পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
একদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি, অন্যদিকে ভর্তুকি সামাল দিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। এলক্ষ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাস বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করে তা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা দেওয়া শুরু করেছে। বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, এরমধ্যেই বিতরণ সংস্থা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কোম্পানিটি দেশের নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং চাঁদপুর জেলায় গ্যাস বিতরণ করে থাকে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড তাদের প্রস্তাবে এক চুলা ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা এবং দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা নির্ধারণ করার কথা বলেছে। এছাড়া আবাসিক পর্যায়ে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান মূল্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে। সিএনজি প্রতি ঘনমিটার ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬ টাকা ৪ পয়সা, হোটেল রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ টাকা ৯৭ পয়সা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৯ পয়সা এবং চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। আরও প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় থাকা বর্তমানে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৬৬ পয়সা।
এছাড়া প্রতি ঘনমিটার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি খরচ ৩৬ টাকা ৬৯ পয়সা। কিন্তু মুসক, অগ্রিম আয়কর, ফিন্যান্সিং চার্জ, ব্যাংক চার্জ, কমিশন, রি-গ্যাসফিকেশন চার্জ, ভোক্তা পর্যায়ে উৎসে কর সব মিলিয়ে মোট খরচ ৫০ টাকা ৩৮ পয়সা। এই বাড়তি মূল্য বিতরণ কোম্পানির ওপরে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম না বাড়িয়ে বিকল্প উপায় দেখছে না কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ভর্তুকির চাপ কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। গ্যাস ও বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াতে এরমধ্যেই পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত সোমবার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। অন্যান্য কোম্পানিগুলোকেও দ্রæত প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সকল কোম্পানির প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা পড়বে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী, বাড়তি রয়েছে তরলীকৃত গ্যাসের দামও। যার চাপ পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বাপেক্স ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডের গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের গড় ক্রয়মূল্য ১ টাকা ২৬ পয়সা, কিন্তু শেভরনের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ২ টাকা ৮৯ টাকা দিয়ে, অন্য আরেক কোম্পানি তাল্লো থেকে দাম আরও বেশি ৩ টাকা ১০ পয়সা করে। অন্যদিকে এলএনজির ক্রয়মূল্য ৩৬ টাকা ৬৯ পয়সা। সকল চার্জ পরিশোধ শেষে এর মূল্য দাড়ায় ৫০ টাকা ৩৮ পয়সা।
এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ মোট বরাদ্দ রাখা হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং সারের জন্য চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বলছে এই তিন খাতে বরাদ্দ দরকার ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি কোনো ভাবে মেটানো সম্ভব নয় বলে সূত্রগুলো বলছে। জানা গেছে, জ্বালানি খাতে সরকার ভর্তুকি দেয় ৪ হাজার কোটি টাকা। এরইমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে। কিন্তু এলএনজি আমদানি করতে সরকারের এই মুহ‚র্তে প্রয়োজন ১৬০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে জ্বালানি খাতে সরকার যে বরাদ্দ দিচ্ছে তা দিয়ে কোনো ভাবেই ঘাটতি মেটানো সম্ভব না। সে কারণে গত নভেম্বরে ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। একদিনে আমদানি করা গ্যাসের দাম বাড়তি অন্যদিকে এ খাতে ভর্তুকি কম। এই দুই বিষয়কে সামনে রেখেই জ্বালানির দাম বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।