠি লিখেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
গতকাল বুধবার শিক্ষক নেটওয়ার্কের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে থাকি। পেশাগত কর্তব্যবোধে আমাদের সাধ্যানুযায়ী বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চলমান ঘটনাগুলোর দিকে আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি। আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি নিয়ে মধ্য জানুয়ারি থেকে চলমান অহিংস আন্দোলনকে সরকারি ছাত্র সংগঠন ও পুলিশ বাহিনীর সহিংসতা দিয়ে দমনে ব্যর্থ হয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একেরপর এক নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ইতিহাসে এক কদর্য অধ্যায়ে পরিণত হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে শুরু হওয়া একটি ন্যায্য আন্দোলন এসব ব্যবস্থার কারণে নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের মরণপণ একদফা দাবির আন্দোলনে পরিণতে হয়েছে যে, ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে। নিজের কৃতকর্মে ন্যূনতম শিক্ষক সুলভ মনোভাবের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হওয়া এই ভিসি শাবিপ্রবি’র দায়িত্বে থাকার সমস্ত নৈতিক ও আইনি অধিকার হারিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে এবং তার আশু পদত্যাগ দাবি করছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, শিক্ষক নেটওয়ার্ক বিস্ময় ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও খাবারের জোগান নানা কদর্য কৌশলে বন্ধ করে প্রায় ১৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনশনরত ২৮ শিক্ষার্থীর জীবনকে এই মহামারির সময়ে এক প্রাণঘাতী পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শাবিপ্রবি’র ৫ সাবেক শিক্ষার্থীকে আটক করে এখন আইনি হয়রানি ও নিপীড়নের আওতায় আনা হয়েছে, যা বাংলাদেশের সংবিধানে নিশ্চিত মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং একটি অতীব কদর্য ও সহিংস রাজনৈতিক কৌশল।
একইভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তাদের স্বজনদের হুমকি ও হয়রানির মতো কদর্য কৌশলও শিক্ষার্থীদের ওপর প্রয়োগ হতে দেখছি। আমরা সরকারের এই সমস্ত তৎপরতাকে ধিক্কার জানাই এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং এ যাবত দায়ের করা মামলাগুলোর প্রত্যাহার দাবি করি। একইসঙ্গে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের ওপর মানসিক নিপীড়নের কূটকৌশল অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাই।
শিক্ষরা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক ক্রমাগত সন্দেহ, অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা এমনকি নিখাদ বিদ্বেষের রূপ নিচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বিগত ৩ দশকে ক্ষমতাসীনদের অনুগত শিক্ষক পরিচালিত প্রশাসন যারা শিক্ষার্থীদের মূলত একটা ঝুঁকিপূর্ণ সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে দেখেন, তাদের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনকে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেন। এ ধরনের প্রশাসনগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে চান, একদিকে নিজের সন্দেহবাতিকতা আর গোয়েন্দা তথ্যনির্ভর বোধবুদ্ধি দিয়ে, অন্যদিকে সরকারি ছাত্র-বাহিনী আর পুলিশ বাহিনীর নির্মম-নিপীড়ন দিয়ে, উপরন্তু শত শত শিক্ষার্থীদের ওপর মামলার দীর্ঘমেয়াদি আইনি হয়রানি দিয়ে।
চিঠিতে বলা হয়, শাবিপ্রবি’র প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার জানান দিচ্ছেন যে, এই সনাতন কায়দায় শিক্ষাঙ্গন পরিচালনার দিন শেষ হয়েছে। আজকের শিক্ষার্থী প্রজন্ম এসব রাজনৈতিক কূটকৌশল মোকাবিলা করার মেধা, প্রজ্ঞা আর সাহস রাখেন। প্রশাসনগুলোকে এই তারুণ্যকে ধারণ করার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। শাবিপ্রবি’র ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে, বাদ বাকিদের শাবিপ্রবি’র কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাবিপ্রবি’র ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে। ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে, আন্দোলনে অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সাবেক শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং আন্দোলনকারীদের পরিবারের ওপর পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে চিঠিতে সই করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর কামরুল হাসান, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর নাসির আহমেদ, চবির সহকারী অধ্যাপক জিএইচ হাবীব, সুবর্ণা মজুমদার, মোশরেকা অদিতি হক, মাইদুল ইসলাম, জাবির পারভীন জলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী মামুন হায়দার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) আবুল ফজল, ঢাবির প্রফেসর তানজীমউদ্দিন খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফুজ্জামান রাজীব, জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিম আরাফাত মানবসহ শতাধিক শিক্ষক।
এদিকে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ‘স্বৈরাচারী ভিসি’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই কর্মসূচি শুরু হয়। ‘শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা’ ব্যানারে বামপন্থি আটটি ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন। রাত পর্যন্ত কর্মসূচিটি চলার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হন আয়োজক কমিটি। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অনিক রায়ের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বক্তব্য রেখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর তানজীমুদ্দিন খান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গবেষক ও লেখক মাহা মির্জা, আলোকচিত্রী শহিদুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ, ঢাবির এসোসিয়েট প্রফেসর জোবাইদা নাসরীণ কণা প্রমুখ। প্রফেসর আনু মুহাম্মদ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অবিলম্বে ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ১৬৩ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙেছেন। এটি আন্দোলনের কোনো ব্যর্থতা নয়। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্কটের বিষয়টি সামনে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যে নেই, ভিসিরা কীভাবে নিয়োগ পান, তা সামনে এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।