Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিস্ময়কর জিব্রা মাছে আলো দেখছেন গবেষকরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:৪৭ পিএম

জার্মানিতে গবেষকরা জিব্রা মাছের মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের ক্ষত সারিয়ে নেয়ার ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হয়েছেন৷ তারা এই গবেষণার ফল মানবশরীরে ব্যবহারের উপায় খুঁজছেন৷

জিব্রা ফিশ নামে পরিচিত এই মাছগুলোর নিজেদের সারিয়ে নেয়ার অনন্য ক্ষমতা আছে৷ জার্মানির মিউনিখের হেলমহলৎস সেন্টারের একটি পরীক্ষাগারে এখন এদের বাস৷ সেখানকার গবেষক জোভিকা নিনকোভিচ বলেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে অনেক মাছ সাধারণ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে রাখতে পারি৷ পানির গুণাগুণ ও খাবারের পরিমাণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করি৷ এতে টেকসই ফল পাওয়া যায়৷ তারওপর প্রতিটি জোড়া আমাদের একশতের বেশি ডিম দেয় এবং এতে প্রজননও খুব ভালো হচ্ছে৷’’

প্রাণীরা মস্তিষ্কের ক্ষত কেমন করে সারায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন এই অনুজীব বিজ্ঞানী৷ গবেষণায় যেসব প্রাণীদের তিনি ব্যবহার করেন তাদের প্রথমে চেতনানাশক দেন তিনি৷ এরপর এদের মস্তিষ্কে খানিকটা ক্ষত তৈরি করেন এবং দেখেন কেমন করে তারা সেরে ওঠে৷

জোভিকার ভাষায়, ‘‘ক্ষত তৈরি হওয়া মানে মস্তিষ্কে কোষের মৃত্যু৷ স্ট্রোক বা ট্রমার কারণে এমনটি হতে পারে৷ আমাদের লক্ষ্য, এই কোষগুলোকে প্রতিস্থাপন করা৷ মাছ তা নিজে নিজে করে৷ ক্ষতিগ্রস্ত নিউরনগুলো মরে যায়৷ কিন্তু মাছের স্টেম কোষ এই নিউরনগুলোকে পুরোপরি প্রতিস্থাপন করে৷ নতুন কোষ তৈরি করে, যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে সারিয়ে তোলে৷’’

বিভক্ত না হয়েই স্টেম কোষ সরাসরি স্নায়ু কোষে রূপান্তরিত হয়৷ মানবশরীরেও এই গবেষণার ফল কখনো কাজে লাগানো যাবে বলে মনে করেন গবেষকরা৷ জিব্রা মাছের হৃদযন্ত্রেরও নিজে নিজে সেরে ওঠার ক্ষমতা আছে৷ তবে এটা কাজ করে ভিন্নভাবে৷ উল্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্সের অধ্যাপক গিলবার্ট ভাইডিঙ্গার এই পদ্ধতি ব্যাখ্যার একটি অনুজৈবিক প্রক্রিয়া বের করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘জিব্রা মাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর ক্ষতিগ্রস্ত সব কোষই এরা প্রতিস্থাপন করতে পারে৷ সাধারণত মানুষ কিংবা অন্য প্রাণীদের পূর্ণাঙ্গ টিস্যুর স্টেম কোষ নতুন কোষ তৈরি করে৷ কিন্তু জিব্রা মাছের ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর পূর্ণাঙ্গ কোষগুলোই ভাগ হয়ে নতুন কোষ তৈরি করে৷ সাধারণত এমন কোষগুলো অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে বিভক্ত হয় না৷’’

ভাইডিঙ্গার ও তার দল আরো দেখলেন যে, সিগনাল প্রোটিনগুলো ক্ষতের সীমানায় পেশীকোষগুলোকে অধিক হারে ভাগ করতে কাজ করছে৷ তাই নির্দিষ্ট হারে কোষের পূণর্জন্ম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন তারা৷ কিন্তু গবেষণালব্ধ এই জ্ঞান কি মানব শরীরেও ব্যবহার করা সম্ভব?

‘‘মাছ ও মানুষ উভয়ই একই গোষ্ঠীর, অর্থাৎ মেরুদণ্ডী প্রাণী৷ তাই আমাদের শারীরিক কাঠামোয় অনেক সাদৃশ্য রয়েছে৷ আমাদের কোষগুলোও প্রায় এক ধরনের৷ তাই জিব্রা মাছ ও মানুষের হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলোও একই ধরনের কোষে তৈরি৷ মানবশরীর ও মাছের আশি ভাগ জিন ও কোষে মিল আিচে৷ এখন পর্যন্ত আমরা জানি যে, হৃৎপিণ্ডের কোষ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মাচের জিনগুলো মানবশরীরেও আছে৷ পার্থক্য হল, ক্ষত তৈরি হলে মাছের কোষগুলো প্রতিস্থাপনে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের কোষগুলো নীরব থাকে,’’ বলেন তিনি৷ প্রায় ২০ বছরের গবেষণায় এই বিস্ময়কর ছোট মাছগুলো এখন আলোর পথ দেখাচ্ছে৷ তবে এদের সব গল্প আজও অজানা৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ