চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ব্যক্তি জীবনে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রশিক্ষণ একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মোক্ষম অস্ত্র যা মানবসম্পদ উন্নয়নে এক বিশেষ এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। ছোট বড় সকল প্রতিষ্ঠানেই প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত শিক্ষার পাশাপাশি সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ব্যক্তিকে বিচক্ষণ ও দক্ষ রূপে গড়ে তোলে এবং ভালো কারিগর তৈরিতে যথেষ্ট সহায়ক প্রমাণিত হতে পারে।
প্রশিক্ষণ যেকোনো ক্ষেত্রে হতে পারে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ যেমন হতে পারে সেটা ইসলামি কিংবা অনৈসলামিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অথবা পেশাগত দক্ষতা, কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। তদ্রুপ মুসলিম জনগোষ্ঠীও যদি ইসলামে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বুঝতো তাহলে দাওয়াতি কাজে সহায়ক হতো। প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন, তিনিই সে সত্তা, যিনি উম্মিদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, যে তাদেরকে তার আয়াত শোনান, তাদের জীবন পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা স্পষ্ট গোমরাহিতে পড়ে ছিল। (সূরা জুমু’আ : আয়াত ০২)।
পবিত্র কোরআনের অন্যত্রে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, যেমন তোমরা এভাবে সফলতা লাভ করেছ, আমি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শোনান, তোমাদের জীবনকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলেন, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন এবং তোমাদের ওইসব কথা শোনান, যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৫১)।
অতএব মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই রাসূল (সা.) আমাদেরকে দ্বীনের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এই মর্মে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসুল (সা.) মসজিদে নববীতে দু’টি মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, অতঃপর বললেন, তারা উভয় মজলিসই কল্যাণের মধ্যে আছে, তবে একটি অপরটির চেয়ে অধিক ভালো। একটি মজলিস আল্লাহকে ডাকছে এবং তার কাছে প্রাপ্তির আশা করছে, আল্লাহ চাইলে তাদেরকে দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন। অপর মজলিস ফিকহ ও ইলম শিক্ষা লাভ করছে এবং অশিক্ষিতদেরকে তা শিক্ষা দিচ্ছে। আর এরাই উত্তম মজলিস। আর আমিতো শিক্ষকরূপেই প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর তিনি তাদের মাঝে বসে পড়লেন। (সুনানে দারেমী)।
উক্ত হাদিস থেকে এটা প্রতিয়মান হয় যে, সর্বত্তম মজলিস হচ্ছে যেখানে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এবং রাসূল (সা.) ও সেই মজলিসই বেশি পছন্দ করতেন। অতএব লোকদের কল্যাণে উত্তম হচ্ছে দ্বীনি বিষয়াদি তাদেরকে শিক্ষা দেয়া, এর মাহতাব মহান আল্লাহর কাছেও অত্যাধিক, যেমন হযরত আবু উমামা আল বাহেলী (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা নবী (সা.) এর নিকট দুই এমন ব্যক্তির ব্যপারে আলোচনা করা হলোল, যাদের একজন ছিলেন আবেদ অন্যজন ছিলেন আলেম।
অত:পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের একজন সাধারণ মুসলমানের তুলনায় আমি যে মর্যাদার অধিকারী, উক্ত আলেম ব্যক্তিও ওই আবেদের তুলনায় সে মর্যাদার অধিকারী। অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতাগণ, আসমান জমীনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিপীলিকাও মাছ পর্যন্ত সে ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে লোকদের কল্যাণে ইলম শিক্ষা দেয়। (তিরমিযী)। সৃষ্টি জগতের দোয়া পাওয়ার উত্তম মাধ্যম হলো অন্যকে দ্বীনি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া। এই উত্তম কাজটি আমরা জীবনের বাকি অর্ধে করবো ইন শা আল্লাহ। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।